জ্ঞানবাপী মসজিদ। —ফাইল চিত্র।
ইলাহাবাদ হাই কোর্টের অনুমোদন পাওয়ার পরেই শুক্রবার সকাল থেকে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিয়োলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)-এর ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র কাজ শুরু হল। কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে এএসআই-এর পুরাতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা জ্ঞানবাপী চত্বরে ঢুকে কাজ শুরু করেছেন। তবে ‘অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’র তরফে এই প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণ করা হয়নি। মসজিদ কমিটির যুগ্ম সচিব এসএম ইয়াসিন বলেন, ‘‘ইলাহাবাদ হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আমরা বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছি। শীর্ষ আদালতের নির্দেশ দেখে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’
বৃহস্পতিবার সকালে বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদে এএসআই-এর ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র ছাড়পত্র দিয়েছিল ইলাহাবাদ কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রীতিনকর দিবাকরের বেঞ্চ। বিকেলে সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় মসজিদ কমিটি’। মসজিদ চত্বরে কোনও রকম পুরাতাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার উপর স্থগিতাদেশের আর্জি জানানো হয়েছে মসজিদ কমিটির তরফে। প্রসঙ্গত, গত ২১ জুলাই বারাণসী জেলা আদালতের সিনিয়র বিচারক অজয়কুমার বিশ্বেস হিন্দু পক্ষের আবেদন মেনে জ্ঞানবাপী মসজিদের ‘সিল’ করা এলাকার (ওজুখানা এবং ভূগর্ভস্থ জলাধারের তথাকথিত শিবলিঙ্গ) বাইরে এএসআই-কে সমীক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল মসজিদ কমিটি। গত ২৪ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ ৪৮ ঘণ্টার জন্য বারাণসী জেলা আদালতের নির্দেশের (জ্ঞানবাপী চত্বরে পুরাতাত্ত্বিক সমীক্ষা) উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। ওই সময়সীমার মধ্যে এ বিষয়ে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে আবেদন করার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
২৬ জুলাই মসজিদ কমিটির তরফে হাই কোর্টকে জানানো হয়েছিল, সমীক্ষার অনুমতি দিলে প্রাচীন ওই সৌধের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হাই কোর্ট বলেছিল, ‘‘আপনারা যদি এএসআই-এর বিশেষজ্ঞদের আশ্বাসেও আস্থা রাখতে না পারেন, তা হলে কিছুই বলার নেই।’’ শুক্রবার অঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া (জ্ঞানবাপী) মসজিদ কমিটি’র যুগ্ম সচিব ইয়াসিন একই অভিযোগ তুলেছেন। এএসআই বিশেষজ্ঞ দল অবশ্য আদালতকে জানিয়েছে, ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার’-এর সাহায্যে খননের কাজ ছাড়াই সমীক্ষার কাজ চালানো যেতে পারে। তাতে ওই প্রাচীন কাঠামোর কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। প্রসঙ্গত, তথাকথিত ‘শিবলিঙ্গ’-এর বয়স নির্ধারণের জন্য হিন্দু পক্ষের তরফে পরীক্ষার আবেদন জানানো হলেও বারাণসী জেলা আদালত গত বছরের ১৪ অক্টোবর তা নাকচ করে দিয়েছিল। মসজিদ চত্বরের ওজুখানায় শিবলিঙ্গের উপস্থিতি দাবি করে তার বয়স জানার জন্য কার্বন ডেটিং পরীক্ষার যে আবেদন জানানো হয়েছিল, বিচারক বিশ্বেস তা খারিজ করে বলেছিলেন, ‘‘শিবলিঙ্গের অস্তিত্ব খোঁজার জন্য জ্ঞানবাপী চত্বরে কোনও রকম বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের কাজ করা যাবে না।’’ তাঁর সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করা হয় ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। এরই মধ্যে গত মে মাসে হিন্দু মহিলা ভক্তদের তরফে ‘সিল’ করা ওজুখানা এলাকার বাইরে ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার’ আবেদন জানানো হয়েছিল। আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সেই দাবি ২১ জুলাই মেনে নেন বিচারক বিশ্বেস। ইলাহাবাদ হাই কোর্টও বৃহস্পতিবার সকালে সমীক্ষার নির্দেশে ছাড়পত্র দিয়েছিল।
প্রসঙ্গত, জ্ঞানবাপী মসজিদ কমিটির তরফে পাঁচ হিন্দু মহিলার ২০২১ সালের পূজার্চনার আর্জি খারিজ করার জন্য বারাণসী জেলা আদালতে আবেদন জানানো হয়েছিল। মসজিদ কমিটির আইনজীবী অভয় নাথ বারাণসী জেলা আদালতে জানিয়েছিলেন, ১৯৯১ সালের ধর্মীয় উপাসনাস্থল রক্ষা (বিশেষ ব্যবস্থা) আইন এবং ১৯৯৫ সালের সেন্ট্রাল ওয়াকফ আইন অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি হতে পারে না। অন্য দিকে, হিন্দু পক্ষের আইনজীবী বিষ্ণু জৈন এবং হরিশঙ্কর জৈনের দাবি ছিল, ১৯৯১ সালের ওই আইন জ্ঞানবাপীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি জানান, ১৯৪৭ সালের পরেও শৃঙ্গার গৌরীস্থলে পূজার্চনার প্রমাণ রয়েছে।
২০২১ সালের অগস্টে পাঁচ হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপীর ‘মা শৃঙ্গার গৌরী’ (ওজুখানা ও তহখানা) এবং মসজিদের অন্দরের পশ্চিমের দেওয়ালে দেবদেবীর মূর্তির অস্তিত্বের দাবি করে তা পূজার্চনার অনুমতি চেয়ে যে মামলা দায়ের করেছিলেন, তারই প্রেক্ষিতে মসজিদের অন্দরের ভিডিয়ো সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন বারাণসীর নিম্ন আদালতের বিচারক রবিকুমার দিবাকর। এর পরেই হিন্দু পক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর।
সেই সমীক্ষা এবং ভিডিয়োগ্রাফির কাজ শেষ হওয়ার পরে ২০২২ সালের ২০ মে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলার শুনানির দায়িত্ব পায় বারাণসী জেলা আদালত। পর্যবেক্ষক দলের ভিডিয়োগ্রাফির রিপোর্টে মসজিদের ওজুখানার জলাধারে শিবলিঙ্গের মতো আকৃতির যে কাঠামোর খোঁজ মিলেছে, সেটি আসলে ফোয়ারা বলে মুসলিম পক্ষ দাবি করে। অন্য দিকে, হিন্দুপক্ষের তরফে প্রাপ্ত নমুনাগুলির কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আবেদন জানানো হয়েছিল। ‘শিবলিঙ্গ’-এর বয়স নির্ধারণে কার্বন ডেটিং পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে অবশ্য ধন্দ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy