Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

ইদে বাড়িতে এসো না, ফোনে ছেলেকে বলে দিলেন মা

খোলা হয়েছিল দু’টি টেলিফোন লাইন। জরুরি ফোন করার জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সময়। গত কাল রাতে টিভি চ্যানেলের ঘোষণায় আর আজ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল, টেলিফোন লাইন খুলছে।

থমথমে কাশ্মীর। ছবি: এএফপি।

থমথমে কাশ্মীর। ছবি: এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

ডেপুটি কমিশনারের অফিসে আজ সারা দিন ভিড়। বেশির ভাগই কাশ্মীরি মহিলা। এসেছিলেন রাজ্যের বাইরে থাকা ছেলেমেয়েদের ফোন করে কথা বলার আশায়। কেউ করতে পারলেন, কেউ পারলেন না। তার মধ্যেই এক মা তাঁর ছেলেকে বলে দিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের যা অবস্থা, তাতে ইদে বাড়িতে আসতে হবে না।

খোলা হয়েছিল দু’টি টেলিফোন লাইন। জরুরি ফোন করার জন্য বেঁধে দেওয়া হয়েছিল সময়। গত কাল রাতে টিভি চ্যানেলের ঘোষণায় আর আজ সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছিল, টেলিফোন লাইন খুলছে। তার পরেই শ্রীনগরের লাল চকের কাছে ডিসি অফিসে লাইন পড়ে। ডেপুটি কমিশনার শাহিদ চৌধরি বলেছেন, ‘‘আমরা জানি পরিবারের সঙ্গে কথা বলার দরকার আছে, তাই পরিষেবা চালু হয়েছে। যে কেউ এসে ফোন করতে পারেন।’’ তবে যাঁরা ফোন করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে জানাতে হয়েছে, কাকে ফোন করছেন এবং কী ব্যাপারে কথা বলছেন। সময় দেওয়া হয়েছিল সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা। এক মিনিটের মধ্যেই সারতে হয়েছে কথা।

শ্রীনগরের হালওয়ালের বাসিন্দা ফেহমিদা বলেছেন, ‘‘এ সপ্তাহে আমার মেয়ের আসার কথা ছিল। কিন্তু যোগাযোগের সব পথ বন্ধ
হয়ে যাওয়ার পরে ও আর টিকিট কাটেনি।
তাই সব সময় দরজার দিকে তাকিয়ে ভেবেছি, ও কখন আসবে। আর যদি এসে যায়, তা হলে বিমানবন্দর থেকে কার্ফুর মধ্যে কী ভাবে বাড়ি পৌঁছবে।’’

আজ মেয়ের সঙ্গে কথা হওয়ার পরে ফেহমিদা বলেছেন, ‘‘ও জানিয়েছে, কাল আসবে। কোনওমতে ঠিক সময়ে ফোন করতে পেরেছি আমরা। ও ভেবেছিল বিমানবন্দর থেকে হেঁটে আসবে। এ বার অন্তত আমরা বিমানবন্দর পর্যন্ত গিয়ে ওকে তুলে আনতে পারব।’’

ফেহমিদার মতো এতটা সৌভাগ্য হয়নি জহরনগরের আর এক মহিলার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মহিলা বলেছেন, ‘‘আমার স্বামী বেঙ্গালুরুতে ছেলেকে ফোন করতে চেয়েছিলেন। বললাম, আমি যাই। কারণ চেকপয়েন্টে পুরুষদের বেশি আটকানো হচ্ছে। জহরনগর থেকে হেঁটে গিয়ে ছেলেকে ফোন করেছি। ও প্রথমে কাঁদছিল। বললাম, চিন্তা কোরো না, নিজে সাবধানে থাকো। ইদে আসার চেষ্টা কোরো না। এখানে এখনও সব থমথমে অবস্থা।’’

এঁরা যেমন ফোন করতে পেরেছেন, শ্রীনগরের রাওয়ালপোড়া এলাকার আঞ্জুম তেমনই এক জন। তিনি বিকেল পাঁচটার সামান্য পরে গিয়ে পৌঁছন ডিসি অফিসে। তিনি বলেছেন, ‘‘আমার দুই মেয়ে। এক জন জম্মুতে মেডিক্যাল ইন্টার্নশিপ করছে আর অন্য জন দিল্লিতে সাংবাদিকতা নিয়ে পড়ছে। গত রবিবার থেকে ওদের সঙ্গে কথা হয়নি। ওরা খুব চিন্তায় আছে। আমাকে আজও কথা বলতে দেওয়া হল না।’’

ওই মহিলার জন্য কি নিয়ম একটু শিথিল করা যেত না? ডিসি অফিসে হাজির একমাত্র সংবাদসংস্থা প্রশ্ন করেছিল আধিকারিকদের। জানানো হয়, মহিলাদের তল্লাশি নেওয়ার মতো আর কোনও মহিলা-অফিসার এখন উপস্থিত নেই। আগামী কাল সকাল দশটায় আসুন।

‘‘জানি অফিসারেরা তাঁদের কাজ করছেন। কিন্তু আমরা এসেছিলাম ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে। সারা দিনই ফোন করার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল,’’ বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আর এক মহিলা।

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu and Kashmir Helpline Article 370
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy