(বাঁ দিকে) নরেন্দ্র মোদী। মুহাম্মদ ইউনূস (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
প্রায় কয়েক মাস ধরে অশান্ত বাংলাদেশ। কোটা সংস্কার নিয়ে ছাত্র আন্দোলন, ব্যাপক সংঘর্ষ, হাসিনার দেশত্যাগের জের ছিল অগস্ট মাস পর্যন্ত। এর পরে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’ গঠিত হলেও অশান্তি কমেনি। এখন আবার ইসকনের সন্ন্যাসী গ্রেফতার নিয়ে উত্তাল বাংলাদেশ। তার প্রভাব পড়েছে ভারতেও। রাজনৈতিক প্রভাব তো বটেই, পর্যটকের সংখ্যায় যে প্রভাব পড়েছে তা-ও ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছিল করোনা। এখন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভ্রমণ, চিকিৎসা বা ব্যবসার কাজে যাঁরা নিয়মিত ভারতে আসেন, তাঁরা সীমান্ত পারাপার কমিয়ে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় অভিবাসন দফতরের হিসাব অনুযায়ী ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে অনেকটাই কমবে ভারতে আগত বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা।
গত দশ বছরের হিসাব বলছে, ভারতে আসা পর্যটকদের সংখ্যায় আমেরিকার পরেই বাংলাদেশ। গত পাঁচ বছরের হিসাব অবশ্য গোলমেলে। ২০১৯ সালে ভারতে আসেন ২৫,৭৭,৭২৭ জন বাংলাদেশি। পরের তিন বছর করোনার ধাক্কায় ওই সংখ্যা অনেকটা কমে যায়। ২০২০ সালে সাড়ে পাঁচ লাখের কম পর্যটক এসেছিলেন ভারতে। ২০২১ সালে আড়াই লাখেরও কম। ২০২৩ সালে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ১২,৭৭,৫৫৭ জন। আবার ২০২৩ সালে পর্যটক সংখ্যা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়ে ২১ লাখের বেশি হয়। কিন্তু চলতি বছরে অগস্ট মাস পর্যন্ত বাংলাদেশি পর্যটকের সংখ্যা ১৩ লাখেও পৌঁছয়নি।
শেষ চার মাসের হিসাব এখনও পর্যন্ত না মিললেও পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছে অগস্ট মাস থেকেই। সাধারণ ভাবে প্রতি মাসে দেড় লাখ থেকে দু’লাখ বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে আসেন। গত জুন মাসে সেটা দু’লাখ টপকে গিয়েছিল। কিন্তু জুলাই থেকেই বাংলাদেশে অস্থিরতার জন্য তা কমতে শুরু করে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার মাস অগস্টে সংখ্যাটা এক লাখেও পৌঁছয়নি। ওই মাসে ভারতে এসেছিলেন ৯৯,১৭৩ জন। পরের মাসগুলির চূড়ান্ত হিসাব না পাওয়া গেলেও অভিবাসন দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘চলতি বছরে অগস্ট পর্যন্ত মোট ১২,৮৫,৭৮৩ জন বাংলাদেশি ভারতে এসেছেন। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে বছর শেষে সংখ্যা ১৫ লাখে গিয়ে থেমে যাবে বলেই মনে হচ্ছে।’’
সংসদের চলতি অধিবেশনেও বাংলাদেশি পর্যটক কমে যাওয়ার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে সংসদে তথ্য পেশ করলেও কোন রাজ্যে কত পর্যটক এসেছেন, সে হিসাব তাঁর মন্ত্রক আলাদা করে রাখে না বলেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। মন্ত্রী বিস্তারিত না-জানালেও বাংলাদেশি পর্যটকদের একটা বড় অংশই পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এমনকি চিকিৎসা, ব্যবসা এবং ভ্রমণের জন্য তাঁদের বড় অংশ কলকাতাতেই থাকেন। সেই সংখ্যাও খুবই কমেছে বলে জানাচ্ছেন পর্যটকদের উপরে নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা।
কলকাতায় এসে বাংলাদেশিরা মূলত থাকেন মধ্য কলকাতার নিউ মার্কেট এলাকায়। এখানকার সদর স্ট্রিট, কিড স্ট্রিট, মার্কুইজ় স্ট্রিটে প্রায় সারা বছরই গিজ গিজ করেন বাংলাদেশিরা। এই এলাকার হোটেল, রেস্তরাঁ থেকে মুদ্রা বিনিময়কারী ব্যবসায়ীরা পর্যটকদের উপরেই বেশি নির্ভর করেন। সকলেই যে সমস্যায় তা জানিয়েছেন নিউ মার্কেটের শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে পর্যটক নেই বললেই চলে। তার প্রভাব সব ধরনের ব্যবসাতেই পড়ছে। পোশাক থেকে বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম— সব ব্যবসাতেই পর্যটক কমে যাওয়ার প্রভাব রয়েছে।’’
গত জুলাই থেকে কলকাতার চিকিৎসা-পর্যটনও ধাক্কা খেয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির দাবি, বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ হয়ে গিয়েছে। সেটা ক্রমশ আরও কমছে। তবে এর একটা বড় কারণ ভিসা পাওয়ার সমস্যাও। জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ‘ছাড়’ দেওয়া হলেও তুলনায় রোগী কম। দক্ষিণ-পূর্ব কলকাতার মুকুন্দপুর এলাকায় অনেক বাড়িতেই চিকিৎসা করাতে আসা বাংলাদেশি রোগীর পরিবার থাকে। কিন্তু সেই ব্যবসায় এখন মন্দা। ওই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অমিতাভ করের কথায়, ‘‘রোগী নেই! ফলে রোগীর পরিবারও নেই। শুধু বাড়িভাড়াই নয়, এই এলাকার অন্য ব্যবসায়ীরাও সমস্যায়। এখানে বেশি কেনাকাটা মূলত বাংলাদেশের পর্যটকেরাই করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy