সংসদ ভবনে ঢুকছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এপি।
লোকসভার ভোটের কালি নখ থেকে পুরো ওঠেনি। অমিত শাহের হাতে ধরা একটি কাগজের গোছা। সংসদে ঢুকছেন। হাসিমুখে ঘুরে ঘুরে ছবিও তুলছেন। হাতের সেই কাগজও ক্যামেরা-বন্দি। তাতেই প্রথম আভাস মিলল, কাশ্মীর নিয়ে বড় ঘোষণা আসতে চলেছে।
অমিত শাহের সঙ্গে তখন শুধু সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। বাকি ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে। সকালে সেখানেই জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন মোদী। অধিবেশন শুরুর আধ ঘণ্টা আগেও সংসদে আসার ছাড়পত্র পাননি তাঁরা। পাছে খবর ফাঁস হয়ে যায়!
গোপনীয়তা!
নরেন্দ্র মোদী সরকারের সঙ্গে এই শব্দটি এখন সমার্থক হয়ে উঠতে বসেছে। বিজেপির একাধিক সাংসদই বলছেন, ‘‘শনি ও রবিবারের ছুটি বাতিল করে কেন সাংসদদের প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল, আজ টের পেলাম। আসলে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চাইছিলেন, যাতে আমরা দিল্লিতে থাকি। সাধারণত শুক্রবার হলে সাংসদরা নিজেদের নির্বাচনী কেন্দ্রে ফিরে যান, আর সোমবারে দিল্লি পৌঁছতে অনেকের দেরি হয়। আমাদের দিল্লিতে রেখে দেওয়া হল, যাতে সোমবার সকালেই সকলে হাজির থাকতে পারি।’’
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
এ দিন অমিত সংসদে আসার কিছুক্ষণ পর প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এলেন, তার পর প্রধানমন্ত্রী। বাকি মন্ত্রীরা একেবারে শেষ মুহূর্তে। তিন বছর আগে নভেম্বরের এক সন্ধ্যার কথা মনে পড়ছিল অনেকের। সেই দিন বিকেলে হঠাৎ মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছিল সাউথ ব্লকে, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে। মন্ত্রীদের মোবাইল ফোনও জমা নেওয়া হয়েছিল। তারপর যতক্ষণ না প্রধানমন্ত্রী দূরদর্শনের পর্দায় জাতির উদ্দেশে নোটবন্দির বক্তৃতা দেওয়া শেষ করেছেন, ততক্ষণ তাঁরা ঘর থেকে বেরোতে পারেননি।
আর্তি: কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদ বেঙ্গালুরুতে। সোমবার। ছবি: এএফপি।
এক মন্ত্রী আজ একগাল হেসে বললেন, ‘‘এ বারে অবশ্য কড়াকড়িটা অনেকটাই শিথিল ছিল। কিন্তু এমনটি যে হবে, সেটা সকাল সাড়ে ন’টার আগেও ঘুণাক্ষরে জানতে পারিনি। এগারোটা পর্যন্ত কাউকে বলা নিষেধ ছিল। বিলে ঠিক কী কী আছে, তার খুঁটিনাটি অবশ্য এখনও জানি না।’’ খোদ প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জম্মুর ‘বড়’ নেতা। গত কালও সাংসদদের কর্মশালায় শামিল হয়েছেন। কিন্তু এক ধাক্কায় ৩৭০ ধারা রদ করে দেওয়া হবে, সেটি টের পাননি। ভাবছিলেন, বড়জোর ৩৫-এ অনুচ্ছেদ সরানো হতে পারে। সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল এনে, দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের সমর্থন ছাড়াও যে অন্য পথে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তোলা যেতে পারে, সে ব্যাপারে কোনও ধারণা ছিল না। অথচ কয়েক দিন ধরে জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় বাহিনী বাড়ছিল, অমরনাথযাত্রী ও পর্যটকদের ফেরত পাঠানো হচ্ছিল, অজিত ডোভালরা ঘন ঘন বৈঠক করছিলেন, কাল রাত থেকে উপত্যকার নেতাদের গৃহবন্দিও করে রাখা হয়। কাশ্মীর নিয়ে ‘কিছু একটা হচ্ছে’— সবাই আঁচ করছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি বিদেশ থেকে গতকাল ফিরলেন আর আজ তাঁর নির্দেশিকায় কাশ্মীরকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেওয়া হবে— সেটি ভাবনার বাইরে থেকে গিয়েছিল শাসক দলের বড় অংশেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy