বাজেটে সীমান্ত পরিকাঠামোয় ৮৭% বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রস্তাব পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পড়শি রাষ্ট্র বাংলাদেশে অস্থির পরিস্থিতির জন্য সীমান্তে উত্তেজনা। বিষয়টি মাথায় রেখে পূর্ব সীমান্তকে যথাসম্ভব নিশ্ছিদ্র করার লক্ষ্যে সীমান্ত উন্নয়ন পরিকাঠামো খাতে ওই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বারের বাজেটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জন্য ২,৩৩,২১১ কোটি বরাদ্দ করেছেন অর্থমন্ত্রী। গত জুলাইয়ে যে বাজেটে হয়েছিল তার থেকে নিরাপত্তা খাতে প্রায় ১২,৮৪০ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে সীমান্ত পরিকাঠামোয় ৫,২৩৭.৯৩ কোটি টাকা দিয়েছেন নির্মলা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে বলা হয়েছে, মূলত পূর্ব সীমান্তের পরিরকাঠামো উন্নয়নে ওই অর্থ ব্যবহার করা হবে। যে সব এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া লাগানো হয়নি তা শেষ করা হবে। বাড়ানো হবে চেকপোস্টের সংখ্যা। সীমান্তে নজরদারি পরিকাঠামো আরও উন্নত করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পশ্চিম সীমান্তের মতোই পূর্ব সীমান্তে ড্রোনের বিপদ লক্ষ্য করা গিয়েছে। উভয় সীমান্তে শত্রু-ড্রোনে আকাশেই চিহ্নিতকরণ ও নষ্ট করে দেওয়ার প্রযুক্তি বসাতে ওই অর্থের বড় অংশ খরচে কথা রয়েছে।
এ বারের স্বরাষ্ট্র বাজেটের প্রায় অর্ধেক অর্থ (১,০৯,০৩৭ কোটি) বরাদ্দ করা হয়েছে আধা সামরিক বাহিনীর খাতে। ওই অর্থ বাহিনীর বেতন ও অন্যান্য খরচ মেটানোর পাশাপাশি, আধুনিক অস্ত্র সংগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামো খাতে খরচ হওয়ার কথা রয়েছে। আধা সামরিক বাহিনীগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ পেয়েছে সিআরপিএফ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, বরাদ্দ কমে গিয়েছে গোয়েন্দা পরিকাঠামোয়। বাজেট নথি বলছে, জাতীয় ইনটেলিজেন্স গ্রিড খাতে এ বারে বরাদ্দ হয়েছে ১৫৮.২৩ কোটি টাকা। যা গতবারের চেয়ে প্রায় ৯০ কোটি টাকা কম। প্রায় ১১৩ কোটি বাজেট বরাদ্দ কমেছে ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর। প্রায় কুড়ি কোটি টাকা বরাদ্দ কমেছে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ (এসপিজি)-এর। একই ভাবে, জনগণনা খাতে বরাদ্দ (৫৭৪.৮০কোটি) আগের বারের মতোই প্রায় এক রেখে দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধীদের বক্তব্য, এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে সরকার জনগণনা করাতে আদৌ আগ্রহী নয়। কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, ‘‘আসলে জনগণনা হলেই জাতগণনার দাবি উঠবে। আর তাই জণগণনার দায় এড়িয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে কেন্দ্র। সে কারণেই বাজেট বরাদ্দ কমেছে।’’
বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে প্রতিরক্ষা খাতেও। ওই বিভাগে প্রায় ৬.৮ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন নির্মলা। যা গত বাজেটের চেয়ে প্রায় ৯.৫৫ শতাংশ বেশি। বাজেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে ১.৯২ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। মূলত অত্যাধুনিক অস্ত্র, এয়ারক্রাফ্ট, যুদ্ধবিমান কিনতে ওই অর্থ খরচ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান সময়ে যুদ্ধের কৌশল যে সম্পূর্ণ পাল্টে গিয়েছে তার সাক্ষী রয়েছে গোটা বিশ্ব। এই আবহে ভারতীয় সেনার হাতে আধুনিক মানের অস্ত্র হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা প্রয়োজন। বরাদ্দ অর্থের বড় অংশ প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভর ভারত হওয়ার লক্ষ্যে খরচের কথা। যাতে দেশীয় ভাবে অস্ত্র-গোলাবারুদ তৈরি করা সম্ভব হয়। পাশাপাশি, ওই বরাদ্দ বিদেশ থেকে জেট প্লেন, সাবমেরিন, ড্রোনের মতো আধুনিক অস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার হওয়ার কথা রয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা গবেষণা খাতে সামান্য অর্থ বরাদ্দের সমালোচনায় সরব প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, প্রতিরক্ষা খাতে সাবলম্বী হতে গেলে সবার আগে গবেষণায় জোর দিতে হবে। বাড়াতে হবে অর্থের পরিমাণ। গত জানুয়ারিতে এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ গবেষণা খাতে মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ১৫ শতাংশ বিনিয়োগের উপরে জোর দিয়েছিলেন। যদিও চলতি বাজেটে মোট প্রতিরক্ষা বাজেটের ২ শতাংশ খরচ হয়েছে গবেষণায়। যা প্রয়োজনের থেকে অনেক কম ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)