ছবি: পিটিআই।
দিদি-দাদার সঙ্গে এখন প্রায়ই ঝগড়া হচ্ছে বছর চোদ্দোর আফনান আহমেদ দারের। দিদি আর দাদা পড়াতে বসাতে চাইলেই রেগে যাচ্ছে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আফনান। বলছে, ‘‘যা পড়ার স্কুলেই পড়ব।’’
পুরনো শ্রীনগরের এক বেসরকারি স্কুলের পড়ুয়া আফনানের মতো অবস্থা এখন কাশ্মীরের অধিকাংশ স্কুল পড়ুয়ারই। প্রায় দু’মাস হল নিষেধাজ্ঞার কবলে রয়েছে উপত্যকা। স্কুল খুললেও পড়ুয়াদের পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না অধিকাংশ অভিভাবক। ফলে স্কুলে হাজিরা দিচ্ছেন কেবল শিক্ষক ও অন্য কর্মীরা।
আফনানের দিদি সুরাইয়া সম্প্রতি বিএড করেছেন। বললেন, ‘‘ভাইকে বলি অন্তত বাড়িতে পড়। কিন্তু বললেই ও রেগে যাচ্ছে। সব
সময়েই টিভি দেখছে।’’ ক্ষুব্ধ সুরে আফনান বলল, ‘‘রোজ বিকেলে খেলতাম। এখন বাবা-মা বেরোতেই দিচ্ছে না।’’
আফনানের মতো অনেকেই তাদের অভিভাবকের কাছে জানতে চাইছে কেন তারা স্কুলে যেতে পারবে না? কেন খেলতে যাবে না? অভিভাবকেরা প্রশ্ন এড়িয়ে যাচ্ছেন। বাইরে গেলে বিপদ হবে ছাড়া আর বিশেষ কিছু বলারও নেই তাঁদের।
উপত্যকার একটি প্রথম সারির স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ে আনায়ত ইমরান মালিক। বলল, ‘‘স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে কত দিন দেখা হয় না।’’ বাড়িতে এখন ভাই-বোনের সঙ্গে খেলে ইমরান। তার বাবা ইমরান মালিক বললেন, ‘‘এখন দেখছি ছোট ছোট বিষয়ে রোজই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছে ওরা। মাঝে মাঝে আমাকেই সেই ঝগড়া থামাতে হয়।’’ ইমরানের ছেলেমেয়েরা অবশ্য কাছেই প্রাইভেট টিউশন নিতে যায়। ইমরান বললেন, ‘‘প্রাইভেট টিউশন যে স্কুলের বিকল্প নয় তা আমি জানি। কিন্তু অন্তত পড়াশোনার সঙ্গে যোগাযোগটা থাকুক।’’
একই অবস্থা সোনওয়ার এলাকার বাসিন্দা শাহিদ মুজফ্ফর বা হায়দরপোরা এলাকার শামশাদা আখতারের বাড়িতেও। শামশাদা আবার নিজেই স্কুলের শিক্ষিকা। বললেন, ‘‘আমার ছেলেমেয়ে এক সপ্তাহ ধরে আইসক্রিম খেতে চাইছে। আইসক্রিমের দোকান কেন বন্ধ তা কী ভাবে বোঝাব? স্কুলেও কোনও পড়ুয়া আসছে না। আমরাই রোজ স্কুলে যাই।’’
এই পরিস্থিতিতে শিশুদের বড় ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক মাকসুদ নুর। একই মত এসএমএইচএস হাসপাতালের মনোবিদ ইউসুফ আলির। তাঁদের মতে, স্কুলে যে পড়াশোনা হয় তা বাড়িতে সম্ভব নয়। আলির বক্তব্য, ‘‘এই প্রতিযোগিতার যুগে পড়ুয়ারা পিছিয়ে থাকতে চায় না। এমন পরিস্থিতিতে তাদের বড় মানসিক ক্ষতি হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy