পঞ্জাবের অর্থনীতি তো বাদল পরিবারেরই হাতে। কথাটা মিথ্যে নয়। পঞ্জাবের প্রাচীন প্রবাদ, এ রাজ্যের সব ব্যবসারই লাগাম আসলে বাদল পরিবারের কারও না কারও হাতে।
ভোটদানের পরে পঞ্জাব রাজনীতির ‘পিতামহ ভীষ্ম’ প্রকাশ সিংহ বাদলের (বাঁ দিকে) সঙ্গে ছেলে সুখবীর সিংহ এবং পুত্রবধূ হরসিমরত কউর। রবিবার ভাতিন্ডায়। ছবি: পিটিআই।
খাতায়-কলমে বয়স ৯৪ বছর। লোকে বলে, আসলে প্রকাশ সিংহ বাদলের বয়সও নাকি শিরোমণি অকালি দলের মতো ১০০ পেরিয়েছে।
পুত্রবধূ হরসিমরত কউর হাসেন। বলছেন, ‘‘আজ থেকে ৯০-৯৫ বছর আগে পঞ্জাবের গ্রামে জন্মের দিনক্ষণের হিসেব কে আর ঠিকঠাক লিখে রাখত! এই বয়সেও উনি যে ভোটে লড়ছেন, এটাই আসল কথা।’’
পঞ্জাব রাজনীতির ‘পিতামহ ভীষ্ম’ প্রকাশ সিংহ বাদল এ বার ভাতিন্ডার লাম্বী আসন থেকে ভোটে লড়ছেন। শ্বশুরমশাইয়ের হয়ে প্রচার করছেন ভাতিন্ডার সাংসদ হরসিমরত। প্রচারে এই নবতিপর রাজনীতিকের নাতি-নাতনিরাও। হরসিমরতের কথায়, ‘‘ওঁর হয়ে কারও প্রচারের দরকার নেই। উনি দাঁড়ানো মানেই জয়।’’
কথাটা মিথ্যে নয়। ‘সিনিয়র বাদল’ ভোটের ময়দানে এই নিয়ে ১৩ বার। মাত্র একবারই বিধানসভা ভোটে হেরেছেন। জিতেছেন ১১ বার। পাঁচ বার পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। চণ্ডীগড়ের গদিতে শেষ ইনিংস ২০০৭ থেকে ২০১৭— ১০ বছরের। কিন্তু তার পর থেকেই অকালি দলের রেখচিত্র নিম্নমুখী। পাঁচ বছর আগে অকালি দল শুধু ক্ষমতাই হারায়নি। কংগ্রেস, আম আদমি পার্টির পরে তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছিল। ১১৭টি আসনের বিধানসভায় জুটেছিল মাত্র ৮টি আসন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে প্রকাশ সিংহ বাদলের পুত্র ‘জুনিয়র বাদল’ সুখবীর ও হরসিমরত ছাড়া আর কেউ জিততে পারেননি।
কংগ্রেসের পরেই দেশের সব চেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল শিরোমণি অকালি দল। গত ডিসেম্বরে ১০০ বছর পূর্ণ করে ১০১-এ পা দিয়েছে। প্রকাশ সিংহ বাদল ৯৪-এ নটআউট। কিন্তু তাঁর অকালি দল কি সেঞ্চুরি করে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরবে?
চণ্ডীগড়ের আনাচে-কানাচে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলাদের সান্ধ্য আড্ডায় এই প্রশ্নটা তুললে একটাই উত্তর মেলে। তা হল, ক্ষমতার গদিতে না থাকলে কী হয়েছে!
পঞ্জাবের অর্থনীতি তো বাদল পরিবারেরই হাতে। কথাটা মিথ্যে নয়। পঞ্জাবের প্রাচীন প্রবাদ, এ রাজ্যের সব ব্যবসারই লাগাম আসলে বাদল পরিবারের কারও না কারও হাতে। মদ থেকে পাথর খোদাই, কেবল টিভি থেকে বেসরকারি বাস পরিষেবা, সংবাদমাধ্যম থেকে আবাসন—সব ব্যবসাতেই ‘জুনিয়র বাদল’ সুখবীর সিংহ বাদলের আঙুলের ছাপ মিলবে। পঞ্জাবের কংগ্রেস নেতা ও পি কনৌজিয়া বলেন, ‘‘এত দিন অকালি দল গুরুদ্বারা প্রবন্ধক কমিটিতে প্রভাবের সুবাদে গ্রামের ধর্মপ্রাণ শিখদের ভোট কুড়িয়েছে। কিন্তু মানুষ বাদল পরিবারের দুর্নীতি টের পেয়েছেন। তাই ওদের সমর্থন তলানিতে।’’ কংগ্রেস নেতারা মানছেন, অকালি দল জমি হারানোর ফলেই পঞ্জাবে আম আদমি পার্টির উত্থান।
বিজেপির সব চেয়ে পুরনো শরিক অকালি দল কৃষি আইনের বিরোধিতা করে এনডিএ ছাড়ে। তাতেও অকালি দল সমস্যায় পড়েছে। কারণ, পঞ্জাবের শহরের হিন্দু ব্যবসায়ীদের ভোট টানতে অকালিরা বিজেপির উপরে ভরসা করত। এ বার বিজেপি-হীন অকালি দল ‘পন্থ ও পঞ্জাবিয়ত’-এর কথা বলে হিন্দু ভোট টানতে চাইছে। বহু হিন্দু নেতাকে প্রার্থী করেছে। সেই সঙ্গে দলিত ভোটের লক্ষ্যে মায়াবতীর বিএসপি-র সঙ্গে জোট করেছে। অকালি দল ভোটে জিতলে ‘সিনিয়র বাদল’ প্রকাশ সিংহ কৃতিত্ব পান। হারলে ‘জুনিয়র বাদল’ সুখবীরের উপরে দায় চাপে। এ বারও তাই হবে জেনেও সুখবীরের আশা একটাই। ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে অকালি দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
চণ্ডীগড়ের সেক্টর ২৮-এ মধ্য মার্গে অকালি দলের সদর দফতরে অবশ্য কেউই স্বস্তিতে নেই। নেতারা মানছেন, অস্তিত্বের সঙ্কট না থাকলে কি আর ৯৪ বছর বয়সে প্রকাশ সিংহ বাদলকে ভোটে নামতে হয়? সাংসদ হয়েও পুত্র সুখবীরকেও জালালাবাদ থেকে ভোটে লড়তে হয়? সেঞ্চুরি পার করেও নটআউট থাকতে ত্রিশঙ্কুই শিরোমণি অকালির আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy