হিমাচল প্রদেশে মৃত্যু হয়েছে প্রচুর পাখির। ছবি: সংগৃহীত।
করোনা-আবহে এ বার পাখি মৃত্যুও ভয়ানক আকার নিয়েছে কয়েকটি রাজ্যে। হিমাচল প্রদেশের পং লেক চত্বরে ইতিমধ্যেই ১৯০০টিরও বেশি পরিযায়ী পাখির মৃত্যু হয়েছে। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশেও বিপুল পাখির দেহ মিলেছে। যার মধ্যে অধিকাংশই কাক। অন্য দিকে কেরলে প্রচুর হাঁসের মৃত্যুতে বিপর্যয় ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। আতঙ্ক ছড়িয়েছে গুজরাতের জুনাগড়েও।
হিমাচল প্রদেশের পং লেক চত্বরে বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী পাখি মৃত্যুর পিছনে রয়েছে এভিয়ান ফ্লু এইচ৫এল১ ভাইরাস। মৃত পাখিদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠই বার-হেডেড গিজ়। ইতিমধ্যেই সংখ্যাটা ১৯০০ পেরিয়েছে। আশঙ্কা, গণনা শেষ হলে মৃত পাখির সংখ্যা আরও বাড়বে।
ইতিমধ্যেই মৃত পাঁচটি বার-হেডেড গিজ়ের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়েছে ভোপালের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হাই সিকিয়োরিটি অ্যানিম্যাল ডিজ়িজ়ে (নিশাদ)। রিপোর্ট দেখা গিয়েছে, এভিয়ান ফ্লু এইচ৫এল১ ভাইরাসের জেরেই প্রতিটি পাখির মৃত্যু হয়েছে। জালন্ধরের নর্দার্ন রিজিয়োনাল ডিজ়িজ় ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিও মৃত পাখিদের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সেগুলি এভিয়ান ফ্লু আক্রান্ত। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সংক্রমণ রুখতে ওই জলাশয়ের ১ কিলোমিটার পরিধি জুড়ে ‘রেড জ়োন’ ঘোষণা করেছেন কাংড়ার জেলাশাসক রাকেশ কুমার প্রজাপতি। পরের ৯ কিলোমিটারকে পর্যবেক্ষণ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আপাতত সেখানে পর্যটকদের প্রবেশও স্থগিত রাখা রাখা হচ্ছে। কাংড়ায় পং লেকের নিকটবর্তী গোপালপুর চিড়িয়াখানাতেও ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। পশুপালন বিভাগের ডিরেক্টর আজমের ডোগরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। কাংড়া জেলা প্রশাসন ডেহরা, জাওয়ালি, ফতেপুর এবং ইন্দোরা অঞ্চলে পোলট্রি সামগ্রী (মাংস, ডিম), মাছ ও পাখির মাংস কেনাকাটা, বিক্রি এবং রফতানির উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে খবর, শুধু পরিযায়ী পাখিই নয়, বহু কাকেরও মৃত্যু হয়েছে গত কয়েক দিনে। প্রতি বছর শীতের মরসুমে মধ্য এশিয়া, রাশিয়া, মঙ্গোলিয়া থেকে বার-হেডেড গিজ় ভারতে আসে। এ ছাড়াও আট-ন’টি প্রজাতির পাখিও ভিড় করে পং লেক চত্বরে।
পং লেক অভয়ারণ্যের কর্মীরা জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের সোমবার ফতেপুরে কয়েকটি বার-হেডেড গিজ়ের দেহ মিলেছিল। তার পর থেকে ফতেপুর ছাড়াও নিয়মিত বিভিন্ন পরিযায়ী পাখির দেহ মিলেছে মাজহার, বাঠারি, সিহল, জাগনলি, চাট্টা, ধামেটা অঞ্চলে।
সেন্টার ফর ডিজ়িজ় প্রিভেনশন জানিয়েছে, ঘাতক এভিয়ান ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস গোটা বিশ্বেই জলজ পাখিদের মধ্যে দেখা যায়। তবে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে হাঁস, মুরগি, টার্কি ও অন্যান্য পশুপাখিও। মূলত পাখিদের নাক-মুখ থেকেই এই সংক্রমণ ছড়ায়। তবে এই ভাইরাস মানব প্রজাতির মধ্যে সে ভাবে সংক্রমণ ছড়ায় না। সেন্টার ফর ডিজ়িজ় প্রিভেনশন অবশ্য জানিয়েছে, সংখ্যায় খুব কম হলেও মানবদেহেও এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। মানুষের চোখ, মুখের মাধ্যমে এই ভাইরাস প্রভাব ফেলে। এমনকি নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও শরীরে ভাইরাস ঢুকতে পারে। এর ফলে সামান্য থেকে গুরুতর শারীরিক সমস্যাও হতে পারে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এক জনের থেকে আর এক জনের দেহে এই ভাইরাস ছড়ায় না।
পাখির মড়কের জেরে পং লেকের আশপাশের মানুষদের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। হিমাচলের কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কেওয়াল সিংহ পাঠানিয়া গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে চিঠি লিখেছেন মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরকে। মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, অবিলম্বে ঘটনাস্থলে বিষেশজ্ঞ দল পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। তবে পং লেক ছাড়া রাজ্যের অন্য কোথাও থেকে পাখিমৃত্যুর খবর মেলেনি।
অন্য দিকে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার এইচ৫এন৮ স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছে কেরলের আলাপুঝা, কোট্টায়ামেও। সেখানে গত কয়েক দিনে ১২ হাজার হাঁসের মৃত্যু হয়েছে। এর জেরে রাজ্যে বিপর্যয় ঘোষণা করেছে কেরল সরকার। এই পরিস্থিতিতে ৫০ হাজার হাঁস ও মুরগি মেরে ফেলার ঘোষণা করেছে রাজ্য প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy