শ্রীনগরে তুষারপাতের মধ্যেই ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সমাপ্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখলেন রাহুল গান্ধী। ছবি পিটিআই।
শুরু থেকে শেষ, রাহুল গান্ধীময় হয়েই রইল ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। সোমবার শ্রীনগরে কংগ্রেসের এই কর্মসূচির সমাপ্তি অনুষ্ঠানেও আলোকিত হয়ে রইলেন সনিয়া-পুত্র। সকাল থেকেই আকাশের মুখভার। অনবরত হচ্ছে তুষারপাত। বরফ গায়ে মেখেই বক্তৃতা করলেন সাংসদ। বললেন, ‘‘এই পদযাত্রায় অনেক কিছু শিখেছি।’’ সোমবার অবশ্য রাহুলকে সেই পরিচিত সাদা রঙের টি-শার্টে দেখা যায়নি। দেখা গিয়েছে কাশ্মীরি পোশাক ‘ফেরান’ পরিহিত রাহুলকে।
গত বছরের ৭ সেপ্টেম্বর কন্যাকুমারী থেকে শুরু হয়েছিল রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’। কংগ্রেসের এই কর্মসূচির পুরোভাগে প্রথম থেকেই দেখা গিয়েছে রাহুলকে। সাংসদের বেশভূষা নিয়ে বার বার চর্চা চলেছে। কখনও তাঁর দাড়ি নিয়ে আলোচনা হয়েছে, আবার ঠান্ডার মধ্যেও শুধু টি-শার্ট আর জিন্স পরেই চষে বেড়িয়ে চর্চায় থেকেছেন সনিয়া-পুত্র। রাহুলের কি ঠান্ডা লাগে না? এই প্রশ্নও দানা বেঁধেছিল দেশবাসীর একাংশের মনে। এ নিয়ে চর্চার মধ্যেই গত ২০ জানুয়ারি জম্মুর কাঠুয়ায় ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় হাঁটার সময় জ্যাকেট পরিহিত রাহুলকে দেখা গিয়েছিল। তার পর সোমবার পদযাত্রার শেষলগ্নে তুষারপাতের মধ্যে রাহুলের বক্তৃতা এবং ‘ফেরান’ গায়ে জড়ানো এই চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
শ্রীনগরে রাহুল বলেছেন, ‘‘আমি অনেক কিছু শিখলাম। এক দিন খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল। ভেবেছিলাম ৬-৭ ঘণ্টারও বেশি সময় হাঁটতে হবে। এটা মুশকিল। দেখলাম একটা ছোট্ট মেয়ে আমার কাছে এসে একটা চিঠি দিল। তার পর আমায় আলিঙ্গন করে দৌড়ে চলে গেল।’’ কী লেখা ছিল ওই চিঠিতে, সে কথা সকলের সঙ্গে ভাগ করেছেন রাহুল। তাতে লেখা ছিল, ‘‘দেখতে পাচ্ছি তোমার (রাহুল) হাঁটুতে ব্যথা করছে...আমি তোমার সঙ্গে হাঁটতে পারব না। কিন্তু মন থেকে তোমার পাশে রয়েছি। জানি, তুমি আমার এবং আমার ভবিষ্যতের জন্য হাঁটছ।’’ ওই ‘ছোট্ট মেয়ের’ এই বার্তায় এক নিমেষে তাঁর সব যন্ত্রণা লাঘব হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন রাহুল।
ঠান্ডার মধ্যেও শুধু টি-শার্ট পরে হাঁটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাহুল। এতেও কংগ্রেস সাংসদের গলায় ধরা পড়েছে আবেগ। সনিয়া-পুত্র বলেছেন, ‘‘ ৪জন বাচ্চা আমার কাছে এসেছিল। ওদের কোনও পোশাক নেই। আমি ওদের কাছে টেনে নিই। ওরা ঠান্ডায় কাঁপছিল। হয়তো ওদের খাবারও জোটেনি। ভাবলাম, ওরা যদি ঠান্ডায় জ্যাকেট বা সোয়েটার না পরে, তা হলে আমি কেন পরব!’’ ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র সমাপ্তি অনুষ্ঠানে রাহুলের গলায় এমনই নানা আবেগের সুর শোনা গিয়েছে। কাশ্মীরবাসীর উদ্দেশে রাহুল বলেছেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ আমায় গ্রেনেড দেননি, তবে ভালবাসা দিয়েছেন।’’
দেশকে এক সুতোয় জুড়তে এই কর্মসূচি শুরু করেছিল কংগ্রেস। ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র শেষ দিনে রাজনৈতিক ঐক্যের ছবি উঠে এসেছে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানে ২১টি বিরোধী দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কংগ্রেস। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে যা আলাদা গুরুত্ব পেয়েছে। তবে সকলে যোগ দেয়নি কংগ্রেসের এই কর্মসূচিতে। ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিডিপি, ডিএমকে, সিপিআই, আরএসপি, বিএসপি, আইইউএমএলের মতো বিরোধী দল রাহুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে। যদিও তৃণমূল, সমাজবাদী পার্টির মতো বিরোধী দলগুলি যোগ দেয়নি।
‘ভারত জোড়ো যাত্রা’য় প্রথম থেকেই রাজনৈতিক আঙিনায় নজর কেড়েছেন রাহুল। এই কর্মসূচিতে ভাল সাড়া পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’কে আবার ‘আধ্যাত্মিক যাত্রা’ বলে বর্ণনা করেছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। তাঁর কথায়, ‘‘দেশে যে রাজনীতি চলছে তাতে কোনও লাভ হবে না। বিভাজনের রাজনীতি চলছে, যা দেশের পক্ষে খারাপ। এটা আসলে আধ্যাত্মিক যাত্রা।’’
এই কর্মসূচির শুরু থেকে শেষ রাহুলই মুখ ছিলেন। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি যেমন বলেছেন, ‘‘রাহুল গান্ধীর মধ্যে আশার কিরণ দেখছে পাচ্ছে গোটা দেশ।’’ সাদা রঙের টি শার্ট-জিন্স থেকে ফেরান— লোকসভা নির্বাচনের আগে ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ যেন রাহুলের নিজের কাছেই নিজের পরীক্ষা ছিল। সেই পরীক্ষায় কি উতরোতে পারলেন সাংসদ? এর উত্তর দেবে সময়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy