প্রতীকী ছবি।
কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের জের শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদের অশ্বক্ষুরাকৃতি টেবিল পর্যন্ত গড়াল না ঠিকই। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে চিনের কাঁটা ধারালো হল বলেই মনে করা হচ্ছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনের সঙ্গে নতুন করে ক্ষত তৈরি হল দ্বিতীয় মোদী সরকারের। এ বারে কাশ্মীর নিয়ে। উহান বৈঠকের পর আগামী অক্টোবর মাসে ভারতে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং-এর দ্বিতীয় ঘরোয়া আলোচনা হতে চলেছে। তার আগে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার বিষয়টি নিয়ে চিন নতুন করে কূটনৈতিক বিরোধিতার তাস খেলতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
দীর্ঘ আটচল্লিশ বছর পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে আলোচনায় উঠে এসেছে জম্মু ও কাশ্মীর। পাকিস্তান এবং পরে চিনের অনুরোধে। এটা ঠিকই যে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সিলমোহর মারা কোনও ভারত-বিরোধী বিবৃতি দেয়নি পরিষদ। পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশের মধ্যে চারটি দেশই মোটের উপর ভারতের পাশে থেকেছে। কিন্তু সূত্রের বক্তব্য, বিষয়টি এখানেই মিটে যাচ্ছে না।
কূটনৈতিক সূত্রের মতে, রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি করানোর পিছনে পাকিস্তানের প্রতি চিনের সখ্যই একমাত্র কারণ নয়। এর পিছনে রয়েছে বেজিং-এর নিজস্ব স্বার্থ এবং
উদ্বেগও। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় কাশ্মীর নিয়ে মোদী সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে ঘোর অসন্তোষ প্রকাশ করে জানিয়েছিলেন, এর ফলে চিনের সার্বভৌমত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত কাল বৈঠকের আগে এবং পরে এবং বৈঠকের ভিতরে চিনের স্থায়ী প্রতিনিধিও একই কথার পুনরাবৃত্তি করেছেন। ইঙ্গিত স্পষ্ট।
আগামী মাসে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যখন কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার নিয়ে ইসলামাবাদ উত্তাল হবে, তাতে প্রবল ইন্ধন থাকবে বেজিং-এরও। সূত্রের মতে, চিন সতর্ক হয়ে গিয়েছিল সম্প্রতি সংসদীয় অধিবেশনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তৃতার সময়েই। যেখানে অমিত শাহ বলেছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীর বলতে গিলগিট, বালটিস্তান, পাক শাসিত কাশ্মীর এবং আকসাই চিনকেও বোঝায়।
আকসাই চিনে পিপলস লিবারেশন আর্মির উপস্থিতি নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন সে দিন। অথচ, এত দিন পর্যন্ত আকসাই চিনকে ভারত ‘বিতর্কিত ভূখণ্ড’ বলেছে। চিনের বক্তব্য, লাদাখকে কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে পরিণত করে বিভাজিত করার পর আকসাই চিন নিয়েও সক্রিয় হবে ভারত। পাশাপাশি ১৯৬২-র যুদ্ধের পরে চিনের হাতে পাকিস্তানের তুলে দেওয়া ৫১৮৩ বর্গ কিলোমিটার জমি নিয়েও এ বার টানাপড়েন তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা বেজিং-এর। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি সৈয়দ আকবরউদ্দিন উত্তাপ আরও বাড়িয়ে চিন এবং পাকিস্তানকে এক বন্ধনীতে রেখে আক্রমণ শানানোয়, বিষয়টি ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে টানটান করে তুলল বলে মনে করা হচ্ছে।
চিন তার সামরিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অন্য দেশকেও (বিশেষত রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী এবং অন্য অস্থায়ী সদস্য দেশগুলিকে) সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা শুরু করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে। গত কাল রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রাশিয়ার প্রতিনিধির
বক্তব্য ইতিমধ্যেই কপালে ভাঁজ ফেলেছে সাউথ ব্লকের কর্তাদের। কাশ্মীর সমস্যার সমাধান ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক বিষয়, এ কথা বলার পরেও যিনি যোগ করেছেন, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের সনদ এবং প্রস্তাবগুলিকেও মান্যতা দিতে হবে। অথচ ভারতের বরাবরের অবস্থান, কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে রাষ্ট্রপুঞ্জ-সহ কোনও তৃতীয় পক্ষের নাক গলানো বরদাস্ত করা হবে না। রাশিয়ার এ হেন মন্তব্যের পিছনে বেজিং-এর ইন্ধন রয়েছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে এখন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy