Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

জলমগ্ন জঙ্গল, গৃহস্থের বিছানায় বাঘিনি!

খানিক এগোতেই চিৎকার, ছোটাছুটি, হল্লা শুরু হয়ে যায়। সেই সঙ্গে চার চাকার ঘ্যাঁচ, হুশ্, প্যাঁ-পোঁ।

বন্যাকবলিত কাজিরাঙার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এক ব্যক্তির শোয়ার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি। বৃহস্পতিবার পশুচিকিৎসক সামসুল আলির তোলা ছবি।

বন্যাকবলিত কাজিরাঙার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এক ব্যক্তির শোয়ার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারটি। বৃহস্পতিবার পশুচিকিৎসক সামসুল আলির তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০১:৪৭
Share: Save:

আস্তানা এখন জলের তলায়। ফলে গত কয়েক দিন ধরে ঘুম ছুটেছে। আশপাশে যেখানে উঁচু জমি ছিল, সব মোষ, গন্ডার, হাতিরা কব্জা করে নিয়েছে। ফুটখানেক জায়গা খালি পেলেও কাড়াকাড়ি চলছে হরিণদের মধ্যে। এ-হেন দুর্বিপাকে কাজিরাঙার বাগরি রেঞ্জের চেনা ডেরা ছেড়ে দু’পেয়েদের রাস্তায় উঠে এসেছিলেন তিনি। গন্তব্য ছিল উল্টো দিকের কার্বি আংলংয়ের পাহাড়।

কিন্তু খানিক এগোতেই চিৎকার, ছোটাছুটি, হল্লা শুরু হয়ে যায়। সেই সঙ্গে চার চাকার ঘ্যাঁচ, হুশ্, প্যাঁ-পোঁ। ক্লান্ত, বিরক্ত শরীরে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারের টিনের বেড়া এক লাফে টপকে ঢুকে পড়লেন লোহালক্কড়ের গুদামে। এ-দিক সে-দিক তাকিয়ে সোজা চৌকিদারের ফুলকাটা চাদরে ঢাকা খাটের উপরে।

বাইরের ঘরে তখন দোকান সামলাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলাম। আশপাশের মানুষের চিৎকার শুনে শোয়ার ঘরে উঁকি মেরে দেখেন বিছানায় বাঘ! থুড়ি, বাঘিনি।

সকাল সাড়ে ৮টায় বাঘিনির জঙ্গল থেকে বেরোনো, ৯টায় রফিকুলের ঘরে শুতে যাওয়া থেকে শুরু করে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজিরাঙার বাগরি রেঞ্জের হারমুতি এলাকার পুলিশ, বনকর্মী, পশু চিকিৎসকের দল তীব্র উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর তিনি ভিতরে ঘুমোলেন, কখনও উৎসুক জনতার দিকে তাকিয়ে ধমক দিলেন, কখনও কব্জির উপরে থুতনি রেখে বসে থাকলেন। মানুষের বিছানার আরাম ছেড়ে সন্ধ্যায় জঙ্গলমুখী হয়েছিলেন বটে। কিন্তু জঙ্গলে ঢোকার আগেই রাস্তার ধারের আর একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন তিনি। আপাতত তাঁকে বার করার চেষ্টা চলছে।

কাজিরাঙার উদ্যান অধিকর্তা পি শিবকুমার জানান, এমন ক্ষেত্রে বাঘকে নিরাপদে জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার পথ করে দেওয়াই দরকার। সে নিজেও ক্লান্ত, সন্ত্রস্ত থাকে। তাই হাঙ্গামা চায় না। এ দিন বিকেলের পর থেকে জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাঘিনি বেরিয়ে এসে জঙ্গলের পথ ধরতে সকলে হাঁপ ছাড়েন। কিন্তু বাঘিনি মত ও পথ বদল করায় সেই আনন্দও স্থায়ী হয়নি। এখন চলছে অপেক্ষা। সঙ্গে স্থানীয় মানুষের বিক্ষোভ।

কাজিরাঙা পশু উদ্ধার কেন্দ্রের রথীন বর্মণের কথায়, বন্যার সময় বন্যপ্রাণীরা আশ্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে থাকে। মানুষকে ধৈর্য রাখতে হবে। তাকে ঘুম না-পাড়ানোয় তারা এখন বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাঘটিকে ঘুম পাড়ানোই শেষ উপায়। গুলি ছোড়ার পরে ২০ মিনিট দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তাতে বাঘিনিটি আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠতে পারে। মানুষকে আক্রমণও করতে পারে। অতীতে কাজিরাঙায় ঘুমপাড়ানি গুলি ছোড়া বাঘকে শেষ পর্যন্ত গুলি করে মারতেও হয়েছে।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

অন্য বিষয়গুলি:

Assam Flood Tiger Assam Flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy