অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
লোকসভা নির্বাচন এগিয়ে আসতেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, আসন্ন অন্তর্বর্তী বাজেট অধিবেশনেই (চলতি লোকসভার শেষ অধিবেশন) ওই আইনের ধারায় যাতে সংসদীয় সিলমোহর পড়ে, তার জন্য তৎপরতা শুরু হয়েছে। সূত্রের মতে, সংসদীয় ছাড়পত্র পাওয়ার পরেই ওই আইনের ‘গেজেট নোটিফিকেশন’ জারি করবে কেন্দ্র। যাতে দ্রুত এই আইনের ধারায় নাগরিকত্ব দেওয়া সম্ভব হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে খবর, অন্তর্বর্তী বাজেট অধিবেশন ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে। সেই সময়ের মধ্যে সিএএ আইনের ধারাগুলি প্রয়োজনীয় সংসদীয় ছাড়পত্র যাতে পায়, তা নিশ্চিত করাটাই মন্ত্রকের লক্ষ্য। পশ্চিমবঙ্গের মতো একাধিক বিরোধী শাসিত রাজ্য ওই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রকে সাহায্য না করার হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে। রাজ্যের ভূমিকা ন্যূনতম করতে অনলাইনে আবেদন করা ও সেই আবেদনের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্র। সূত্রের মতে, নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট তৈরি। কিছু নির্দিষ্ট বিষয় জানিয়ে সেখানে আবেদন করতে হবে। যেহেতু নাগরিকত্ব প্রদান কেন্দ্রের বিষয়, তাই সব তথ্য খতিয়ে দেখে যোগ্য ব্যক্তিকে অনলাইনে নাগরিকত্ব শংসাপত্র মঞ্জুর করবে কেন্দ্র।
যদিও আজ উত্তরবঙ্গে দাঁড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, “সিএএ নিয়ে যা হচ্ছে, তা ভোটের রাজনীতি। যাঁরা রেশন পান কিংবা ভোট দেন— তাঁরা সকলেই এ দেশের নাগরিক। তাঁদের আলাদা করে সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রয়োজন নেই।”
সিএএ প্রশ্নে সাম্প্রতিক বিতর্কের মূলে রয়েছেন কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। গতকাল দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক সভায় তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে সিএএ কার্যকর হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও আজ বলেন, ‘‘ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে সিএএ চালু হয়ে যাবে। ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সরাসরি নাম নথিভুক্তকরণের সুযোগ দেবে। সিএএ-র সঙ্গে এনআরসির সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, এটা নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন, নাগরিকত্ব কাড়ার আইন নয়।’’
বাংলাদেশ থেকে আগত মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষকে গত লোকসভা নির্বাচনের সময়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় ভাল ফল করে বিজেপি। আর ২০১৯ সালে ক্ষমতায় এসেই সিএএ পাশ করিয়ে নেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। ওই আইনানুযায়ী, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো মুসলিম ধর্মাবলম্বী প্রতিবেশী দেশ থেকে যদি সে দেশের কোনও ধর্মীয় সংখ্যালঘু (হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সি ও খ্রিস্টান) ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে এ দেশে আশ্রয় নিতে চান, তাঁদের আশ্রয় দেবে ভারত। কেন ওই তালিকায় মুসলিমদের নাম নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পথে নামে একাধিক সংখ্যালঘু সংগঠন ও বিরোধীরা।
বিক্ষোভের জেরে টানা চার বছরের বেশি সময় ধরে ওই আইন ঠান্ডা ঘরেই পড়ে রয়েছে। যা নিয়ে প্রবল ক্ষোভ রয়েছে মতুয়াদের বড় অংশের। রাজনীতিকদের মতে, বিজেপি নেতারা খুব ভাল করেই জানেন, সিএএ চালু না হওয়ায় মতুয়া ভোট যদি সরে যায়, দল বিপাকে পড়বে।
গোড়া থেকেই সিএএ-বিরোধিতায় সরব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, মূলত হিন্দু ভোটের মেরুকরণের লক্ষ্যেই বিজেপির এই উদ্যোগ। আজ কোচবিহারের জনসভায় মমতা বলেন, ‘‘নতুন করে ‘ক্যা ক্যা’ (সিএএ) করে চিৎকার করছে, এটা ‘ফ্যা ফ্যা’ ভোটের রাজনীতি করার জন্যে। রাজবংশী বন্ধুরা, আপনারা সবাই নাগরিক। উদ্বাস্তু কলোনিকে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছি। সে স্কুলে যায়, রেশন পায়, স্কলারশিপ পায়। নাগরিক না হলে কি পেত না কি ভোট দিতে পারত?’’ আর দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁদের নেতা ( স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ) তিন-চার মাস আগে যা বলেছিলেন, সে কথা রাখেন না। ওঁদের কথার কী গুরুত্ব আছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy