Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
National News

হাসপাতালে টানাপড়েনে যোগীর রাজ্যে মৃত্যু চার দিনের শিশুর

বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে। আলোড়নের পর ওই হাসপাতালের একটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অন্য বিভাগের অফিসার ইন-চার্জের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত।

শিশুটির সঙ্গে ঠাকুমা কুসমা দেবী। ছবি: টুইটার

শিশুটির সঙ্গে ঠাকুমা কুসমা দেবী। ছবি: টুইটার

সংবাদ সংস্থা
বরেলী (উত্তরপ্রদেশ) শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৯ ১১:৫৭
Share: Save:

ফের খবরের শিরোনামে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের সরকার। বিতর্কের কেন্দ্রে এ বার উত্তরপ্রদেশের একটি সরকারি হাসপাতাল। কোথায় চিকিৎসা হবে আর তার দায়িত্ব বর্তাবে কোন চিকিৎসকের হাতে, তা নিয়ে একটি সরকারি হাসপাতালের দুই বিভাগের মধ্যে টানা তিন ঘণ্টার টানাপড়েনে মৃত্যু হয়েছে একটি চার দিনের শিশুর। বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে। আলোড়নের পর ওই হাসপাতালের একটি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। অন্য বিভাগের অফিসার ইন-চার্জের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিভাগীয় তদন্ত। গত কাল রাতেই টুইট করে তাঁর সরকারের কড়া পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, চার দিনের যে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে, সেই উর্বশীর জন্ম হয়েছিল গত ১৫ জুন। বরেলীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে। শিশুটির বাবা কৃষক। বুধবার সকালে শিশুটির শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন উদ্বিগ্ন বাবা, মা শিশুটিকে নিয়ে ছুটে আসেন বরেলী শহরের ওই সরকারি হাসপাতালে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই সময় হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে যে চিকিৎসকের ডিউটি ছিল, সেই কমলেন্দ্র স্বরূপ গুপ্তা শিশুটিকে পরীক্ষা করতে অস্বীকার করেন, তাঁর অন্য কাজ রয়েছে, এই অজুহাতে। বলেন, শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের মহিলা বিভাগে যেতে। এর পরেই শিশুটিকে নিয়ে তার বাবা, মা ছুটে যান হাসপাতালের একই কমপ্লেক্সে থাকা মহিলা বিভাগে। সেখানে যে মেডিক্যাল অফিসার দায়িত্বে ছিলেন, সেই মহিলা চিকিৎসক অলকা শর্মা জানান, শিশুটিকে ভর্তি করিয়ে নেওয়ার মতো পর্যাপ্ত বেড নেই তাঁর বিভাগে। শিশুটিকে তিনি আবার পুরুষ বিভাগেই নিয়ে যেতে বলেন তার বাবা, মাকে।

আরও পড়ুন- এক দেশ-এক ভোট নিয়ে কমিটি, গেলেন না অর্ধেকই, মোদী অটল​

আরও পড়ুন- আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তার নির্দেশ যোগীর​

শিশুটির ঠাকুমা কুসমা দেবীর অভিযোগ, ‘‘এই ভাবে টানা তিন ঘণ্টা ধরে হাসপাতালের দু’টি বিভাগ আমাদের দৌড়ঝাঁপ করিয়েছে। কিন্তু কোনও বিভাগই আমাদের বাচ্চাটিকে ভর্তি করায়নি। তখন আমার ছেলে, বউমা বাচ্চাটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার কথা ভেবেছিল। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছিল নীচে, হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। কিন্তু হাসপাতালের সিঁড়িতেই মৃত্যু হয় ওর।’’

শিশুটিকে ভর্তি করানো নিয়ে হাসপাতালের দুই বিভাগের মধ্যে টালবাহানার অভিযোগটি যে মিথ্যা নয়, বিভাগের চিকিৎসক ও অফিসার ইন-চার্জের লেখা মেডিক্যাল স্লিপেই তার প্রমাণ রয়েছে।

শিশুটির মৃত্যুর পর একে অন্যকে দোষারোপ করে বচসায় জড়িয়ে পড়েন দুই চিকিৎসক কমলেন্দ্র ও অলকা। তার ভিডিয়ো সাংবাদিক ও হাসপাতালে থাকা অন্য রোগীর পরিবারের লোকজন।

পরে চিকিৎসক কমলেন্দ্র স্বরূপ গুপ্তা বলেছেন, ‘‘শিশুটিকে ওপিডিতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে তাকে পাঠানো হয়েছিল শিশুর চিকিৎসার জন্য বিশেষ বিভাগে। কিন্তু ওরা শিশুটিকে ভর্তি করাতে রাজি হয়নি। শিশুটিকে এমার্জেন্সিতে নিয়ে যাওয়া হলে আমরা চিকিৎসা করতে পারতাম। পরে শিশুটিকে এমার্জেন্সিতে ভর্তি করানোর চেষ্টা শুরু হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়।’’

হাসপাতালের মহিলা বিভাগে চারটি বেডে রয়েছে আটটি শিশু। ওই বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ইন-চার্জ চিকিৎসক অলকা শর্মার কথায়, ‘‘বেডের এই অবস্থা দেখেই আমি শিশুটিকে পুরুষ বিভাগে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। ওরা ভাল ভাবে কিছু না দেখেই রোগীদের পাঠিয়ে দেয় মহিলা বিভাগে। বেড খালি থাকলে তো আমরা শিশুটিকে ভর্তি কারতেই পারতাম।’’

সরকারি চিকিৎসক ও সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার বিচারে বিহারের পরেই রয়েছে উত্তরপ্রদেশ। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে ১৯ হাজার ৯৬২ জন মানুষ পিছু রয়েছেন এক জন করে সরকারি চিকিৎসক। বিহারের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ২৮ হাজার ৩৯১ জন। এ ব্যাপারে জাতীয় গড়টা হল ১১ হাজার ৮২ জন। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) বেঁধে দেওয়া সীমার দশ গুণ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE