ক্রিস ডেভিস। —ফাইল চিত্র।
সরকার যা দেখাতে চেয়েছিলেন তা নয়, বরং নিজের মতো করে কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে চেয়েছিলেন। সে জন্য আমন্ত্রণ পাঠিয়েও শেষ মুহূর্তে তাঁর কাশ্মীরে ঢোকার অনুমতি বাতিল করা হয় বলে অভিযোগ তুললেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ইংল্যান্ডের লিবারাল ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি ক্রিস ডেভিস। কাশ্মীরে নরেন্দ্র মোদী সরকারের আদতে গণতান্ত্রিক নীতি-নিয়মের উপর আঘাত হানছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
ক্রিস ডেভিসের দাবি, সরকারি ঘেরাটোপে না থেকে নিজের মতো করে, স্বাধীন ভাবে কাশ্মীরের পরিস্থিতি দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কথা বলতে চেয়েছিলেন সেখানকার স্থানীয় মানুষের সঙ্গে। সেই কারণে তাঁকে কাশ্মীরে ঢোকার অনুমতি দেয়নি মোদী সরকার। এমনটাই অভিযোগ ক্রিস ডেভিসের।
উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের এমপি ক্রিস ডেভিস। তিনি জানিয়েছেন, গত ৭ অক্টোবর উইমেনস ইকনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল থিঙ্কট্যাঙ্ক (ওয়েস্ট) নামের একটি সংস্থার তরফে উপত্যকায় পা রাখার আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁকে। বলা হয়, ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে ২০ অক্টোবর কাশ্মীর যেতে হবে। তার পর দিন বাকিদের সঙ্গে একটি সাংবাদিক বৈঠকে অংশ নিতে হবে তাঁকে। আসা-যাওয়া, থাকা-খাওয়া সব খরচই জোগাবে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর নন অ্যালাইনড স্টাডিজ। আমন্ত্রণ পাওয়ার পর দিন, অর্থাৎ ৮ অক্টোবরই তিনি সেই তা গ্রহণ করেন বলে দাবি ক্রিসের। সেনাবাহিনীর সঙ্গে না গিয়ে স্বাধীন ভাবে কাশ্মীর ঘুরে দেখতে চান বলেও জানিয়ে দেন। তার পরেই ১০ অক্টোবর তাঁর আমন্ত্রণপত্র বাতিল করা হয়।
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরে ইউরোপীয় সাংসদরা, ‘গণতন্ত্রের অপমান’, কটাক্ষ বিরোধীদের
ঠিক কী কারণে তাঁর আমন্ত্রণপত্র বাতিল করা হল, সেটুকুও তাঁকে জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্রিস। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীন ভাবে কাশ্মীরের পরিস্থিতি ঘুরে দেখতে পারব, যার সঙ্গে ইচ্ছা কথা বলতে পারব, সেনাকর্মী বা পুলিশকর্মীদের না নিয়ে, স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারব ভেবেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলাম। তাতে মোদী সরকারের এত আপত্তি কেন? সাংবাদিক এবং দেশের রাজনীতিকদেরই বা কেন স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না? ভারত সরকার ঠিক কী লুকোতে চাইছে? ’’
গত সপ্তাহেই কাশ্মীরে মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে মার্কিন কংগ্রেসে। এমনকি কাশ্মীর নিয়ে নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকবে বলে জানিয়ে দেয় মালয়েশিয়াও। তার পরেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমপি-দের একটি দলকে কাশ্মীরে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফে যদিও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, এটি সরকারি সফর নয়। বিদেশি এমপি-রা প্রত্যেকেই বেসরকারি ভাবে এ দেশে এসেছেন। কিন্তু বিরোধী নেতাদের উপত্যকায় ঢুকতে না দিয়ে, বেছে বেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অতি-দক্ষিণপন্থী এবং শরণার্থী-বিরোধী বলে পরিচিত এমপিদের কাশ্মীরে আসার আমন্ত্রণ জানানোর পিছনে মোদী সরকারের ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের একাংশের। আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্নের মুখে পড়েই তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি ওই অংশের।
এক বিবৃতিতে ক্রিস ডেভিস বলেন, ‘‘মোদী সরকারের জনসংযোগ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে, সব কিছু ঠিক আছে এমন ভান করায় একেবারেই আগ্রহী নই আমি। তবে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক নীতি-নিয়মের গোড়ায় আঘাত হানা হচ্ছে। সে দিকে নজর দেওয়া উচিত গোটা বিশ্বের।’’
আরও পড়ুন: পাকিস্তানের থেকে মুক্তি চেয়ে তুমুল বিক্ষোভ অধিকৃত কাশ্মীরে, চলছে সেনা পীড়ন, বাইরে এল ভিডিয়ো
মোদী সরকারের তিনমাসব্যাপী বিধিনিষেধের জেরে ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বহু কাশ্মীরি বংশোদ্ভূত মানুষ তাঁদের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না এবং এর শেষ ভাল হবে না বলেও জানান ক্রিস ডেভিস। তাঁর দাবি, ‘‘কাশ্মীরের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে এমন হাজার হাজার মানুষের বাস উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডে। গত তিন মাস ধরে পরিবার ও স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তাঁরা। তাঁদের হয়েই সওয়াল করছি আমি। আমার মনে হয় এর শেষ ভাল হবে না। মানুষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়ে, তাঁদের উপর সেনাশাসন চাপিয়ে দিয়ে কখনও মন জেতা যায় না। হিংসাত্মক প্রত্যাঘাত আসবেই।’’
ক্রিসের অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও রকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবারই ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৩ জন এমপি উপত্যকায় পা রেখেছেন। তার আগে গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গেও দেখা করেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy