ছবি: সংগৃহীত।
মোদী সরকারের অতি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার লড়াইয়ে ফের দ্বিধাবিভক্ত কংগ্রেস। নবীন নেতারা পই পই করে জনতার মন বুঝে পা ফেলার কথা বলছেন। কিন্তু প্রবীণদের বক্তব্য, ‘‘না। দল চলবে আদর্শে।’’ তাতে সায় রয়েছে গাঁধী পরিবারেরও।
কাশ্মীর-প্রশ্ন নিয়ে নীতি ঠিক করতে কাল রাতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকে কংগ্রেস। সংসদে কংগ্রেস সরকারের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বৈঠকের ঠিক আগে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া কেন্দ্রের পদক্ষেপকে সমর্থন করে টুইট করেন। তার আগে দীপেন্দ্র হুডা,
মিলিন্দ দেওরা, জনার্দন দ্বিবেদী, অনিল শাস্ত্রী, রায়বরেলী সদর কেন্দ্রের বিধায়ক অদিতি সিংহের মতো নেতা-নেত্রীরাও সরকারের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছেন।
কংগ্রেস সূত্রের মতে, রাতের বৈঠকে নবীন নেতা জিতিন প্রসাদ বলেন, ‘‘দেশের পরিবেশ বিজেপির সঙ্গে। এখন বিরোধিতা করলে সেই পরিবেশের বিরুদ্ধে যাওয়া হবে।’’ প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম তখন তাঁর কথা কেটে বলেন, ‘‘কেরল বা তামিলনাড়ুতে এমন অবস্থা নয়।’’ জিতিনের দাবি, ‘‘অন্তত উত্তরপ্রদেশে জনতার ভাবনা বিজেপির পক্ষে।’’ উত্তরপ্রদেশের আর এক নেতা আরপিএন সিংহ বলেন, ‘‘আমরা যদি বিরোধিতা করি, জনতাকে কী জবাব দেব? উল্টো পথ নিলে রাজনৈতিক খেসারত দিতে হতে পারে।’’ হরিয়ানার দীপেন্দ্র হুডারও বলেছেন, ‘‘পুলওয়ামার সময়েও যে অবস্থান নিয়েছিলাম, এ বারেও সেটিই নিচ্ছি।’’ এ বিষয়ে সিন্ধিয়া বলেন, ‘‘জনতার মেজাজ বুঝেই টুইট করেছি। যদিও সরকারের কর্মপদ্ধতি নিয়ে একমত নই।’’
কিন্তু গুলাম নবি আজাদের মতো প্রবীণ নেতারা এই নবীনদের মতের সায় দেননি। শ্রীনগরের নেতা তারিক হামিদ কার্রাও বোঝান, কাশ্মীরের মানুষকে সঙ্গে না নিয়ে সরকার একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পরিণতি সুখকর হবে না। যে ভাবে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে রাজ্যকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে, তার বিরোধিতা করেন চিদম্বরমও। আজাদ-চিদম্বরমদের মত হল, জওহরলাল নেহরু, সর্দার পটেল, অম্বেডকররা যখন ৩৭০ অনুচ্ছেদ তৈরি করেন, তখনই সেটি অস্থায়ী ছিল। কিন্তু সব স্তরের মানুষের সঙ্গে কথা না বলে, সংবিধান না মেনে যে পদ্ধতিতে তা কার্যত লোপ করা হল, তা অগণতান্ত্রিক।
কংগ্রেসের সূত্রের খবর, প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকে সকলের কথা শুনে রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘আমরা সত্যের সঙ্গে আছি। শুধুই মানুষের ভাবনা আমাদের অবস্থানের মাপকাঠি হতে পারে না।’’ প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরারও মত, ‘‘মোদী সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে যা করল, তা গণতন্ত্রকে উপহাস্য করে তোলা হল।’’ একমত হন সনিয়াও। ফলে নবীনদের মত খারিজ করে ফের জয়ী প্রবীণরাই। ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাবে মোদী সরকারের পদক্ষেপের ঘোর সমালোচনাই করা হল।
যদিও নবীনদের মন রাখতে পাক অধিকৃত কাশ্মীর ও আকসাই চিন-কে ভারতের অখণ্ড অঙ্গ বলে বর্ণনা করে প্রস্তাবে একটি অনুচ্ছেদ জোড়া হল। আর অধীররঞ্জন চৌধুরী লোকসভায় রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারির কথা বলে যে অস্বস্তি তৈরি করেছিলেন, তার ক্ষত মেরামতে বলা হল— জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
এই অবস্থানকে পুঁজি করেই কাল শ্রীনগর যাচ্ছেন আজাদ। শুক্রবার সব রাজ্যের কংগ্রেস সভাপতি, পরিষদীয় দলনেতা, সাংসদ, সাধারণ সম্পাদকদের এই অবস্থানই বোঝানো হবে। কংগ্রেসের এক নেতা বললেন, ‘‘মোদী-শাহের চালে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে কংগ্রেস আগেই দ্বিধাবিভক্ত ছিল। ওয়ার্কিং কমিটি জনমনকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজনৈতিক লড়াইয়ে আবার পিছিয়ে পড়ল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy