অশোক লাহিড়ী
অশোক লাহিড়ীকে নিজের সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা করে এনেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। বছর দেড়েক পরে কেন্দ্রে পালাবদল। প্রধানমন্ত্রীর মসনদে মনমোহন সিংহ। কিন্তু মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা পদে বদল হল না। থেকে গেলেন বাঙালি অর্থনীতিবিদই। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন এবং অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের জমানাতেও টানা তিন বছর ওই দায়িত্ব সামলেছিলেন হিন্দু স্কুল ও প্রেসিডেন্সির ওই প্রাক্তনী।
রবিবার দুপুরে এই অশোক লাহিড়ীকেই আসন্ন বিধানসভা ভোটে আলিপুরদুয়ারে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করল বিজেপি। প্রশ্ন উঠল, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কারও ‘মুখ’ ঘোষণা না-করলেও, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ কি বকলমে বিজেপির ‘অর্থমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম’ ঘোষণা করে ফেললেন? ঋণের বিপুল বোঝা চেপে থাকা রাজ্যের রাজকোষ সামলাতে কি তাঁর উপরেই আস্থা বিজেপির?
অশোক আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘বহু দিন ধরে ইচ্ছে ছিল, যদি বাংলার জন্য কিছু করতে পারি। তার জন্য কলকাতায় বারবার ফিরে গিয়েছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বোর্ডে থেকেছি, কাজ করেছি বন্ধন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হিসেবে। এ বার বিজেপি যখন প্রার্থী হতে বলল, মনে হল দেখি, যদি কিছু করা যায়। এটিই অনুপ্রেরণা।’’
বিশ্ব ব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কে কাজের অভিজ্ঞতা অশোক লাহিড়ীর ঝুলিতে। পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অন্যতম সদস্যও। যার সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী বছর কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে টাকা ভাগ হবে। সেই সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের রাজকোষ ও অর্থনীতির পরিস্থিতি তাঁর নখদর্পণে। অশোক বলেন, ‘‘অনেক রাজ্যের যে সমস্যা রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে তা আরও গভীর। যেমন, রাজকোষ ঘাটতি, রাজস্বের অভাব, ঋণের বোঝা। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সড়কেরও উন্নতি প্রয়োজন।’’
রাজ্যে শিল্পায়ন প্রসঙ্গে তাঁর মত, ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘বাঙালি শিল্পনিপুণ। ঐতিহ্য রয়েছে। তা সত্ত্বেও কী করে হারিয়ে ফেললাম! শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা মুনাফার জন্য কাজ করবেন। কিন্তু তাতে আমাদেরও লাভ হবে, এমন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।’’
নিজে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য কলকাতা ছেড়েছিলেন। কিন্তু অশোকের মতে, শুধু কলকাতার ছেলেমেয়েরাই বাইরে যাবে, এটা হতে পারে না। অন্য শহর থেকেও যাতে অনেকে কলকাতায় পড়তে, কাজ করতে আসে, তা দেখা দরকার। অশোক বলেন, ‘‘১৯৭১-এর কথা বলছি। তখন পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এক সময়ে কলকাতার যে প্রাধান্য ছিল, বলা হত, সুয়েজের পূর্বে কলকাতা সেরা শহর। বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ কলকাতায় পড়তে এসেছিলেন। পূর্ব ভারতের সবাই কলকাতায় পড়তে আসতেন। সেই উৎকর্ষ ফেরাতে হবে।’’
উত্তর কলকাতায় বড় হয়েছেন। সেখানে ফ্ল্যাট তালা-বন্ধ। কিন্তু প্রার্থী হচ্ছেন উত্তরবঙ্গ থেকে। অশোক বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগ হল, দিনাজপুরে আমার মামা-বাড়ি। তবে আসন ঠিক করেছে দল।’’ আগে কখনও ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তাব পাননি। হাসতে হাসতে বলেন, ‘‘এ বার বোধহয় ভুলে প্রস্তাব দিয়ে দিল!’’
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বুঝিয়ে দিচ্ছে, দলের শীর্ষ স্তরে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা করেই অশোককে প্রার্থী হতে রাজি করানো হয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এলে, রাজ্যের অর্থনীতির হাল শোধরানোর জন্য তাঁর মতো পোক্ত অর্থনীতিবিদ দরকার বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মত। বিশেষত অর্থ কমিশনে অশোকের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলেই বিজেপির ধারণা।
আলিপুরদুয়ারে জিতলে, বিজেপি ক্ষমতায় এলে কি আপনিই অর্থমন্ত্রী?
হাসিমুখে অশোকের জবাব, ‘‘এ তো গাছে কাঁঠাল, গোঁফে তেল!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy