ছবি: পিটিআই।
ধস নামছে কি সমর্থনের ভিতে! অসমের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কথায় যেন সেই দুশ্চিন্তার ছায়া দেখা গেল আজ। নববর্ষের সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়ের সময় রাজ্যবাসীর উদ্দেশে তাঁর আর্তি, ‘‘গত সাড়ে তিন বছরে একটিও অসম-বিরোধী কাজ করিনি। আজ মিথ্যে প্রচারের জেরে আপনারা আমাকে একঘরে করে দিলে, আমি যাব কোথায়?’’ সঙ্গে দিলেন আশ্বাস, ‘‘সিএএ হোক বা এনআরসি হোক, কিংবা অসম চুক্তি— আমি থাকতে অসমের ভূমিপুত্রদের কোনও ক্ষতি সম্ভব নয়।’’
কিন্তু অসম চুক্তিতে অটল থাকলে তার ভিত্তিবর্ষকেও মানতে হয়। সিএএ-তে যা মানা হচ্ছে না। দু’টোকে এক সঙ্গে সমর্থন করার ফাঁকিটা তুলে ধরে তাঁকে নিশানা করছেন আন্দোলনকারীরা। গত এক মাস লাগাতার আন্দোলন-বিক্ষোভে রাজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। থমকে যায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ। বেশ কয়েক দিন কার্যত গৃহবন্দি ছিলেন মন্ত্রী-বিধায়কদের অনেকে।
শিল্পী সমাজের নেতা জুবিন গর্গ অবশ্য এ দিনও জানিয়েছেন, আন্দোলন চলবে। আসুর সঙ্গে বসে পরের কর্মসূচি ঠিক হবে। ৫ জানুায়রি গুয়াহাটিতে ১০০ ঢোল নিয়ে প্রতিবাদী মিছিল বেরোবে। বিজেপি সরকারকে তুঘলকি শাসনের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। তাঁর মতে, বিজেপি, কংগ্রেস, অগপ কারও উপরে মানুষের বিশ্বাস নেই। তাই প্রয়োজনে বিকল্প তৈরি করতে হবে। আসু উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দিল্লি-দিসপুর ভোটের স্বার্থে বাংলাদেশিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবেই। মানুষের মত নিয়ে সংগ্রাম চলবে।’’
আরও পড়ুন: গোয়ালে বেড়েছে গরু-বাছুর, সম্পত্তি নয়, জানালেন নীতীশ কুমার
বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে সরকার খোয়াচ্ছে বিজেপি— সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিরোধী শিবিরের নেতা এমনও বলছেন, ‘‘শুধু সর্বানন্দ নয়, গোটা বিজেপিরই এখন শনির দশা।’’ এই পরিস্থিতিতে ভূমিপূত্রদের সমর্থন ধরে রাখতে সর্বানন্দ মরিয়া। তাঁর বক্তব্য, অসমে সিএএ কী ভাবে রূপায়ণ করা হবে— তা নিয়ে কেন্দ্রকে সুপারিশ ও পরামর্শ জমা দেওয়া হয়েছে। অসমের কোনও ক্ষতি হবে না। রাজ্যের জমি ও ভাষা সুরক্ষিত থাকবে। সামান্য সংখ্যক মানুষই সিএএ-র ভিত্তিতে আবেদন করবেন। শেষ পর্যন্ত যাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন, তাদের সংখ্যাটা এতই কম হবে যে অসমীয় ভাষা-সংস্কৃতিতে তার প্রভাব পড়বে না। আন্দোলনে সবচেয়ে সক্রিয় ছাত্রসমাজ। ছাত্রদের প্রতি তাঁর অনুরোধ, প্রতিযোগিতার বাজার। পড়ুয়াদের পড়া ও পরীক্ষায় মনোযোগী হতে হবে। সর্বানন্দের কথায়, ‘‘আমার উপরে মানুষের অনেক আশা। কিন্তু আমাকে মানুষের কাছে খামোকা অপরাধী সাজানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে আমি অসমকে বেচে দিচ্ছি!’’
সিএএ-বিরোধী আন্দোলনের মুখ আসু, এজেওয়াইসিপি, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের হাত মিলিয়ে নতুন অসম গড়ার ডাক দিয়েছেন সর্বানন্দ। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘মিথ্যা প্রচারে মানুষকে ভুল বুঝিয়ে যে আন্দোলন চলছে— সেটা অন্যায়। তথ্যভিত্তিক প্রমাণ রয়েছে, কংগ্রেস ও বাম দলগুলি পরিকল্পিত হাঙ্গামায় জড়িত। অসমের মানুষই আমাকে বিধায়ক, সাংসদ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও আজ মুখ্যমন্ত্রী বানিয়েছেন। নিজেও আসু সদস্য ছিলাম। ছাত্র আন্দোলন থেকে এসেছি। তাই মনেপ্রাণে আমিও জাতীয়তাবাদী অসমীয়। যত ক্ষণ আছি, অসমবাসীর ক্ষতি হতে দেব না।’’
সমর্থনের ভিতে ধস ঠেকাতে সর্বানন্দ এ দিন তাঁর সরকারের কাজের বিস্তারিত খতিয়ান ও কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিপুল সহায়তার কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন দেওয়ার অঙ্গীকার পূরণ করতে ৯ লক্ষ ভুতুড়ে ছাত্রছাত্রীর নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার লক্ষ ভুয়ো জব কার্ড, ২ লক্ষ ৬০ হাজার ভুয়ো রেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। এপিএসসি পরীক্ষার কেলেঙ্কারির তদন্ত চলছে। গ্রেফতার হয়েছেন অনেক আমলা-পুলিশকর্তা। সব জনগোষ্ঠীর উন্নতি করা হচ্ছে। ৩৫ বছর পরে তাঁরাই অসম চুক্তির ষষ্ঠ দফা রূপায়ণ করছেন। অসম চুক্তির ফলে তৈরি নুমালিগড় শোধনাগারে প্রথম বাঁশ থেকে তেল তৈরির প্রকল্প হচ্ছে। পরিকাঠামো-প্রসারে খরচ হচ্ছে ২৬০০ কোটি টাকা। ব্রহ্মপুত্র গ্যাস ও পলিমার লিমিটেডকে তেল ও গ্যাস মন্ত্রকের অধীনে এনে তার পুনরুজ্জীবন বাবদ ৪৬০০ কোটি টাকা দিচ্ছে কেন্দ্র। বারাউনি-নুমালিগড় পাইপলাইন পাতা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy