তর্ক চলছে রোহতকে। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্যপাট ধরে রাখতে প্রথম নিশানা ‘প্রাক্তন রাজার’ খাস তালুক। হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটে রোহতক জয়কেই পাখির চোখ করছে বিজেপি। আবার কংগ্রেসের আশা, মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরকে সিংহাসনচ্যুত করতে পরিবর্তনের ঢেউ উঠবে রোহতকের মাটি থেকে। রাজ্যের প্রধান আঞ্চলিক দল হয়ে ওঠার স্বপ্নে বুঁদ জননায়ক জনতা পার্টিও (জেজেপি) নোঙর ফেলতে চাইছে এই তল্লাটে। সব মিলিয়ে, জাঠ রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র রোহতকে ভোটের ফল আঁচ করা রাস্তার পাশে ধরম সিংহের দোকানের কড়াইয়ে সদ্য ছাড়া জিলিপির থেকেও জটিল।
রোহতক লোকসভার অন্তর্গত গরহি সাম্পলা কিলোয়ি আসনে কংগ্রেস প্রার্থী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা। ২০০৫ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। রোহতক থেকে তিন বারের সাংসদ। একই আসনে তিন বার বিজয়ী পুত্র দীপেন্দ্র সিংহ হুডাও। ডাকসাইটে জাঠ নেতা তথা প্রাক্তন উপপ্রধানমন্ত্রী দেবী লালকে হারিয়ে রাজনীতির ময়দানে উঠে আসা ভূপেন্দ্রের এ বার অগ্নিপরীক্ষা। লড়াই খট্টরকে গদিচ্যুত করার। চ্যালেঞ্জ, অন্য গোষ্ঠীকে না-চটিয়ে জাঠ-জাত্যভিমানকে জাগিয়ে তোলারও। রোহতকে যে কাজে সফল হলে, রাজ্যে জাঠ ভোটের মোটা ভাগ পাওয়ার আশা করছে কংগ্রেস।
এই চেষ্টায় বাধা দিতেই রোহতকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে বিজেপি। তারা জানে, পানিপথ, কারনাল, কুরুক্ষেত্র, যমুনানগর, অম্বালা, পাঁচকুলা হয়ে জি টি রোড বরাবর চণ্ডীগড় পর্যন্ত তারা এগিয়ে, পিছিয়ে রোহতক, ঝজ্জর, সোনিপথ, জিন্দ, হিসারের মতো জাঠ অধ্যুষিত এলাকায়। তাই হরিয়ানায় ভোট প্রচার রোহতক থেকেই শুরু করেছেন মোদী। দেড় বছরে এসেছেন তিন বার। লোকসভা ভোটের আগে ঘাঁটি গেড়ে থেকেছেন অমিত শাহ। এলাকায় উন্নয়নের বান ডাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নেতারা। উঠছে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরার স্বামী রবার্টের বিরুদ্ধে জমি-কেলেঙ্কারির অভিযোগ। সেই সূত্রে ভূপেন্দ্রকে জেলে যেতে তৈরি থাকার হুমকি পর্যন্ত জনসভায় দিয়ে রেখেছেন খট্টর।
হরি নিবাস, রবি টক্করের মতো বিজেপি সমর্থকরা বলছেন, মোদীর ব্যক্তিত্ব, দেশভক্তি আর হিন্দুত্বের মিশেলে জাঠেদের মন গলছে বলেই গত লোকসভা ভোটে সোনিপথে হেরেছেন ভূপেন্দ্র। রোহতকে ভূপতিত দীপেন্দ্রও। আর ‘প্রাক্তন রাজার’ পতন ঘটতেই ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে ১০টির মধ্যে ১০টি আসনই গিয়েছে বিজেপির ঝুলিতে। ফলে সেই চেষ্টা অব্যাহত বিধানসভার প্রচারেও। এ বার বাড়তি অস্ত্র ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ আর রাম মন্দির তৈরির সম্ভাবনা।
২০১৪ সালের মোদী-ঝড়ে প্রথম বার হরিয়ানার মসনদ দখল করে বিজেপি। পকেটে ৩৩% ভোট আর ৪৭টি আসন। ২০০৯ সালের থেকে ৪৩টি বেশি। প্রায় চার দশকের মধ্যে কুর্সিতে প্রথম বার কোনও অ-জাঠ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু মোদী-শাহরা জানেন, হরিয়ানার জনসংখ্যায় যে গোষ্ঠীর প্রাধান্য, সেই জাঠেদের বড় অংশের মন পাওয়া এখনও সম্ভব হয়নি। বরং রাজ্যের সরকারি চাকরিতে জাঠেদের প্রস্তাবিত সংরক্ষণ আদালতে খারিজ হওয়ার পরে তাঁদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলি চালানোর ক্ষত এখনও দগদগে। রোহতক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কলানৌরের দাওয়ায় বসে ক্ষুব্ধ ফুল কুমার, সতীশ কাটারিয়া, বলবন্ত সিংহ, সত্যবান, রাম কুমারদের অভিযোগ, “হরিয়ানায় ৩৬ সম্প্রদায়ের মানুষ আছেন। জাঠেরা সংখ্যায় সব থেকে বেশি। কিন্তু ক্ষমতা দখলের জন্য বাকি ৩৫ সম্প্রদায়কে জাঠেদের বিরুদ্ধে উস্কেছে বিজেপি। প্রশাসন থেকে শুরু করে সর্বত্র বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে জাঠেদের।” মূলত এই জাঠ-রোষে ভর করে কংগ্রেস, জেজেপি-র দাবি, ৯০ আসনের বিধানসভায় ৩০ পেরোবে না বিজেপি। আর তাতে প্রলেপ দেওয়ার নিশ্চিন্তিতে মোদীর দল মশগুল কুর্সি ধরে রাখার স্বপ্নে। ক্ষমতার চূড়ায় পৌঁছতে দু’পক্ষেরই বেস ক্যাম্প তাই রোহতক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy