অযোধ্যায় চলছে রুট মার্চ। ছবি: পিটিআই
এক সপ্তাহের মধ্যেই অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা হতে পারে। রায়ের পরে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিল কেন্দ্র। পাশাপাশি উত্তরপ্রদেশে আগেভাগেই পাঠিয়ে রাখল চার হাজার আধাসেনা। অন্য দিকে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন সূত্রে খবর, চার স্তরীয় নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে শুরু হয়েছে আগাম প্রস্তুতি। এক দিকে যেমন অভেদ্য করে তোলা হচ্ছে অযোধ্যাকে, তেমনই কড়া নজরদারি শুরু হয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ, জনসংযোগ তৈরির মতো একাধিক পদক্ষেপ করছে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ আগেই জানিয়েছিলেন অবসরের আগেই তিনি অযোধ্যার বিতর্কিত জমি মামলার রায় দিয়ে যেতে চান। তার জন্য প্রতিদিন শুনানির ব্যবস্থা হয়েছিল। টানা সেই শুনানির পর রায় সংরক্ষিত রেখেছেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। রঞ্জন গগৈ অবসর নেবেন ১৭ নভেম্বর। তার আগেই অযোধ্যা রায় হওয়ার কথা। অর্থাৎ মাঝে আর সপ্তাহখানেক সময়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার আর্জি জানিয়েছেন, রায় যা-ই হোক, তা যেন মেনে নেওয়া হয়। আবার মুসলিম সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেও একই বার্তা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও ঝুঁকি নিতে নারাজ কেন্দ্র ও রাজ্য।
কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবারই ৪০ কোম্পানি বা প্রায় চার হাজার আধাসেনা উত্তরপ্রদেশে পাঠানোর কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। উত্তরপ্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেবেন তাঁরা। সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে কেন্দ্র মন্ত্রক বলেছে, উত্তজেনাপ্রবণ এলাকায় বাড়তি নজরদারি চালাতে হবে। আগে থেকেই স্পর্শকাতর এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করার কথাও বলা হয়েছে ওই নির্দেশিকায়।
কিন্তু কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা সব রাজ্যের প্রতি। আলাদা করে অযোধ্যা বা উত্তরপ্রদেশের প্রতি কোনও বার্তা নেই। কিন্তু যোগীর রাজ্যের প্রশাসন সূত্রে খবর, কার্যত দুর্গে পরিণত করা হচ্ছে অযোধ্যাকে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, চার স্তরের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। যাতে কোনও একটি স্তর ব্যর্থ হলে কাজ করবে অন্য পরিকল্পনা। এ ছাড়া অযোধ্যাকেন্দ্রিক এক রকম এবং রাজ্যের অন্য এলাকার জন্য আলাদা বন্দোবস্ত করা হচ্ছে বলেও সূত্রের খবর। নেতৃত্বে থাকছেন অতিরিক্ত ডিজি পদমর্যদার একজন অফিসার। এই পুরো কর্মকাণ্ড অযোধ্যাকেন্দ্রিক হলেও কার্যত গোটা রাজ্যকেই নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে।
কেমন সেই ব্যবস্থা? উত্তরপ্রদেশ প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা জানিয়েছেন, অযোধ্যা সংক্রান্ত গোটা নিরাপত্তার বিষয় তদারকির জন্য এক জন অতিরিক্ত ডিজি পদমর্যাদার অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি হানা, জাতি-হিংসা, গণবিক্ষোভের মতো উদ্ভূত পরিস্থিতির আঁচ করে তার মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এখন থেকেই অযোধ্যায় এক জায়গায় চার জনের বেশি জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সেই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত।
আরও পডু়ন: গরু নিয়ে সটান গোল্ডলোনের অফিসে! দিতেই হবে ঋণ, নাছোড় ডানকুনির কৃষক
অযোধ্যা শহর এবং অযোধ্যা জেলাকে ঘিরে রয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা। জেলাকে মোট চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্পর্শকাতরতা অনুযায়ী লাল, হলুদ, সবুজ ও নীল— এই চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, এই লাল চিহ্নিত এলাকাগুলি মূলত অযোধ্যা শহর এবং তার লাগোয়া এলাকা। হলুদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মূল অযোধ্যারপাঁচ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকা। এই দুই এলাকায় কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী নিরাপত্তায় থাকবে। সবুজ ও নীল এলাকায় নিরাপত্তা দেবে রাজ্য পুলিশ। আর অযোধ্যার ১৪ মাইল ব্যাসার্ধ এলাকা এবং নীল হিসেবে চিহ্নিত অযোধ্যার লাগোয়া জেলাগুলি।
সোশ্যাল মিডিয়াতেও কড়া নজরদারি শুরু করে দিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। সূত্রের খবর, উস্কানিমূলক যে কোনও ধরনের পোস্টের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলা দায়ের হবে ন্যাশনাল সিকিওরিটি অ্যাক্টে। অযোধ্যা জেলা প্রশাসনের নির্দেশমতো রায় সম্পর্কিত কোনও লিঙ্ক বা মন্তব্য শেয়ার করলেও নিরাপত্তাবাহিনীর স্ক্যানারে চলে আসবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পডু়ন: ধেয়ে আসছে ভয়ঙ্কর ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উত্তাল হবে সমুদ্র, সতর্ক প্রশাসন
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের ডিজি ও পি সিংহ জানিয়েছেন, অযোধ্যা রায় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমরা রুট মার্চ শুরু করে দিয়েছি। সব জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় শান্তি কমিটিগুলির সঙ্গে নিরন্তর বৈঠক করার জন্য। গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে চূড়ান্ত সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও রকমের উস্কানি বা প্ররোচনামূলক কিছু নজরে এলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
কিন্তু খাতায় কলমে এই বন্দোবস্ত বাস্তবে কতটা কাজ করবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে জনসংযোগের প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এর জন্য আলাদা একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করে ১৬০০ গ্রামের ১৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রতিনিয়ত এলাকার রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন। সেই মতো নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া জেলায় জেলায় প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছেন পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরা। চলছে রুট মার্চও।
অযোধ্যা বিতর্ক নিয়ে কতটা জানেন, ঝালিয়ে নিন আপনার জ্ঞানভাণ্ডার
এছাড়াও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ কর্মীদের থাকার জন্য ৭০০ সরকারি, উত্তরপ্রদেশ বোর্ডের ৫০টি এবং ২৫টি বেসরকারি স্কুলকে ব্যবহারের জন্য আগে থেকেই সেগুলি নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া গণবিক্ষোভ বা মিছিল বেরোলে প্রচুর লোকজনকে সতর্কতামূলক গ্রেফতারি করা হবে। তাঁদের জন্যও স্কুলে থাকার বন্দোবস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য পুলিশের। সেই সব স্কুলগুলিও চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে আগে থেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy