নিষিদ্ধ শব্দবাজি। প্রতীকী ছবি।
গলির ভিতরে সার দিয়ে আড়ত। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই প্রশ্ন এল, কোথা থেকে আসছেন? জবাব পেয়েই প্রস্তাব: ‘কী কী লাগবে দেখে নিন। ‘ডিসকাউন্ট’ করে দেব। ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাও হয়ে যাবে।’ যদি নিজেই নিয়ে যেতে চাই? সত্বর জবাব, ‘পারবেন না। পুলিশ ধরে ফেলবে। পৌঁছে দেওয়ার সব বন্দোবস্ত আছে আমাদের।’
কথা হচ্ছিল ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়ায় বোরাপট্টিতে দাঁড়িয়ে। বাজির আড়ত বলে পরিচিত এই অঞ্চল। আসানসোল-রানিগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের নানা বাজারে কালীপুজো ও ছটের সময়ে নিষিদ্ধ শব্দবাজি লুকিয়ে-চুরিয়ে কোথা থেকে ঢোকে, সে খোঁজ করতে গিয়ে কানে এসেছিল এই এলাকার কথা। আসানসোল থেকে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে ৬০ কিলোমিটার পেরিয়ে ধানবাদ, সেখান থেকে আরও ১২ কিলোমিটার দূরে ঝরিয়ায় পৌঁছনো বাজির আড়ত সরেজমিনে দেখতেই। পশ্চিমবঙ্গে শব্দবাজি নিষিদ্ধ হলেও, ঝাড়খণ্ডে তা নয়। ঝরিয়ায় বোরাপট্টি, খৈনিপট্টি, উপরকুলি-সহ নানা এলাকায় তাই রমরমিয়েই চলছে বাজির আড়ত।
কয়লা কারবারিদের ‘মুক্তাঞ্চল’ বলে পরিচিত ঝরিয়ায় বাজি পোড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে। তাই এখানে পাইকারি বাজার। সেখান থেকে সংলগ্ন বঙ্গেও বাজি আসে, দাবি ব্যবসায়ীদের। বোরাপট্টিতে দেখা মিলল এক আড়তদার সিকন্দর আলমের। তিনি জানালেন, ক্রেতা পছন্দ করার পরে বাজি সুন্দর ‘প্যাকিং’ করে তাঁদের ‘বিশ্বস্ত’ সরবরাহকারীর মাধ্যমে একেবারে দুয়ারে পৌঁছে দেন। নিজে ব্যাগ বা থলিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কিন্তু রাজ্যের সীমানায় চেকপোস্টে বিপদে পড়তে হবে, সাবধান করে দিলেন তিনি।
গোপনে বাজি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকবেন কী ভাবে, তার সন্ধান আরা দিলেন আর এক বিক্রেতা মহম্মদ সুলতান। তাঁর দাবি, ঝাড়খণ্ডের চন্দনকেয়ারি, নিরশা, মাইথন হয়ে বরাকর নদে খেয়া পেরিয়ে ঢুকে পড়া যায় বাংলার কেওটজালি, বাথানবাড়ি, সিদাবাড়িতে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন অঞ্চলে। একই ভাবে ঝাড়খণ্ডের খেরকেয়ারি, বাসন্তীমাতা ও নিরশা থেকে দামোদরে খেয়া পার করে বাজি আসে আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গায়।
কী মেলে ঝরিয়ার আড়তে? সিকন্দরেরা জানালেন, ‘ব্ল্যাক ক্যাট’, বাচ্চু বোম, চকলেট বোমের প্যাকেট মেলে ৪০-৬০ টাকা দাম। ‘টু সাউন্ড’ থেকে ‘টুয়েলভ সাউন্ড’ বাজির দাম পড়ে প্যাকেট পিছু ২৫-২০৫ টাকা। ছোট ‘রকেট বোম’ প্রতি প্যাকেট ১০০ টাকা, বড় ২০০ টাকা। নানা দামে নানা গুণমানের বাজি মেলে বলেও জানা গেল। কিছু আড়তদার জানালেন, উচ্চমানের শব্দবাজি ঝরিয়ায় তৈরি হয় না। সে সব আসে উত্তরপ্রদেশের কানপুর, তামিলনাড়ুর শিবকাশির মতো জায়গা থেকে। ঝকমকে কাগজে মোড়া কয়েকটি বাজি দেখিয়ে এক আড়তদার বললেন, ‘‘এগুলি আলু বোম। স্থানীয় পরিত্যক্ত খনি অঞ্চলের বস্তির বাসিন্দারা কিছু রাসায়নিক গুঁড়ো ও দেশলাইয়ের বারুদ ব্যবহার করে তৈরি করেন।’’ আড়তদারদের দাবি, ২০০০ সালে এখানে বাজি বাজারে আগুন লাগার পর থেকে ঝরিয়ার বাজি বাজার কিছুটা নিয়ন্ত্রণ রেখেছে পুলিশ।
শব্দবাজি যে ঢুকছে, মানছেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের পুলিশকর্তারা। এত বাজি লাগে কীসে? সংশ্লিষ্ট লোকজনের বক্তব্য, পুজো-পার্বণ তো আছেই, বছরভর বিয়ে-সহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও শব্দবাজির দাপট থাকে। বড়দিন থেকে ইংরেজির নতুন বছর পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠানে বাজি ফাটানোর রেওয়াজ রয়েছে। এ বছর কালীপুজোর আগে আসানসোল-সহ বিভিন্ন জায়গায় টানা অভিযান চালিয়ে প্রচুর শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। তার পরেও, ছটপুজোর ভোরে বরাকর নদে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ। পুলিশেরও দাবি, এই বাজির আমদানি হচ্ছে ঝাড়খণ্ড থেকেই।
আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুধীরকুমার নীলকান্তম বলেন, ‘‘শিল্পাঞ্চলের যে সব বাজারে বাজি বিক্রির সম্ভাবনা বেশি থাকে, সেখানে পুলিশ ধারাবাহিক অভিযান চালায়। বাজি অনুপ্রবেশের উৎসস্থল খোঁজার চেষ্টা চলছে। সীমানায় নজর আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy