ভারত জোড়ো যাত্রায় শ্রীনগরের লাল চকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছেন রাহুল গান্ধী। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
শ্রীনগর বিমানবন্দর থেকে লাল চকের দিকে গাড়ি ঘুরতেই সিআরপিএফ এবং জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ পথ আটকাল। রাস্তা জুড়ে ব্যারিকেড, কাঁটাতার— কোনও ভাবেই রাস্তা খোলা যাবে না।
কেন? রাহুল গান্ধী লাল চকে আসছেন। সংবাদমাধ্যমের গাড়ি বলায় সিআরপিএফের অফিসারের থেকে পাল্টা উত্তর এল, “কিছু হলে আপনারাই তো বলবেন, নিরাপত্তায় খামতি ছিল। ভারত জোড়ো যাত্রা কাশ্মীরে ঢোকার পর থেকে রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে।”
পরিচয়পত্র দেখিয়ে, অনুরোধ করে ছাড়পত্র মিলল ঠিকই। কিন্তু রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র জন্য পুলিশ-সিআরপিএফ মিলে গোটা শ্রীনগরকে কার্যত যে দুর্গে পরিণত করেছে, তা স্পষ্ট হল। প্রতি ৫০ মিটার অন্তর পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনী। রবি-সকালে খুলতে দেওয়া হয়নি শ্রীনগরের অধিকাংশ বাজারও। কংগ্রেস নেতাদের নালিশ, ‘অলিখিত কার্ফু’ জারি করে শ্রীনগরের মানুষকে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় যোগ দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
এই কড়া নিরাপত্তার মধ্যেই আজ ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শেষ করে শ্রীনগরের ঐতিহাসিক লাল চকে ঘণ্টাঘরের পাশে জাতীয় পতাকা তুললেন রাহুল। চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। প্রশ্ন তুললেন, “৩৭০ রদ করে, জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্রের শাসন জারির পরে কাশ্মীরের পরিস্থিতি যদি ভালই হয়, তা হলে অমিত শাহ জম্মু থেকে শ্রীনগরের লাল চক পর্যন্ত পদযাত্রা করছেন না কেন?”
ঠিক ৭৫ বছর আগে জওহরলাল নেহরু এই লাল চকেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। নেহরুর প্রতিশ্রুতি ছিল, কাশ্মীরের মানুষের হাতেই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, কাশ্মীরের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষমতা থাকবে। সেই প্রতিশ্রুতি এখন ইতিহাস। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ অধিকারের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ হয়ে গিয়েছে। জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে তৈরি হয়েছে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল।
রাহুল আজ ফের জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর দাবি তুলেছেন। বিধানসভা নির্বাচন করে বিধানসভা গঠনের প্রয়োজনীয়তার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেস কেন্দ্রে ক্ষমতায় ফিরলে ৩৭০ অনুচ্ছেদ ফিরবে কি না, সে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন। কারণ তিনি জানেন, এ সব বললেই ১৩৫ দিনের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র শেষে বিজেপি তাঁর বিরুদ্ধে দেশ বিভাজনের অভিযোগ তুলবে। তাই রাহুল সে পথে হাঁটেননি।
বিজেপি শিবিরের যুক্তি, শ্রীনগরে লাল চকে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে রাহুল আসলে নরেন্দ্র মোদীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন। ১৯৯২ সালে কাশ্মীরে যখন জঙ্গি হামলা তুঙ্গে, তখন তদানীন্তন বিজেপি সভাপতি মুরলীমনোহর জোশী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ২৬ জানুয়ারি লাল চকে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছিলেন। সে দিনও জঙ্গি হামলার জন্য কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও জঙ্গিরা লাল চকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় রকেট হামলা চালিয়েছিল। বিজেপি নেতাদের দাবি, কাশ্মীরে শান্তি ফিরেছে বলেই রাহুল নির্বিঘ্নে জাতীয় পতাকা তুলতে পেরেছেন। রাহুল যখন আজ লাল চকে জাতীয় পতাকা তুলেছেন, তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা ও কংগ্রেস নেতারা।
রাহুলের পাল্টা, “কাশ্মীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক কোথায়? এখানে তো বেছে বেছে জঙ্গি হামলা হচ্ছে। বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে।” বস্তুত লাল চকে জাতীয় পতাকা তোলা হলে বিজেপি তার সঙ্গে ১৯৯২-এ মোদীর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের তুলনা টানবে বলেই কংগ্রেস প্রথমে লাল চকে পতাকা উত্তোলনের পথে হাঁটতে চায়নি। কংগ্রেসে জম্মু-কাশ্মীরের ভারপ্রাপ্ত নেত্রী রজনী পাটিল একে ‘ও সব আরএসএসের কর্মসূচি’ বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন।
ঠিক ছিল, আজ ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ শেষ হবে। সোমবার লাল চক চত্বরেই প্রদেশ কংগ্রেস দফতরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন রাহুল। কিন্তু শেষ মূহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানান, “রাহুলের ৩০ জানুয়ারি প্রদেশ কংগ্রেস দফতরেই জাতীয় পতাকা তোলার কথা ছিল। কিন্তু তার অনুমতি দেওয়া হয়নি। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন লাল চকেই জাতীয় পতাকা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। সঙ্গে শর্ত দিয়েছে, রবিবারই তা সেরে ফেলতে হবে।”
কংগ্রেসের অন্দরমহলে প্রশ্ন, শ্রীনগর কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে, জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা বলে, প্রদেশ কংগ্রেস দফতরের বদলে লাল চকেই জাতীয় পতাকা তুলতে বাধ্য করে বিজেপি কি আড়াল থেকে রাহুলকে মোদীর পথে টেনে আনল! রাহুলের জবাব, “লাল চকে পতাকা উড়িয়ে ভারতকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আজ পূরণ হল। এই ঘৃণা, বিদ্বেষ হারবে। ভালবাসাই সবসময় জয়ী হয়। ভারতে নতুন আশার আলো ফুটবেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy