Advertisement
E-Paper

খন্দে মুনওয়াক! খোঁচা দিয়েও চুপ শিল্পী

বাদল ভাইরাস। এই টুইটার হ্যান্ডল থেকেই ‘মুনওয়াক’-এর ভিডিয়ো দিয়ে বেঙ্গালুরু পুরসভার কমিশনারকে ট্যাগ করেছিলেন শিল্পী।

খন্দ-শিল্পী: বাদল ননজুনদাস্বামী।

খন্দ-শিল্পী: বাদল ননজুনদাস্বামী।

স্নেহাংশু অধিকারী

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:১৪
Share
Save

বছর চারেক আগে রাস্তায় কুমির ছেড়েছিলেন। গত রবিবার সেই বেঙ্গালুরুতেই চাঁদ নামালেন ‘খন্দ শিল্পী’ বাদল ননজুনদাস্বামী। মুনওয়াকে মশগুল মহাকাশচারী, আর পাশ দিয়ে ঢিমে তালে বেরিয়ে যাচ্ছে হলুদ-সবুজ অটো, গাড়ি। মিনিটখানেকের ভিডিয়ো নিমেষে ভাইরাল। আগামী শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে নামছে চন্দ্রযান-২। তার ঠিক আগে বেহাল নাগরিক জীবন দেখানোটা কি খোঁচা ছিল? ফোনে একটু থামলেন বাদল। পরে লাজুক হেসে বললেন, ‘‘তা হলে তো আমের ছবি এঁকে নীচে লিখে দিতে হয়— আম।’’ ফোনের ও-পারে বিস্তর গাড়ির শব্দ। বোঝা গেল, শিল্পী রাস্তায়। সেখান থেকেই ইনস্টাগ্রামে ভিডিয়ো-বার্তা দিলেন, আজই হিরো হাল্লি ক্রস বাসস্টপের সেই রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু করে দিয়েছে বেঙ্গালুরু পুরসভা।

বাদল ভাইরাস। এই টুইটার হ্যান্ডল থেকেই ‘মুনওয়াক’-এর ভিডিয়ো দিয়ে বেঙ্গালুরু পুরসভার কমিশনারকে ট্যাগ করেছিলেন শিল্পী। আজ সারাই শুরু হওয়ার পরে পুরসভাকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি। এখন জালন্ধর, এমনকি কোস্টারিকা থেকেও তাঁর প্রোফাইলে মেসেজ আসছে— ‘‘এমন শুটিং এখানেও করুন, যদি কাজ হয়!’’

২০১৭-র অক্টোবর। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেছিলেন, ১৫ দিনের মধ্যে বেঙ্গালুরুর ১৫ হাজার খানাখন্দ সারাই হয়ে যাবে। বাদল সে বার এক কন্নড় অভিনেত্রীকে রূপকথার ‘মৎস্যকন্যা’ সাজিয়ে নামিয়েছিলেন ভাঙাচোরা রাস্তায়।

বাদল ননজুনদাস্বামীর ভাইরাল ভিডিয়োর পর মঙ্গলবারই রাস্তা সারাই শুরু করেছে পুরসভা।

খোলামুখ ম্যানহোল, খন্দে ভরা রাস্তাই তাঁর ক্যানভাস। কখনও খোঁচা, তো কখনও নীরব প্রতিবাদ। শিল্পী নিজে অবশ্য বললেন, ‘‘প্রতিবাদ নয়। আমি শুধু বাস্তবটা দেখিয়ে পুরসভার সঙ্গেই শহরের হাল ফেরাতে চাইছি। যেমন সাংবাদিকেরা খবর করেন।’’

২০১৭-তেই রাজস্থান হাইকোর্টের বিচারপতি মহেশচন্দ্র শর্মা গরুকে জাতীয় পশুর তকমা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘ময়ূর আজীবন ব্রহ্মচারী। তার চোখের জলেই ময়ূরীর সন্তান হয়।’’ ফের রাস্তায় নামেন বাদল। খন্দে জমা জল— শিল্পী আঁকলেন, ময়ূর কাঁদছে। ফেসবুকে কিচ্ছুটি বলেননি সে-বার। একটা ‘স্মাইলি’ দিয়েছিলেন শুধু।

এই বেঙ্গালুরুতেই এলোপাথাড়ি ডিভাইডারে ধাক্কা খেয়ে বাইক থেকে পড়ে গিয়েছিলেন বাদল। মাথায় চোট পান। পরের দিনই কিন্তু ফিরে এসে ওই ডিভাইডারগুলো তেরঙ্গায় রাঙিয়ে দিয়ে যান। দিন দুয়েকের মধ্যে ম্যাজিকের মতো কাজও হয়। বছর পাঁচেক আগে সেটা ছিল ১৫ অগস্টের সপ্তাহ। এখন অবশ্য সেই ‘দুঃসাহস’ দেখানোর আগে দশ বার ভাবতে হবে বলে জানালেন বাদল। ‘দেশদ্রোহী’-র তকমা না-পড়ে যায়!

বাদল এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই। জন্ম মাইসুরুতে। চার বছর বয়সে পিতৃহারা। জানালেন, পাঁচ ভাইবোনের সংসার একা টেনেছেন মা। কখনও মাদুর-ঝাঁটা বানিয়ে বিক্রি করে, তো কখনও ঘুঁটে বেচে। কষ্ট করে হলেও আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়াটাই জীবনের মোড় ঘুরিয়েছে বলে দাবি বাদলের। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণপদক পাওয়া শিল্পী প্রথমে এক অ্যাড এজেন্সিতে চাকরি নেন। এখন ফ্রিল্যান্সার। বাদল কাজ করেছেন বেশ কিছু কন্নড় ছবির শিল্প নির্দেশক হিসেবে। আঁকা চালিয়ে যেতে এক সময় ভিডিয়ো পার্লারে কাজ করেছেন, ছোট গুমটি ভাড়া নিয়ে ওয়ার্কশপ চালিয়েছেন। এখন তাঁরই নামে তৈরি আর্ট স্পেসে ছবির প্রদর্শনী করছেন তরুণ শিল্পীরা।

রাস্তায়-রাস্তায় প্রায় ৫০টি কাজ করেছেন বাদল। খরচ পকেট থেকেই— ৫০০ থেকে বড়জোর আট হাজার। এর মধ্যে উত্তর বেঙ্গালুরুর রাস্তায় ১২ ফুটের ওই ‘কুমির’ প্রকল্পটাই নিজের সব চেয়ে প্রিয় বলে মানলেন বাদল। সে বারেও এক মাসের পুরনো খন্দ সারাই হয়েছিল এক দিনে। নজরে পড়েছিলেন মহীন্দ্রা গোষ্ঠীর কর্ণধার আনন্দ মহীন্দ্রার। পেয়েছিলেন সাহায্যের আশ্বাসও।

মুনওয়াকের জেরে আজ ফের শিরোনামে ‘বাদল ভাইরাস।’ শুধুই কি ট্রেন্ড ফলো করে এই ‘চন্দ্রাভিযান’? কটাক্ষের বিষয়টা এড়িয়ে গিয়ে উত্তরে শিল্পী শুধু বললেন, ‘‘রাতের চাঁদ দেখলে আমারও ইচ্ছে হয়, যাই।’’

Baadal Nanjundaswamy Bengaluru Viral Video

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}