নিজের গ্রামে বিধায়ক মেহবুব আলম। ছবি: মেহবুবের ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি
তিনি চার বারের বিধায়ক। এ বারও বিহারের প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবধানে জিতেছেন মেহবুব আলম। অথচ পড়শি রাজ্যের সবচেয়ে সাদামাটা জীবনযাপন করেন সেই বাম প্রার্থীই। এখনও থাকেন পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া বলরামপুর কেন্দ্রের এক অজ পাঁড়াগাঁয়ের কাঁচা বাড়িতে। দুই ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে সরকারি স্কুলে। আর সেটাই তাঁর বার বার ভোটবিজয়ের ‘জিয়নকাঠি’ বলে মনে করেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা।
শ্রমিক, মজদুর, মেহনতি মানুষের কথা বলে বাম রাজনীতির আদর্শ। সেই আদর্শেই কি এমন সহজ-সরল দিনযাপন? সিপিআইএমএল (লিবারেশন)-এর নেতা হয়েও মেহবুবের বক্তব্য, মার্কস-লেনিনের আদর্শে নয়, বরং সাধারণ মানুষের জন্যই তাঁর এমন সাদাসিধে দিনলিপি। জয়ের জন্য ‘কমরেড’দের ধন্যবাদ দিয়ে মেহবুব বলেন, ‘‘আমি খুব সরল জীবনযাপন করি। এটা বামপন্থার জন্য নয়, বরং আদর্শের লড়াই। আমার বিধানসভা এলাকায় অনেক মানুষকে দু’বেলা খাবারের জোগাড় করতে বহু কষ্ট করতে হয়। সেখানে আমি বিত্ত-বৈভবে দিন কাটাব, এটা ভাবতেও পারি না।’’
কিন্তু বিধায়কের মাসিক বেতনের টাকা? বামপন্থী নেতাদের মতোই মেহবুবের উত্তর, ‘‘বিধায়ক হিসেবে বেতন ও ভাতা মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার টাকা পাই। তার প্রায় সবটাই যায় দলের তহবিলে।’’
নির্বাচন কমিশনে ৬৪ বছরের মেহবুব যে সম্পত্তির হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যাচ্ছে তাঁর কাছে রয়েছে নগদ ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়া রয়েছে কিছু জমি, যার মোট মূল্য ৯ লক্ষ টাকা। একটি স্করপিও গাড়ি। কিন্তু সেই গাড়িটিও একটি দুর্ঘটনার পর থেকে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।’’ কিন্তু হলফনামার এই ছবিটা আংশিক। শিবানন্দুপর গ্রামের বাড়িতে গেলে ধরা পড়ে প্রকৃত ছবিটা। সরু গলির পাশে বাড়ি, যে গলিতে একটা গাড়ি কোনও রকমে যেতে পারে। সেই সরু রাস্তার দু’পাশে অধিকাংশই কাঁচা বাড়ি। আর বিধায়ক মেহবুবের অ্যাজবেস্টসের চাল দেওয়া বাড়িতে ইটের গাঁথনি থাকলেও তাতে প্লাস্টার পড়েনি। মেঝে এখনও মাটির। ঘরের আসবাবও সাদামাটা। অতিথি অভ্যাগত গেলে ঘর থেকে উঠোনে নামে কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার। এই চিত্র কিন্তু নেই হলফনামায়।
আরও পড়ুন: সপ্তম বার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদে শপথ নীতীশের
হলফনামায় অবশ্য মেহবুবের বিরুদ্ধে ১০টি মামলার উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে আবার রয়েছে খুন, দাঙ্গা বাধানোর মতো গুরুতর অভিযোগও। কিন্তু আলমের দাবি, ‘‘ও সব সাজানো মামলা। আমরা মানুষের জমির জন্য লড়াই করেছি। কেউ আমাদের উপর অবিচার করলে সংবিধান আমাদের আত্মরক্ষার অধিকার দিয়েছে।’’ তাঁর যুক্তি, এই সব অভিযোগের ভিত্তি থাকলে মানুষ তাঁকে এত ভোটে জেতাতেন না।
আরও পড়ুন: কম আসন নিয়েও মুখ্যমন্ত্রী, নীতীশ কি বিজেপি-র চক্রব্যূহে অভিমন্যু
মেহবুব জিতেছেন ৫৩ হাজার ৭৮ ভোটে। ২০১৫ সালেও জিতেছিলেন। তার আগে আরও দু’বার। এ বার পেয়েছেন ১ লক্ষ ৩ হাজার ৭৪৬ ভোট। তাঁর প্রতিপক্ষ বিকাশশীল ইনসান পার্টির বরুণকুমার ঝা পেয়েছেন ৫০ হাজার ৬৬৮ ভোট। বিহারের আর কোনও প্রার্থী এত বেশি ভোটের ব্যবধানে জেতেননি। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা মেহবুবের এই জীবনধারা শুধু যে বাম রাজনীতিতে চর্চার কেন্দ্রে উঠে এসেছে তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। বাড়ির দাওয়ায় বসে ছোট ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাঁর সময় কাটানোর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে বিহারের ভোটের পর থেকেই।
বিহার বিধানসভার ভোটে এ বার বামেদের আশাতীত ফল। ২০১৫-র নির্বাচনে মাত্র ৩ থেকে আসন বেড়ে হয়েছে ১৬। জিতেছেন বছর তেত্রিশের জেএনইউ-এর ছাত্র সংসদের প্রাক্তন জিএস সন্দীপ সৌরভ। পালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষ জেডিইউ প্রার্থী বর্ধন যাদবের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়ে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হলেন তিনি। আবার অগিয়াঁও কেন্দ্র থেকেও ৬১ শতাংশ ভোট পেয়ে জিতেছেন বছর সাঁইত্রিশের মনোজ মঞ্জিল। দলীয় এই সাফল্য বড় হলেও কোনওভাবেই খাটো করা যাবে না মেহবুবের কৃতিত্ব বা জনপ্রিয়তা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy