Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

‘আমার চার বছরের মেয়ে এখন কাশ্মীরে, গত ৪৮ ঘণ্টা ওর গলা শুনিনি’

রবিবার মধ্যরাত থেকে যখন ফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট সংযোগ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল, কাশ্মীরেই ছিলাম। মনে হচ্ছিল, বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রয়েছি।

থমথমে কাশ্মীর। ছবি: এএফপি। ইনসেটে শাহ ফয়জল।

থমথমে কাশ্মীর। ছবি: এএফপি। ইনসেটে শাহ ফয়জল।

শাহ ফয়জল (প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক)
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

আমার চার বছরের মেয়ে এখন কাশ্মীরে। গত ৪৮ ঘণ্টা ওর গলা শুনিনি। কেমন আছে, জানি না।

এই মানসিক অবস্থা শুধু আমার একার নয়, প্রত্যেক কাশ্মীরবাসীর।

রবিবার মধ্যরাত থেকে যখন ফোন, টেলিভিশন, ইন্টারনেট সংযোগ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেল, কাশ্মীরেই ছিলাম। মনে হচ্ছিল, বিচ্ছিন্ন দ্বীপে রয়েছি। এই দেশের নাগরিক হয়ে অন্য প্রান্তের খবর জানার অধিকার নেই। কার্ফু বা ১৪৪ ধারা। রাস্তায় সেনা। খাবারের দোকান, ওষুধের দোকান সব বন্ধ। মানুষ ঘর থেকে বেরোতে পারছেন না। ধরপাকড় চলছে। আমার দল জম্মু-কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্টের অনেককেই আটক করা হয়েছে। অথচ, ভারতীয় মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে দেখানো হচ্ছে, কাশ্মীরে নাকি সব স্বাভাবিক!

আমি পরশু দিল্লি এসেছি। পরিবারের সবাই বারণ করছিল। আমার পরিবার এখন কেমন রয়েছে জানি না। জানতাম, এমনই ঘটবে। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, কাশ্মীর থেকে বাইরে আসা জরুরি। যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন একটা শহরে বসে থাকলে ওখানকার কথা কেউ জানতে পারবেন না। তাই ইদে বাড়িও যাব না। ইদ পালনও করব না।

আমার বাড়িটা বিমানবন্দরের কাছেই। সেটুকু দূরত্ব পেরোতেই নাজেহাল হতে হয়েছে। বারবার চেক পোস্টে গাড়ি দাঁড় করানো হচ্ছিল। বিমানবন্দরে পৌঁছে দেখলাম, যাঁরা দেশের অন্য প্রান্ত থেকে কাশ্মীরের বাড়িতে ফিরছেন, তাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন। কী ভাবে ঘরে পৌঁছবেন, জানা নেই। কোনও গাড়িই চলছিল না। বাড়িতে জানিয়ে যে আগাম গাড়ি আনিয়ে রাখবেন, তার তো উপায় নেই। ফোনই বন্ধ। আজ শুনলাম, ট্যাক্সি চলছে।

আরও পড়ুন: জম্মুতে উঠল ১৪৪ ধারা, স্কুল খুলল সাম্বা-কাঠুয়ায়, বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ ‘শান্তির’ কাশ্মীরে

দেখে এসেছি, বাড়িতে রেশন ক্রমশ ফুরিয়ে আসছে। এখন ওরা কী খাচ্ছে, জানি না। যাঁদের বাড়িতে কেউ অসুস্থ, তাঁদের হাসপাতাল পর্যন্ত যাওয়ার উপায় নেই। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের নিয়ে ভয়ে ভয়ে রয়েছেন তাঁদের পরিবার। অনেকে ‘ডেলিভারি ডেট’-এর অনেক আগেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। কারণ, প্রসববেদনা যখন উঠবে, তখন হাসপাতালে ঠিকঠাক পৌঁছনো যাবে কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।

বিমানবন্দরে কয়েক জন তরুণের সঙ্গে কথা হল আমার। তাঁরা অত্যন্ত যন্ত্রণার সঙ্গে আমার কাছে জানতে চাইলেন— এ বার আমরা কী করব। তাঁদের বলেছি, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে সর্বোচ্চ আদালতে যাব। তবে কাশ্মীরিদের কাছে আমার অনুরোধ, আগে প্রাণ বাঁচান। তার পরে না-হয় একজোট হয়ে প্রতিবাদ করব।

(অনুলিখন: চৈতালি বিশ্বাস)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE