নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
৩৭০ ভোটেই বাতিল হয়ে গেল অনুচ্ছেদ ৩৭০। লোকসভায় ভোটাভুটিতে আজ রাজ্যসভার মতো শরিক ছাড়াও একাধিক বিরোধী দলকে পাশে পান নরেন্দ্র মোদী। প্রথমে ওই ধারা রদের প্রশ্নে ৩৬৭টি ভোট পায় সরকার। বিপক্ষের ভোট ছিল ৬৭। পরে সংশোধনের পরে শাসক শিবিরের ভোট হয় ৩৭০। উল্লাসে ফেটে পড়েন স্মৃতি ইরানি-রবিশঙ্কর প্রসাদেরা।
সংসদের দুই কক্ষে এই জয়ের ফলে রদ হয়ে গেল জম্মু-কাশ্মীরের জন্য বিশেষ অনুচ্ছেদ ৩৭০। বিশেষ মর্যাদা হারানোই শুধু নয়, রাজ্য পুনর্গঠন বিলটিও পাশ হওয়ায় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ। ভবিষ্যতে জম্মু-কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ হবে। তাই আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির জন্য ১০% সংরক্ষণ বিলটি প্রত্যাহার করে সরকার। বিতর্কিত বিলগুলি পাশ হতেই লোকসভা অনির্দিষ্টকালীন মুলতুবি করে দেন স্পিকার ওম বিড়লা। শেষ হয় প্রায় দু’মাস ধরে চলা অধিবেশনের।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ বক্তব্য শুরু করার ঠিক আগে লোকসভায় ঢোকেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁকে দেখেই শুরু হয় জয়ধ্বনি। বিজেপি শিবিরের শেষ দু’টি বেঞ্চ থেকে ওঠা ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘কাশ্মীর হমারা হ্যায়’—জয়ধ্বনিতে তখন কার্যত কান পাতা দায়। অবাক বিরোধীরা। স্পিকার তখনও কিছু বলেননি। দু’একজন উৎসাহী সাংসদ চেষ্টা করেন মোদীর কাছে পৌঁছনোর। প্রধানমন্ত্রীর নামে জয়ধ্বনি শুনে বিরোধী শিবির থেকে দু’একজন মৃদু আপত্তি করেছিলেন। কিন্তু শাসক সাংসদদের প্রবল চিৎকারে বসে পড়েন তাঁরাও। প্রবল জয়ধ্বনি শুনে শুরুতে থমকে যান প্রধানমন্ত্রীও। তারপর এসে বসেন নির্দিষ্ট স্থানে। পাশে বসা রাজনাথ সিংহের কথায় হেসে প্রত্যুত্তর দিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে। প্রায় এক মিনিট টানা জয়ধ্বনির পরে হস্তক্ষেপ করেন স্পিকার। বিল পাশ হওয়ার পর অমিতের সঙ্গে করমর্দন করে তাঁকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী, পিঠ চাপড়ে দেন। পরে টুইটেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন তিনি।
সংসদ যে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, তা সকালে বিল পেশের সময়ে বলেছিলেন অমিত। বিজেপি’র মতে, স্বাধীনতার সময়ে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান যদি বল্লভভাই পটেল করতেন, জল এত দূর গড়াত না। সেই ‘ঐতিহাসিক ভুল’ সংশোধনে মোদী সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে জানান অমিত। তবে তিনি পটেল হতে চান বলে বিরোধীরা যে কটাক্ষ করছেন, সে প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘লৌহপুরুষ হতে চাই না। বিজেপি’র সাধারণ কর্মী হিসাবেই থাকতে চাই।’’ বল্লভভাই ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে বিরোধী নেতারা কোনও নেতিবাচক মন্তব্য করলেই তা লোকসভার কার্যবিবরণী থেকে মোছার জন্য সক্রিয় হতে দেখা যায় তাঁকে।
আজ সকালে বিল পেশের সময়ে কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘১৯৪৮ থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ কাশ্মীরের উপর নজরদারি করেছে। অথচ সরকার বলছে এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়।’’ এ নিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি করেন তিনি। অন্য দিকে, কংগ্রেসেরই মণীশ তিওয়ারির মতে, সরকার অনুচ্ছেদ ৩৭০ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব এনে দেশকে সাংবিধানিক সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। জবাবে অমিত বলেন, ‘‘১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের নজরদারিতে বিষয়টি থাকলেও, শর্ত ছিল কোনও দেশ পরস্পরের সীমান্ত অতিক্রম করতে পারবে না। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারত আক্রমণ করতেই তা বাতিল হয়ে যায়।’’ মণীশের বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি জানান, শিমলা চুক্তিতে বলা রয়েছে, কাশ্মীর প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার সংসদের রয়েছে। যেহেতু সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি রয়েছে, তাই ওই রাজ্য সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এখন সংসদের হাতে।
এনসিপির সুপ্রিয়া সুলে বা কংগ্রেসের শশী তারুরের অভিযোগ ছিল, এই অনুচ্ছেদ রদের ফলে উপত্যকায় অস্থিরতা বাড়বে। নব্বইয়ের দশকের মতো সন্ত্রাস ফিরে আসবে। সুপ্রিয়া কার্ফু জারি করে ফারুক আবদুল্লার মতো বর্ষীয়ান নেতাদের গৃহবন্দি রাখার সমালোচনা করেন। শশীর আশঙ্কা, ওই সিদ্ধান্ত কাশ্মীরের যুব সমাজকে অস্ত্র তুলে নিতে বাধ্য করবে। জবাবে অমিত বলেন, ‘‘নব্বইয়ের দশকে বছরভর কার্ফু থাকত। এখানে তো কয়েক দিনের জন্য জারি হয়েছে। আর সন্ত্রাসবাদের শিকড় পোঁতা রয়েছে ৩৭০ অনুচ্ছেদে। পাকিস্তান যার সুযোগ নিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy