কারও বুকের সঙ্গে বাঁধা! কারও আবার হেলমেটে আটকানো! সেই সব ছোট ছোট ক্যামেরা দিয়েই হত্যাকাণ্ড পুরো ধরে রাখতে চেয়েছিল জঙ্গিরা! হামলা চালানোর পরই গা ঢাকা দেয় তারা। গোয়েন্দাদের অনুমান, পাঁচ থেকে ছ’জন জঙ্গি মঙ্গলবার অনন্তনাগের পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যালীলা চালায়। এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত আরও অনেকে।
মঙ্গলবারের হামলা আচমকা নয় বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। সূত্রের খবর, বড় পরিকল্পনা করেই জঙ্গিরা হামলা চালায়। এখনও পর্যন্ত হামলার সঙ্গে যুক্ত থাকার সন্দেহে চার জন জঙ্গির ছবি প্রকাশ করেছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। তারা হল— আদিল গুরু, আসিফ ফুজি, সুলেমান শাহ এবং আবু তালহা! গোয়েন্দাদের দাবি, আদিলই গোটা ‘অপারেশন’ পরিচালনা করে। তবে ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে উঠে আসছে সইফুল্লা খালিদ ওরফে সইফুল্লা কাসুরির নাম। তিনি পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার সঙ্গেও যুক্ত। তবে মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় দায় স্বীকার করেছে লশকরের ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ)।
সূত্রের খবর, পর্যটকদের উপর হামলা ঘটনায় পাকিস্তানি এবং স্থানীয় জঙ্গিরা জড়িত। জঙ্গিরা কেন বৈসরন উপত্যকা বেছে নিল? তদন্তকারীদের মতে, ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। পহেলগাঁওয়ের মূল শহর থেকে সাড়ে ছয় কিলোমিটার দূরে। সেই দুর্গম এলাকায় যাওয়া উপায় হয় পায়ে হেঁটে, নয়তো ঘোড়ায় চেপে!
অনেকের দাবি, গুলি চালানোর আগে পর্যটকদের পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। তার পরই গুলি চালিয়ে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। জঙ্গিদের সকলের হাতেই ছিল একে ৪৭। শুধু তা-ই নয়, এই হত্যাকাণ্ডে জঙ্গিরা স্নাইপারও ব্যবহার করেছিল। কাউকে কাছ থেকে, আবার কাউকে দূর থেকে গুলি করা হয়। দুর্গম এলাকা হওয়ায় সাহায্যের জন্য তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারেনি নিরাপত্তাবাহিনী। অনেকের মৃত্যু অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হয়েছে বলেও জানা যায়।
আরও পড়ুন:
সূত্রের আরও খবর, হামলার আগে জঙ্গিরা ঘন জঙ্গলে অস্থায়ী আস্তানা তৈরি করেছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, স্থানীয় জঙ্গি এবং স্লিপার এজেন্টদের সহয়তায় হামলাকারীরা কাশ্মীরে বার বার নিজেদের জায়গা বদল করে। ইতিমধ্যেই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। ঘটনাস্থল থেকে গুলির খোল এবং মাটির নমুনা সংগ্রহ করেছে।
উল্লেখ্য, মুম্বইয়ে ২৬/১১ সন্ত্রাসের চক্রী হাফিজ় মহম্মদ সঈদ, জাকিউর রহমান লকভিরা ‘দ্য ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স’ (এফএএফটি)-এর নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ‘ছায়া সংগঠন’ গড়ে কাশ্মীরে নাশকতার ধারা বজায় রাখতে সক্রিয় হয়েছিলেন সে সময়। আর সেই সূত্রেই গড়ে উঠেছিল তেহরিক লবাইক ইয়া মুসলিম (টিএলএম), ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) -এর মতো জঙ্গিগোষ্ঠী। ২০১৯ সালে টিআরএফ জঙ্গিগোষ্ঠীর জন্ম। তারাই ‘বডি ক্যাম’-এর ব্যবহার শুরু করেছিল। মঙ্গলবারের হামলাতেও সেই প্রযুক্তির ব্যবহার করেছিল জঙ্গিরা।