—ফাইল চিত্র।
প্রায় ১৬ মাস আগের কথা। ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লি এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করতে। সেই দিনই দিল্লি ও চণ্ডীগড়ে কে ডি সিংহের দুই ঠিকানায় হানা দিয়েছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। দলের সঙ্গে যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে এলেও, অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর কর্ণধার কে ডি তখনও খাতায়-কলমে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ।
কে ডি-কে হেফাজতে নেওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরে ইডি সূত্রের বক্তব্য, অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর ১,৯১৬ কোটি টাকার কেলেঙ্কারির ফায়দা কে বা কারা পেয়েছেন, তা খুঁজে বার করাই প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু তাদের তদন্তের গতিমুখ দেখে রাজনৈতিক শিবিরে প্রশ্ন, এর মাধ্যমেও কি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ খুঁচিয়ে তুলে বাংলায় ভোটের আগে তৃণমূলকে প্যাঁচে ফেলতে চায় মোদী সরকার?
ইডি কর্তাদের বক্তব্য, কে ডি-র সঙ্গে তৃণমূল অনেক আগেই দূরত্ব তৈরি করেছে ঠিকই। কিন্তু তৃণমূলের বহু নেতা অতীতে দিল্লিতে বা অন্যত্র তাঁর ‘বিলাসবহুল’ আতিথেয়তা পেয়েছেন। যেমন, বছর ন’য়েক আগে দিল্লির দুই পাঁচতারা হোটেলে রাজ্যের এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিয়ে ও বাগ্দানের অনুষ্ঠান হয়েছিল। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, তখন অতিথি আপ্যায়নের খরচের অনেকটাই বহন করেছিলেন কে ডি। কিন্তু তার সঙ্গে অ্যালকেমিস্টের বেআইনি কারবারের যোগাযোগ কোথায়? এ নিয়ে এখনই ইডি-র অফিসাররা মুখ খুলতে নারাজ।
আরও পড়ুন: যোগীর মন্ত্রী হচ্ছেন মোদীর প্রিয় আমলা?
তদন্তকারী অফিসাররা বলছেন, আবাসন, পরিকাঠামো, পোলট্রি, ফার্মা, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে শুরু করে চা-বাগান পর্যন্ত বহু রকম ব্যবসা ছিল অ্যালকেমিস্টের। কিন্তু মুনাফার আসল উৎস ছিল বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কারবার। এগিয়েন উপসাগরে গ্রিসের সান্তোরিনি দ্বীপে তাদের ১০টি বুটিক হোটেলের খোঁজ মিলেছে। আমেরিকার আটলান্টাতেও একটি হোটেল আছে। কয়েক বছর আগে এই হোটেলেই কে ডি-র ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের দাবি। রাজ্য বিজেপির কলকাতা জোনের পর্যবেক্ষক শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কে ডি সিংহকে গ্রেফতার করতে এত দেরি কেন হল? যে প্রসঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীকে বিদ্ধ করা হয়, সেই একই প্রসঙ্গে নাম থাকা আরও ন’জন তৃণমূলে আছেন। আর কে ডি-ও তখন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। যাঁরা বলেন, বহু দিন যোগাযোগ নেই, তাঁরা অসত্য কথা বলছেন। কে ডি-কে কি কোনও দিন তৃণমূল বহিষ্কার করেছে?’’ তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় আগেই বলেছেন, ‘‘কে ডি সিংহ অনেক দিন ধরেই আমাদের সঙ্গে নেই, সংসদেও নেই। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’’
আরও পড়ুন: দীর্ঘ চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে আসে গ্রোথ হরমোন, ৮ ফুট ১ ইঞ্চিতে থামেন ইনি!
দিল্লিতে গ্রেফতারের পরে এখানে ইডি-র আঞ্চলিক অফিসে তাঁকে জেরা করা শুরু হয়েছে। ২০১৫ সালের আগে পর্যন্ত অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থা আমজনতার কাছ থেকে ১,৯১৬ কোটি টাকা তোলে। শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র অনুমতি ছাড়াই চালু করেছিল আমানত সংগ্রহ। সেবি তৎপর হওয়ার পরে অ্যালকেমিস্টের দাবি, তারা লগ্নিকারীদের ১,০৭৭ টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে। বাকি টাকা ফেরাতে আরও সময় প্রয়োজন। কিন্তু সেবি অনুমতি দেয়নি। ২০১৬ সালে সেবি কে ডি-র সংস্থার বিরুদ্ধে চার্জশিট দায়ের করে। এখন ইডি-র বিশেষ আদালতে কে ডি-র দাবি, প্রতারণার অভিযোগ ধোপে টেকে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy