ছবি: পিটিআই।
অমিত শাহ রাজ্যসভায় আসতেই টেবিল চাপড়ে অভিনন্দন জানালেন বিজেপি সাংসদেরা। জানতেন, বড় কিছু হতে চলেছে। জানা ছিল না, ঝুলিতে ঠিক কী নিয়ে আসছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদিও বিশ্বাস ছিল, যা-ই হোক, ‘রাষ্ট্রহিতে’ই হবে। অন্য দিকে, বিরোধীরা আগে থেকেই তৈরি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ খোলার আগেই চেপে ধরবেন সমস্বরে।
বিরোধী শিবিরের অনেক নেতা প্রথম বার নজর করলেন, হাত কাঁপছে অমিতের। বোধ হয় উত্তেজনায়। আরও চেপে ধরলেন গুলাম নবি আজাদ, ডেরেক ও’ব্রায়েনরা। কাশ্মীরে কেন এত নিরাপত্তা কর্মী মোতায়েন? কেন নেতাদের বন্দি করা হচ্ছে? কেন অমরনাথ যাত্রা বন্ধ হল মাঝপথে? কেন ভয় পাওয়ানো হচ্ছে মানুষকে?
অমিত বলার চেষ্টা করলেন, ‘‘সব উত্তর পাবেন। আমাকে বলতে তো দিন।’’ নাছোড় বিরোধীদের চাপ, ‘‘আগে উত্তর দিন।’’ চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আরও বিল ও প্রস্তাব পেশের সুযোগ দিলেন। ফের হাঙ্গামা। তার মধ্যেই অমিতের ঘোষণা, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হবে। জম্মু-কাশ্মীরকে দু’ভাগে ভাগ করে কেন্দ্রশাসিত রাজ্য হবে।’’ ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। ওয়েলে নেমে এলেন বিরোধী নেতারা। মেঝেতেই বসে পড়লেন গুলাম নবি, অম্বিকা সোনিরা।
রাজ্যসভার ভোটছবি
পক্ষে ভোট ১২৫
এনডিএ, আপ, বিজেডি, বিএসপি, টিডিপি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, টিআরএস, এডিএমকে
বিপক্ষে ভোট ৬১
কংগ্রেস, ডিএমকে, এসপি, সিপিএম, সিপিআই, মুসলিম লিগ, কেরল কংগ্রেস, এমডিএমকে
ভোট দেয়নি
তৃণমূল, এনসিপি, জেডিইউ
বার করে দেওয়া হয়
পিডিপি-কে
এরই মধ্যে মেহবুবা মুফতির দলের দুই সাংসদ ওয়েলে তুলকালাম জুড়লেন। নাজির আহমেদ সংবিধানের কপি ছিঁড়লেন। ক্ষুব্ধ বেঙ্কাইয়ার নির্দেশে মার্শালরা দুই সাংসদকে বাইরে নিয়ে গেলেন। দলের অন্য সাংসদ মির মহম্মদ ফইয়াজ প্রতিবাদে নিজের জামাই ছিঁড়ে ফেললেন। অন্য যে কোনও দিন হলে বেঙ্কাইয়া উচ্চকক্ষে এমন বিশৃঙ্খলা একদম পছন্দ করেন না। ওয়েলের দিকে কাউকে আসতে দেখলেই সভা মুলতুবি করে দেন। আজ করলেন না।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
এমন সময় মায়াবতীর দলের সতীশ মিশ্র বলেন, তাঁরা সমর্থন করছেন সরকারের বিল আর প্রস্তাব। মাথায় হাত বাকি বিরোধীদের। বুঝলেন, আটঘাট বেঁধে এসেছেন অমিত। বাইরে গিয়ে কয়েক জন বৈঠক করলেন। তত ক্ষণে দাবানলের মতো ছড়িয়ে গিয়েছে খবর। লোকসভায় ছিলেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধী। তাঁদের সঙ্গেও কথা বললেন বিরোধী নেতারা। দেখা গেল, যে অরবিন্দ কেজরীবাল কথায় কথায় দিল্লির উপরাজ্যপালের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন, দিল্লিকে পূর্ণ রাজ্য করার দাবি তোলেন— তাঁর দলও মোদী সরকারকে সমর্থন করে বসে আছে।
জনার্দন দ্বিবেদীর মতো প্রবীণ নেতা থেকে শুরু করে দীপেন্দ্র হুডার মতো কংগ্রেসের নবীন নেতারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সমর্থন করা শুরু করেছেন। সেই পথে হাঁটেন মিলিন্দ দেওরাও। রটে যায়, কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ভুবনেশ্বর কলিতা রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফার দেওয়ার কারণও ৩৭০ নিয়ে দলের অবস্থান মানতে না-পারা। যদিও নিজে তিনি জানিয়েছেন, কারণের কথা পরে জানাবেন। কিন্তু মূলত গুলাম নবির আপত্তিতেই স্থির হয়, পুরোদস্তুর বিরোধিতা করা হবে বিলের। এবং তার জন্য আগামিকালও লোকসভায় হুইপ জারি করেছে কংগ্রেস। কিন্তু বিরোধিতা কী যুক্তিতে? দলের অবস্থান স্পষ্ট করেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। বলেন, ‘‘বিজেপির ইস্তাহার মেনে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের যুক্তি তা-ও বোধগম্য। কিন্তু রাজ্যকে দু’ভাগ করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার কী যুক্তি? এ পথে চললে তো কাল বাংলা, ওড়িশা, তামিলনাড়ু— যে কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে, রাষ্ট্রপতির নির্দেশে কেন্দ্রশাসিত করে দেবে সরকার! গোটা প্রক্রিয়ায় বড় আইনি গলদ আছে। আদালতে টের পাবে সরকার।’’ ডেরেকও বললেন, ‘‘কালো সোমবার, কালো দিন। সংসদ, রাজ্যসভা, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।’’
তিন তালাকের মতো এ বারেও বিরোধিতা করে আগেই সভাকক্ষ ত্যাগ করে নীতীশ কুমারের দল। তাতে সুবিধাই হল সরকারের। শরদ পওয়ারের দলও ভোট দিল না। সভাকক্ষ ত্যাগ করল তৃণমূলও। এই বিল পাশ করাতে সাধারণ গরিষ্ঠতাই যথেষ্ট ছিল। সরকার দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন পেল। ভোটাভুটিতে সরকার পেল ১২৫। বিরোধীরা ৬১। উচ্চকক্ষে গরিষ্ঠতা নেই সরকারের। কিন্তু বিরোধীদের ছত্রভঙ্গ করে পরপর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করে রক্তের স্বাদ পেয়েছে সরকার। এ বারে পাশ করিয়ে নিল জম্মু-কাশ্মীরের বিলও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy