Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Tripura Assembly Election 2023

বৃহস্পতিতে ফল তিন রাজ্যে, ত্রিপুরায় জয় আর ত্রিশঙ্কুর মাঝে বিজেপি, তৃণমূলের চোখ মেঘালয়ে

ত্রিপুরায় জনজাতি দল তিপ্রা মথাও ভোটে ভাল ফল করতে পারে বলে সবক’টি বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস। কয়েকটি সমীক্ষার বার্তা, ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় ‘নির্ণায়ক’ হয়ে উঠতে পারে তারা।

Assembly Election 2023: Counting of votes in Tripura, Meghalaya and Nagaland on 2 March

রাত পোহালেই ভোটগণনা ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ২১:০৬
Share: Save:

নাগাল্যান্ডে বিজেপি জোটের জয় নিশ্চিত। ত্রিপুরাতেও ক্ষমতা দখলের দৌড়ে এগিয়ে তারা। মেঘালয় ত্রিশঙ্কু। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের তিন রাজ্যে বুথফেরত সমীক্ষা অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে! আর পূর্বাভাস সঙ্গী করেই বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হচ্ছে ভোটগণনা। ৩টি রাজ্যেই বিধানসভার আসন ৬০। তবে মেঘালয়ে প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ১টি আসনে ভোট স্থগিত হয়েছে। নাগাল্যান্ডে একটি বিধানসভা কেন্দ্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গিয়েছে বিজেপি।

ইতিহাস বলছে, অতীতে ভারতে অনেক ভোটেই জনমত সমীক্ষা বা বুথফেরত সমীক্ষার ফল মেলেনি। আবার মিলে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। ভোট পণ্ডিতদের একাংশে মতে, এই ধরনের সমীক্ষার ফলের সঙ্গে গড়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত ফারাক হতে পারে বাস্তবের। ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ডের মতো ছোট রাজ্যের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটলে ফলের বড়সড় হেরফেরের সম্ভবনা থাকে।

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার (এ বার ভোটে লড়ছেন না), কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, তিপ্রা প্রধান প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মন। ফাইল চিত্র।

মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার (এ বার ভোটে লড়ছেন না), কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন, তিপ্রা প্রধান প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মন। ফাইল চিত্র।

২৫ বছরের বাম শাসনের ইতি টেনে ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে ত্রিপুরায় ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি এবং জনজাতি দল আইপিএফটির জোট। এর পর পঞ্চায়েত এবং পুরভোটে একতরফা জয় পেয়েছিল পদ্ম-শিবির। কিন্তু গত বছরের জুন মাসে ত্রিপুরার চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ফল ইঙ্গিত দিয়েছিল বিরোধীরা জোট বাঁধলে সমস্যায় পড়তে পারে বিজেপি। এর পর আংশিক বিরোধী ঐক্য হয়েছে। একদা প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসকে ১৩টি এবং নির্দল প্রার্থীকে ১টি আসন ছেড়ে ৪৬টিতে লড়ছে বামেরা। কয়েকটি বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত বাঙালি প্রভাবিত ৪০টি আসনে বিজেপির সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বাম-কংগ্রেস জোটের।

ত্রিপুরার ২০টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে স্বশাসিত জনজাতি পরিষদের (এডিসি) এলাকায়। সেখানে বিজেপি এবং তার সহযোগী জনজাতি দল আইপিএফটির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ত্রিপুরার রাজপরিবারের বংশধর প্রদ্যোতবিক্রম মাণিক্য দেববর্মনের তিপ্রা ইন্ডিজেনাস প্রোগ্রেসিভ রিজিয়োনাল অ্যালায়েন্স বা তিপ্রা মথা। ২০২১ সালের গোড়ায় জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার দাবিতে এই দল গড়েছিলেন প্রদ্যোৎ। তিপ্রার জনভিত্তির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায় ২০২১ সালের এপ্রিলে, ত্রিপুরা ট্রাইবাল এরিয়াস অটোনমাস ডিসট্রিক্ট কাউন্সিল (এডিসি) নির্বাচনে। বিভিন্ন আদিবাসী বা জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের নিয়ে তৈরি তিপ্রা মথা, এডিসির ১৮টি আসনে জয়লাভ করে। বাকি ৯টি আসন মিলিত ভাবে পায় বিজেপি এবং তাদের জোট সঙ্গী জনজাতি আইপিএফটি।

ত্রিপুরায় আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে বিজেপি-আইপিএফটি জোট।

ত্রিপুরায় আবার ক্ষমতায় ফিরতে পারে বিজেপি-আইপিএফটি জোট।

এ বার ভোট প্রচারের সময় প্রদ্যোত দাবি করেছেন, কোনও শিবিরই গরিষ্ঠতা পাবে না। তিপ্রা ‘কিং মেকার’ হতে পারে বলেও কয়েকটি বুথফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস। যদিও অন্য কয়েকটি সমীক্ষার দাবি বিজেপি-আইপিএফটি জোট নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পাবে। জনজাতিদের বুবাগ্রা (রাজা) প্রদ্যোৎ ভোটের প্রচারের সময় বলে দিয়েছেন, ‘‘এটাই আমার শেষ ভোট। আপনাদের কাছে আর ভোট চাইতে আসব না।’’ নিজে প্রার্থী না হলেও তাঁর এই ঘোষণা জনজাতি ভাবাবেগে প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে বাঙালি অধ্যুষিত বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন ভোট পণ্ডিতদের একাংশ। মোট ৬০ আসনের বিধানসভায় ২৮টিতে প্রার্থী দিয়ে ত্রিপুরায় লড়তে নেমেছে তৃণমূল। প্রচারে গিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক। ২০২১ সালের নভেম্বরের পুরভোটে আগরতলায় প্রায় ২০ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু গত জুনে চার বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে দলে ভোট অনেকটাই কমে যায়।

এ বারের ভোটে সহযোগী আইপিএফটি-কে ৫টি আসন ছেড়ে ৫৫টিতে লড়ছে বিজেপি। অন্য দিকে, কংগ্রেসকে ১৩ এবং নির্দলকে ১টি আসন ছেড়ে বামেরা ৪৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে। তৃণমূল ২৮ এবং তিপ্রা ৪২টি কেন্দ্রে আলাদা ভাবে লড়ছে। উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা, উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, সিপিএম রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী, বিদায়ী স্পিকার রতন চক্রবর্তী এবং বিদায়ী কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন রয়েছেন।

তবে ত্রিপুরা নয়। তৃণমূলের সবচেয়ে ভাল ফল হতে পারে মেঘালয়ে। অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা জানাচ্ছে, সে রাজ্যে আসন সংখ্যার হিসাবে বিজেপি এবং কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে থাকতে পারে মমতার দল। প্রধান শাসকদল এনপিপির পরেই। প্রতিটি বুথফেরত সমীক্ষাতেই সে রাজ্যে ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস বলছে, ১৯৭৮ সালের বিধানসভা ভোটে মেঘালয়ে ‘অল পার্টি হিল লিডার্স কনফারেন্স’ নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছিল। তার পর থেকে সাড়ে ৪ দশক ওই রাজ্য ভোট পরবর্তী জোটের সরকার দেখেছে। এ বারও তেমন পরিস্থিতি হলে বাংলার পরে দ্বিতীয় রাজ্য হিসাবে ক্ষমতার স্বাদ পেতে পারে তৃণমূল।

ঘটনাচক্রে, বাংলার পরে একমাত্র মেঘালয় থেকেই লোকসভায় সাংসদ পেয়েছে তৃণমূল। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে প্রাক্তন স্পিকার পূর্ণ অ্যাজিটক (পিএ) সাংমা মেঘালয়ের গারো কেন্দ্রে জিতেছিলেন। সে বারের লোকসভা ভোটে দেশে মাত্র দু’টি আসনে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। দ্বিতীয় জন দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, প্রয়াত পূর্ণের ছেলে কনরাড এখন সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দল এনপিপির সঙ্গেই তৃণমূলের মূল লড়াই। পূর্ণের আর এক ছেলে জেমসও বিধানসভা ভোটে লড়ছেন।

২০২১-এর অক্টোবরে ১২ জন কংগ্রেস বিধায়ককে নিয়ে দু’বারের মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মুকুল সাংমা তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। সঙ্গে ছিলেন প্রাক্তন স্পিকার চার্লস পিংরোপের মতো প্রভাবশালী বিধায়ক। তাঁরা দু’জনেই এ বার জোড়াফুল প্রতীকে প্রার্থী। গারো পাহাড় স্বশাসিত পরিষদ এলাকায় প্রভাব রয়েছে মুকুলের। অন্য দিকে, পিংরোপ খাসি জনগোষ্ঠীর প্রভাবশালী নেতা।

মেঘালয়ের বিধানসভা ভোটে ইউডিপি, এইচএসপিডিপি, পিডিএফের মতো নির্দিষ্ট এলাকা এবং জনজাতি উপগোষ্ঠী ভিত্তিক দল রয়েছে। ইতিহাস বলছে, আলাদা ভাবে লড়াই করে কয়েকটি আসনে জেতার পরে তারা ‘হাওয়া বুঝে’ শক্তিশালী দলের পাশে দাঁড়ায়। ২০১৮-র বিধানসভা ভোটে ২১টি আসনে জিতে একক বৃহত্তম দল হয়েও ক্ষমতা দখল করতে পারেনি কংগ্রেস। বিজেপি, ইউডিপির মতো দলের সঙ্গে ভোট পরবর্তী সমঝোতা করে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন ২০টি আসনে জেতা এনপিপির নেতা কনরাড।

ত্রিপুরা কিংবা মেঘালয়ের তুলনায় নাগাল্যান্ডের ভোট অনেকটাই ‘একতরফা’ হতে পারে বলে বুথফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত। সেখানে এনডিপিপি (ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক প্রোগ্রেসিভ পার্টি)-বিজেপি জোটের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। লড়াইয়ে রয়েছে আর এক আঞ্চলিক দল নাগা পিপলস ফ্রন্ট (এনপিএফ) এবং কংগ্রেস, জেডি(ইউ), এনসিপির মতো আঞ্চলিক শক্তি। মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিওর দল এনডিপিপি এবং বিজেপির জোটকে কয়েকটি আসনে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুরহোজ়েলি লিজিয়েৎসুর এনপিএফ বিপাকে ফেলতে পারে বলে কয়েকটি সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy