—প্রতীকী ছবি।
এই ‘রাজত্বে’ সবাই রাজা।
ঘন বসতিপূর্ণ একটা অঞ্চল। জনসংখ্যা হাজার তিনেক। টালির চাল বা টিনের ছাউনি দেওয়া একতলা বাড়িগুলি যেন গা-ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে। মাঝখান দিয়ে চলে গিয়েছে সরু রাস্তা। সেটাই গ্রামে ঢোকার একমাত্র পথ। রাস্তা এতটাই সরু যে, গাড়ি যাওয়া তো দূরের কথা, একটা সাইকেল ঘোরাতেও অসুবিধা হয়। গ্রামে ঢোকার মুখে রয়েছে একটি কংক্রিটের সেতু। সেতু পেরোলেই ওই সঙ্কীর্ণ রাস্তা। রাস্তা যেখানে শেষ হয়েছে, সেখান থেকে আবার শুরু হয়েছে ঘন জঙ্গল। যে জঙ্গলে এক বার ঢুকে গেলে কাউকে খুঁজে বার করা রীতিমতো কষ্টসাধ্য।
বিহারের শেখপুরা থেকে ৩৪ কিলোমিটার দূরে, ভৌগোলিক গত ভাবে এমনই অবস্থান পাঞ্চি গ্রামের।পুলিশের মতে, এই পরিপ্রেক্ষিতে বিহারের আর এক কুখ্যাত জায়গা জামতাড়ার তুলনায় অপরাধীদের কাছে অনেক বেশি নিরাপদ আশ্রয় পাঞ্চি গ্রাম। কারণ, ওই গ্রামে ঢুকতে গেলে যে কংক্রিটের সেতু পার হতে হয়, সেখানেই নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বহিরাগতদের। তাই কোনও ভাবে গ্রামে ঢুকতে পারলেও বেরিয়ে আসা আরও কঠিন। তদন্তকারীদের দাবি, এই অবস্থানের সুযোগ নিয়েই গ্রাম জুড়ে গড়ে উঠেছে সাইবার অপরাধের অন্ধকার সাম্রাজ্য। গুগলে ‘ফিশিং পেজ’ (নকল পেজ) খুলে দেশ জুড়ে কোটি কোটি টাকা লুট করছে বিহারের এই নতুন ‘জামতাড়া’। ওই নকল পেজ খুলে ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি পাইয়ে দেওয়ার নামে লক্ষাধিক টাকা প্রতারণার যে সব অভিযোগ ইতিমধ্যেই জমা পড়েছে বিভিন্ন রাজ্য-সহ পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত হাওড়ার একাধিক থানায়, তার উৎস এই পাঞ্চি গ্রাম।
কী ভাবে নতুন পদ্ধতিতে প্রতারণা চালাচ্ছে এই চক্রটি?
সম্প্রতি একটি বহুজাতিক ফাস্ট ফুড সরবরাহকারী সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি নিতে গিয়ে জগাছার এক বাসিন্দা প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন। সেই মামলার তদন্তে নেমে পাঞ্চি গ্রাম থেকে ছয় প্রতারককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর তাদের জেরা করে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে তাজ্জব বনে গিয়েছেন তদন্তকারীরা!
ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, পাঞ্চি গ্রামের যে সব বাসিন্দা এই অপরাধে জড়িত, তাদের অধিকাংশেরই বয়স ১৭ থেকে ২১-এর মধ্যে। পড়াশোনা সপ্তম, বড়জোর অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। চাকরি না থাকায় এই বেকার যুবকেরাই সাইবার অপরাধে দক্ষ পান্ডাদের হাত ধরে নেমে পড়েছে অপরাধের পাঠশালায়। পুলিশ সূত্রের খবর, ছ’জনের যে দলটিকে ধরা হয়েছে, সেই দলের নেতা ২৯ বছরের শিশুপাল কুমার। সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ। কম্পিউটারে সামান্য জ্ঞান নিয়ে ওই যুবকই হয়ে উঠেছিল গুগলে নকল পেজ খুলে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণার কারবারের মূল মাথা।
ধৃত শিশুপালকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্তকারীরা জেনেছেন, কোনও দেশের বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থার ফ্র্যাঞ্চাইজ়ি খোলার আবেদনপত্র নকল করে ইন্টারনেটে আর একটি পেজ তৈরি করত অভিযুক্তেরা।কেউ আবেদন করলে তাঁকে দিয়ে প্রথমে একটি ফর্ম পূরণ করিয়ে নেওয়া হত। এর পরে দোকান সাজানো, খাবার কেনার জন্য অগ্রিম-সহ নানা অজুহাত দেখিয়ে ধাপে ধাপে টাকা পাঠাতে বলা হত আবেদনকারীদের। তাঁদের মনে যাতে সন্দেহ না হয়, তাই ওই টাকা পাঠাতে বলা হত আরটিজিএস-এর মাধ্যমে। এ ভাবে কয়েক লক্ষ টাকা হাতে আসার পরে প্রতারকেরা ওই পেজটি এবং তাতে থাকা ফোন নম্বর বন্ধ করে দিত। এর ফলে আবেদনকারীরা যেমন তাঁদের আবেদন সম্পর্কে জানতে পারতেন না, তেমনই টাকা হাতিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেত অপরাধী।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘পাঞ্চি গ্রামের এই অপরাধ-চক্রটি নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করত গ্রামের জঙ্গলটি। পুলিশের ঝামেলা এড়াতে ফোন নিয়ে সেখানে চলে যেত তারা। এর পরে কখনও কোনও সংস্থার সিইও, কখনও ম্যানেজার হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন গলায় ফোন করে লোকজনকে বোকা বানাত।’’ পুলিশ জানায়, ধৃতদের কাছ থেকে আটটি মোবাইল উদ্ধার হয়েছে। সেগুলি তদন্তের অগ্রগতিতে আরও সাহায্য করবে বলে আশাবাদী তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy