কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া। ফাইল চিত্র।
২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে টিকাকরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল, তা ছুঁতে ব্যর্থ ভারত— সম্প্রতি এমনই এক খবর প্রকাশিত হয়েছিল একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। খবরটি বিভ্রান্তিকর বলে দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া।
তাঁর বক্তব্য, ওই প্রতিবেদনে ভারতে টিকাকরণের সঠিক চিত্র প্রতিফলিত হয়নি। এর পরেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী দাবি করেন, বহু উন্নত দেশ যেখানে জনসংখ্যা বেশ কম, তার তুলনায় ভারতে সফল ভাবে টিকাকরণ কর্মসূচি চলছে। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অতীতের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েই ওমিক্রনের মোকাবিলা করা হবে।
তবে কেন্দ্রের আশ্বাস সত্ত্বেও বাড়ছে উদ্বেগ। দেশে গত এক দিনে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে ২১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ২৭,৫৫৩ জন। তার মধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪। মোট ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা পার করল দেড় হাজারের গণ্ডি (১৫২৫)। তার মধ্যে সেরে উঠেছেন ৫৬০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় অ্যাক্টিভ করোনা রোগী বেড়েছে ১৮ হাজার ২০। দৈনিক সংক্রমণ হার ২.৫৫ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে ৩ জানুয়ারি থেকে আগামী দু’সপ্তাহের জন্য ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
মোট সংক্রমণের নিরিখে শীর্ষে মহারাষ্ট্র। এখনও পর্যন্ত ২৩টি রাজ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ দেখা গিয়েছে। তার মধ্যেও শীর্ষে মহারাষ্ট্রই (৪৬০)। আজ রাজ্যের প্রকাশিত পরিসখ্যান দেখা যাচ্ছে, মুম্বইয়ে দৈনিক সংক্রমণ আরও বেড়ে হয়েছে ৮০৩৬। যা গত কালের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি। এই পরিস্থিতিতে সেখানে গত কয়েক দিনে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে কন্টেনমেন্ট জ়োনের সংখ্যা। বৃহন্মুম্বই পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, বস্তির তুলনায় বহুতলগুলিতে সংক্রমণ অনেকটাই বেশি।
আজ রাজধানীতে সংক্রমিত হয়েছেন ৩১৯৪ জন। সংক্রমণ হার ৪.৫৯ শতাংশ। যদিও মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল বলেছেন, ‘‘আতঙ্কিত হবেন না।’’ তিনি জানান, সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন খুবই কম রোগী। বেশির ভাগই উপসর্গহীন কিংবা মৃদু উপসর্গ দেখা গিয়েছে। গত কাল ২৪৬ জন কোভিড রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে অক্সিজেন সহায়তা দিতে হয়েছে ৮২ জনকে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সরকার ৩৭ হাজার শয্যার বন্দোবস্ত রেখেছে। অর্থাৎ মোট শয্যার নিরিখে চিকিৎসাধীন রোগী ১ শতাংশেরও কম।
কেরলেও দৈনিক সংক্রমণ বেড়ে হয়েছে ২৮০২। তার মধ্যে ওমিক্রন আক্রান্ত ৪৫।
ওড়িশাতেও ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪২৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা গত দু’মাসে নিরিখে সর্বোচ্চ দৈনিক সংক্রমণ। আক্রান্তদের মধ্যে ৬৭ জন শিশু। খুড়দা জেলায় সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি (১৭৭)। এর পরেই রয়েছে কটক (৪৫)। এই পরিস্থিতিতে আজ রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী কাল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস শুরুর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা আপাতত প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পঠনপাঠন আগের মতোই চলবে। অফলাইনে পরীক্ষার যে বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তা কোভিড প্রোটোকল মেনেই সম্পন্ন হবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
এ দিকে জম্মু-কাশ্মীরের বৈষ্ণোদেবী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ জন পড়ুয়ার সংক্রমণ ধরা পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রিয়াসি জেলা প্রশাসন। নৈনিতালের গঙ্গরকোট এলাকায় জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে ৮৫ জন সংক্রমিত হয়েছে। এর পরেই ওই স্কুলটিকে মাইক্রো কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
দেশ জুড়ে সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের মুখে আজ ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেলের সঙ্গে কথা বলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধী। তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলায় রাজ্য কতটা প্রস্তুত খবর নেন তিনি। বঘেল অবশ্য সনিয়াকে আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত শয্যা ও অক্সিজেনের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সংক্রমণ বেশি রায়পুর, রায়গড়ের মতো শহরে।
সংক্রমণের জেরে বেশ কিছুদিন আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ রাখা হয়েছিল পুণেয়। তবে সেখানকার বিমানবন্দরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আগামী ৭ তারিখ থেকে ফের আন্তর্জাতিক উড়ান চলাচল শুরু হতে পারে সেখানে।
কোভিড বিধি লঙ্ঘন করে নতুন বছর উদ্যাপনে বিপুল সংখ্যক মানুষ শামিল হওয়ায় করোনা সংক্রমণ বিপুল ভাবে বেড়েছে জামশেদপুরে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৩ জনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। বাড়ছে অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যাও। জামশেদপুরে সংক্রমণ হার ২.৬৪ শতাংশ।
পঞ্জাবে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩২ জনের করোনা ধরা পড়েছে। কর্নাটকে আজ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১১৮৭। তার মধ্যে বেঙ্গালুরুতে ৯২৩ জন। সংক্রমণ হার ১.০৮ শতাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy