মোতায়েন অতিরিক্ত সেনা ফাইল চিত্র
আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখলের পরে কাশ্মীরে আগামী দিনে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ বাড়ার আশঙ্কা পূর্ণমাত্রায় রয়েছে। তাই উপত্যকায় অনুপ্রবেশ-রোধকারী গ্রিডকে আরও শক্তিশালী করে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় সেনা।
এই মুহূর্তে নয়াদিল্লির কাছে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল আফগান সেনার হাতে যে আধুনিক আমেরিকান অস্ত্র ছিল তা তালিবানের মাধ্যমে জমা পড়েছে পাক সেনার হাতে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের মতে, আফগান সেনার হাতে থাকা ওই অস্ত্র তালিবান সংগ্রহ করে ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তানে। একটি সূত্রের মতে, আফগান সেনার কাছ থেকে অন্তত পাঁচ লক্ষ এম-১৬ এবং এম-৪ অ্যাসল্ট রাইফেল ছাড়াও লাইট মেশিন গান, স্নাইপার রাইফেল, নাইট ভিশন গগলস পেয়েছে তালিবান। এ ছাড়া বড় অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে দু’ হাজার সাঁজোয়া গাড়ি ও প্রায় ৪০টির কাছাকাছি বিমান-হেলিকপ্টার, যার মধ্যে রয়েছে ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টার, স্ক্যান ইগলের মতো ছোট ড্রোনও। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, ওই অস্ত্র আখেরে পাক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মদতে পুষ্ট জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির হাতে গিয়ে পৌঁছবে। ফলে আগামী দিনে এলাকা দখল নিয়ে পাক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের মতে, আমেরিকান ওই অস্ত্র পাকিস্তান-আফগানিস্তানের বাইরে ব্যবহার হওয়ার আশঙ্কা কম।
সেনার মতে, বড় অস্ত্র ব্যবহার করলে দ্রুত চিহ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভাবমূর্তি ফেরাতে তৎপর পাকিস্তান কিংবা সদ্য ক্ষমতায় আসা তালিবান কেউই সেই ঝুঁকি নিতে নারাজ। তবে আশঙ্কা, বড় অস্ত্র না হলেও আফগান বাহিনীর কাছ থেকে পাওয়া পিস্তল, গ্রেনেড সে দেশের বাইরে, বিশেষ করে কাশ্মীরকে অশান্ত করতে ব্যবহার করা হতে পারে, এমন সম্ভাবনা প্রবল।
কাবুলের ক্ষমতা পরিবর্তনের ফায়দা নিয়ে পাকিস্তান আফগান জঙ্গিদের কাশ্মীরে পাঠিয়ে পরিস্থিতি অশান্ত যে করবে সে নিয়ে নিশ্চিত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি। যদিও কাবুলের ক্ষমতা দখল করে তালিবান জানিয়েছে, কাশ্মীর হল ভারত ও পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। তাতে তাদের নাক গলানোর কোনও পরিকল্পনা নেই। কিন্তু ইসলামাবাদ যে তলে তলে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তার ইঙ্গিত আজ দেন সে দেশের শাসক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের নেত্রী নীলম ইরশাদ শেখ। তিনি বলেন, ‘‘তালিবান জানিয়েছে তারা পাকিস্তানের সঙ্গে রয়েছে এবং কাশ্মীরে আমাদের সাহায্য করবে।’’
বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে অনুষ্ঠান চলাকালীন ইমরান খানের দলের নেত্রীর ওই মন্তব্যের ভিত্তিতে নয়াদিল্লির আশঙ্কা আগামী দিনে উপত্যকা-সহ গোটা ভারতে বড় মাপের সন্ত্রাসবাদী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে আইএসআই। তারই অঙ্গ হিসেবে উপত্যকায় শীত শুরুর আগেই এক ঝাঁক তালিব জঙ্গিকে ভারতে প্রবেশ করানোর প্রচেষ্টা হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই ১৫ অগস্ট কাবুলে পট পরিবর্তন হতেই জম্মু-কাশ্মীরে যে জঙ্গি প্রতিরোধকারী গ্রিড রয়েছে তাতে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। তবে সেনা সূত্রের দাবি, বর্তমানে শীর্ষ সেনা কর্তাদের নব্বইয়ের দশকে উপত্যকায় একই ধরনের পরিস্থিতি সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে তাঁরা পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল।
তা ছাড়া ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণরেখায় যে নজরদারি ব্যবস্থা ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে তার সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম নয় জঙ্গিরা। সেনা সূত্রের মতে, অতীতের মতো এ ক্ষেত্রেও অনুপ্রবেশ রোখার প্রশ্নে স্থানীয় কাশ্মীরিদের সাহায্য পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী সেনা কর্তারা। তাঁদের দাবি, তালিব জঙ্গিরা বরাবরই কাশ্মীরের বাসিন্দাদের অশ্রদ্ধার চোখে দেখে এসেছে। ফলে গোড়া থেকেই দুই শিবিরের সম্পর্ক কখনও মসৃণ হয়নি। উল্টে বিভেদ বেড়েছে। বিশেষ করে আফগান জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আম কাশ্মীরিদের স্ত্রী-মেয়েদের সঙ্গে অভদ্র ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। ফলে অতীতের মতো এ ক্ষেত্রেও উপত্যকার সাধারণ মানুষই নিজেদের স্বার্থে তাঁদের এলাকায় লুকিয়ে থাকা আফগান জঙ্গিদের খোঁজখবর প্রশাসনকে জানিয়ে দেবেন, ওই আশাতেই বুক বাঁধছে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy