জেডিইউ নেতা নীতীশকুমার। ফাইল ছবি।
এনসিপির পরে কি জেডিইউ? মহারাষ্ট্রের মতো কি এ বারে বিহারেও বিজেপি বিরোধী দলে ভাঙন ধরতে চলেছে? দিন কয়েক হল এমন জল্পনা চলছে। আবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমারকেও দেখা গিয়েছে দফায় দফায় নিজের মন্ত্রী এবং বিধায়কদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠক করতে। এই আবহেই মঙ্গলবার নীতীশের বাড়িতে এসে হাজির হলেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ। যিনি নিজে জেডিইউ সাংসদ। তবে ইদানীং তাঁর সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতার জল্পনাও দানা বাঁধছে। বিশেষ করে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বাধনী অনুষ্ঠান জেডিইউয়ের তরফে বয়কট করার পরও হরিবংশ সেখানে হাজির থাকায় জল্পনা আরও দৃঢ় হয়েছে। মঙ্গলবার সেই হরিবংশের সঙ্গেই নীতীশের রুদ্ধদ্বার বৈঠক ঘিরে তাই প্রশ্ন উঠেছে, বৈঠকের আড়ালে কি আসলে বিজেপির বার্তাবাহকের কাজ করলেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান?
এই জল্পনার কারণ যদিও নীতীশ নিজেই। এর আগে বহুবার শিবির বদলাতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। নিজের সুবিধা মতো কখনও তিনি বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ-তে ঢুকেছেন। কখনও তাদের সঙ্গ ছেড়েছেন। শেষবার যখন তিনি শিবির বদলে বিজেপি থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং বিহারে আরজেডির হাত ধরে সরকার গড়েছিলেন, তখন কিন্তু হরিবংশ রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেননি। রাজনীতির নানা মহলে সেই সময় গুঞ্জন ছিল, নীতীশের কথাতেই ওই পদটি ছাড়েননি হরিবংশ। পরে জেডিইউয়ে থেকেও জেডিইউয়ের সঙ্গে তাঁর যে দূরত্ব, তা-ও লোক দেখানো বলে মন্তব্য করেছিলেন অনেকে। তাঁরা বলেছিলেন, আবার এনডিএ-তে ফেরার পথ খোলা রাখতেই ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন নীতীশ। তবে এ কথাও ঠিক, ‘লোক দেখানো’ দূরত্ব হোক বা না হোক নীতীশ এনডিএ ছাড়ার পর গত প্রায় এক বছরে পটনায় এলেও নীতীশের সঙ্গে দেখা করেননি হরিবংশ। কিন্তু এ বার করলেন। স্বাভাবিক ভাবেই তাই এই সাক্ষাৎ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে সাক্ষাতের সময় আর বিহারে রাজনৈতিক ভাঙন নিয়ে জল্পনার সময় মিলে যাওয়াতেই উঠছে প্রশ্ন।
গত কয়েক দিন ধরেই বিহারের শাসকজোটে ভাঙন ধরতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন বিহারের বিজেপি নেতারা। সেই জল্পনার মধ্যেই বুধবার বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) নেতা নীতীশ বৈঠক করেছেন রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশের সঙ্গে। তবে রাজনীতির কারবারিরা এ কথাও বলছেন, নীতীশই যেখানে পটনায় বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠক ডেকেছেন, সেখানে তিনিই আবার ভাঙন রুখতে বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করবেন? এটা কি মেনে নেওয়া যায়?
একসময় অবশ্য নীতীশের বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলেন এই হরিবংশ। দীর্ঘ অদেখার পর বুধবার সেই হরিবংশের সঙ্গে নীতীশ বৈঠক চলে দীর্ঘ এক থেকে দেড় ঘণ্টা। ফলে সেই বৈঠক নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক বলেই মত বিহারের রাজনৈতিক মহলের একাংশের। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি হরিবংশের মাধ্যমে বিজেপির তরফে কোনও বার্তা এল নীতীশের কাছে? যদিও নীতীশের দলের নেতারা বলছেন জেডিইউ প্রধান হিসাবে নীতীশ দলের সাংসদের সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। অন্য দিকে হরিবংশের দফতর এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু না জানালেও সূত্রের খবর, তারা জানিয়েছে, এই বৈঠক ছিল নিতান্তই সৌজন্যমূলক।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই নীতীশ-ঘনিষ্ঠ জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মন্ত্রী বিজয় চৌধুরী অভিযোগ করেছিলেন, মহারাষ্ট্রের কায়দায় বিহারেও অন্য দল ভেঙে সরকার গড়ার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। বিহার বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার বিজয়ের অভিযোগ, ইতিমধ্যেই বিজেপির ‘এজেন্টরা’ কয়েক জন বিধায়ককে কেনার চেষ্টা চালিয়েছেন বলে তাঁদের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এসেছে। অন্য দিকে, বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদীও এই একই কথা বলেছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন ‘‘আড়াআড়ি ভেঙে যাবে নীতীশের দল।’’
গত বছর জুনেই উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনায় ভাঙন ধরিয়ে মহারাষ্ট্রের ‘মহাবিকাশ অঘাড়ী’ জোটের সরকারের পতন ঘটিয়েছিল বিজেপি। এর পর গত রবিবার এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের দলেও ভাঙন ধরিয়েছে শিন্ডেসেনা-বিজেপি জোট। ঘটনাচক্রে, বিহারেও ওই একই ধরনের জোট সরকার চলছে। নীতীশ এবং আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের ছেলে তেজস্বী যাদব মিলে গড়েছিলেন সেই জোট সরকার। সম্প্রতি পটনায় যে বিজেপি বিরোধী জোটের বৈঠক হয়, সেখানেও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন দু’জনে। এই পরিস্থিতিতে গত ৩ জুলাই জমির বিনিময়ে রেলে চাকরির কেলেঙ্কারিতে বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিবিআই। তার পরেই শোনা যায় নীতীশের দলে ভাঙন ধরতে চলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নীতীশ বৈঠকও করছিলেন তাঁর বিধায়ক এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে। তার পরেই প্রকাশ্যে এল হরিবংশের সঙ্গে নীতীশের বৈঠকের কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy