(বাঁ দিক থেকে) হেমন্ত সোরেন, লালু প্রসাদএবং জয়ললিতা। — ফাইল চিত্র।
ঝাড়খণ্ডের হেমন্ত সোরেন প্রথম উদাহরণ নন। দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতারির ঠিক আগে মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফার নজির রয়েছে দেশের আরও দুই নেতা-নেত্রীর। বিহারের লালু প্রসাদ এবং তামিলনাড়ুর জয়ললিতা। ঘটনাচক্রে, জেএমএ চেয়ারম্যান হেমন্তের মতোই তাঁরা দু’জনেও ছিলেন দুই আঞ্চলিক দলের শীর্ষপদে। লালু আরজেডির। জয়ললিতা এডিএমকের।
১৯৮৫ সালে বিহারের ট্রেজারি ও বিভিন্ন দফতরে অনিয়ম চিহ্নিত করেন তৎকালীন সিএজি টিএন চতুর্বেদী। তার এক দশক পরে সেই সূত্রেই সামনে এসেছিল পশুখাদ্য কেলেঙ্কারি। ১৯৯৬ সালর জানুয়ারিতে পশুপালন দফতরের লেনদেন খতিয়ে দেখতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অবিভক্ত বিহারের অর্থসচিব। এর দু’মাস পরে পটনা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয়।
১৯৯৭ সালের ২৩ জুন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ-সহ ৫৫ জনের নামে সিবিআই চার্জশিট পেশ করে। এর এক মাস পরে ২৫ জুলাই লালুকে গ্রেফতার করতে আধাসেনা দিয়ে বাড়ি ঘিরে ফেলেন সিবিআইয়ের তৎকালীন যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাস। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গ্রেফতারি এড়ালেও মুখ্যমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন লালু। গদিতে বসিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী রাবড়ী দেবীকে। ৩০ জুলাই সিবিআই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জেলে যান লালু। ১৩৫ দিন পরে জামিন পেলেও আর কোনও দিন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেননি তিনি। পরে পশুখাদ্য দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক মামলায় সাজা হয় তাঁর।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ইস্তফা দিয়েছিলেন এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা। জেলেও গিয়েছিলেন। প্রমাণ হয়েছিল, ১৯৯১-৯৬ মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বেআইনি আয়ের টাকার বাংলো, চাবাগান, কৃষিজমি, অন্তত ১৭টি দামি গাড়ি, ২৮ কিলোগ্রাম সোনা, ৮০০ কিলোগ্রাম রূপো এমনকি, ১০ হাজার শাড়ি, ৭৫০ জোড়া জুতো কিনেছিলেন ‘আম্মা’। অবশ্য কর্নাটক হাই কোর্টের রায়ে ‘বেকসুর খালাস’ হয়ে জেল থেকে বেরিয়ে ২০১৫-য় আবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু গুরুতর অসুস্থ হয়ে দেড় বছরের মাথাতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
হেমন্তের ঝাড়খণ্ডেই অবশ্য দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন আরও দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মধু কোড়া এবং শিবু সোরেন। ঘুষ নিয়ে কয়েকটি সংস্থাকে নিয়ম ভেঙে কয়লা ব্লকের বরাত পাইয়ে দেওয়া এবং সেই অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের নভেম্বরে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁকে। ২০১৭ সালে ওই মামলায় দোষী প্রমাণিত হয়ে তাঁর সাজাও হয়েছিল। অবশ্য তাঁর দেড় বছর আগেই মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন কোড়া। হেমন্তের মতো গ্রেফতারির কারণে ইস্তফা দিতে হয়নি তাঁকে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দুর্নীতি এবং খুনের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ঝাড়খণ্ডের অন্য প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী— হেমন্তের বাবা তথা জেএমএমের প্রতিষ্ঠাতা শিবু। মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারানোর কয়েক মাস পরে ২০০৬-এর নভেম্বরে একটি খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন শিবু। সেই সঙ্গে সাংসদ কেনাবেচার অভিযোগও ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি তখন কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের মন্ত্রী। ইস্তফা দিয়ে জেলে যেতে হয়েছিল তাঁকে। তার আগে সাংসদ কেনাবেচার মামলাতেও গ্রেফতার হয়েছিলেন শিবু।
দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন আরও এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী— হরিয়ানার ওমপ্রকাশ চৌটালা। চার দফায় হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রিত্ব সামলানো ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোক দলের (আইএনএলডি) নেতা চৌটালা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি এবং আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন সম্পত্তির মামলায় এক দশকেরও বেশি সময় কারাবাস করেছেন। এ ছাড়া দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন, বিজেপির বিএস ইয়েদুরাপ্পা (কর্নাটক), ডিএমকের এম করুণানিধি (তামিলনাড়ু) এবং হালফিলে তেলুগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নায়ডু। লোকসভা ভোটের আগে জল্পনা, দিল্লির আবগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হতে চলেছেন অরবিন্দ কেজরীওয়াল। ইতিমধ্যেই একাধিক বার ইডির নোটিস এড়িয়ে গিয়েছেন তিনি। হাজির হননি জিজ্ঞাসাবাদের তলবে। জল্পনা তাই ক্রমশ দানা বাঁধছে। গ্রেফতার হলে কি তার আগে কি মুখ্যমন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেবেন আম আদমি পার্টি (আপ)-র প্রধানও?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy