কারও বয়স আঠারো পার হলেই তিনি সরাসরি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন। ফাইল চিত্র।
আঠারো বছর হলেই এখন থেকে সরাসরি টিকাকরণ কেন্দ্রে গিয়ে প্রতিষেধক নিতে পারবেন যে কোনও ব্যক্তি। প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য অতীতে যে আগেভাগে কো-উইন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাম নথিভুক্ত করাতে হত তার আর প্রয়োজন থাকল না। মূলত টিকাকরণের হার বাড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, গোটা দেশে প্রতিষেধকের জোগান যেখানে এখনও বাড়ন্ত সেখানে এতে টিকাকেন্দ্রে প্রতিষেধক নিতে ইচ্ছুকদের ভিড় বেড়ে গিয়ে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও কেন্দ্রের দাবি, দেশে এই মুহূর্তে তিনটি প্রতিষেধকের মাধ্যমে টিকাকরণ হচ্ছে। আগামী মাসের মধ্যে নোভাভ্যাক্স প্রতিষেধকও ওই তালিকায় যুক্ত হতে চলেছে।
১৮-৪৫ বছরের টিকাকরণ শুরু হয় ১ মে। গোড়াতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা কেবল কো-উইন ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য নাম লিখিয়ে নির্দিষ্ট দিনে প্রতিষেধক নিতে পারতেন। পরে দেখা যায়, বহু ব্যক্তি আগে থেকেই নাম লিখিয়েও বিভিন্ন কারণে নির্দিষ্ট দিনে টিকা নিতে অনুপস্থিত থাকছেন। তাই মে মাসের শেষে নিয়ম পাল্টে কেন্দ্র জানায়, আগে থেকেই নাম নথিভুক্ত রয়েছে এমন ব্যক্তিদের টিকাকরণের শেষে প্রতিষেধক বেঁচে গেলে ইচ্ছুক ব্যক্তিরা তখনই নাম লিখিয়ে প্রতিষেধক নিতে পারবেন। মূলত টিকার অপচয় রুখতেই সে সময়ে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে আগে থেকে কো-উইন ওয়েবসাইটে আর নাম লেখানো বাধ্যতামূলক থাকছে না। কারও বয়স আঠারো পার হলেই তিনি সরাসরি টিকাকেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবেন।
দেশে গত ছয় মাসে প্রায় ২৬ কোটি মানুষ প্রতিষেধক নিয়েছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে অন্তত ১০০ কোটি দেশবাসীকে প্রতিষেধকের ছাতার তলায় নিয়ে আসার লক্ষ্য নিয়েছে কেন্দ্র। তাই টিকাকরণ কর্মসূচিতে গতি আনতেই আজকের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা ও বয়স্ক মানুষের কথা ভেবেই নিয়মে পরিবর্তন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নাম নথিভুক্তকরণে গ্রামীণ এলাকায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। শহরেও নাম নথিভুক্ত করাতে বয়স্কদের সমস্যা হচ্ছিল। বহু ইচ্ছুক ব্যক্তি তাই প্রতিষেধক নিতে চেয়েও নাম নথিভুক্ত করাতে ব্যর্থ হওয়ায় টিকা নিতে পারছিলেন না। বিশেষ করে গ্রামে ও শহরের বস্তি এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীরা যাতে একাধিক ব্যক্তিকে একত্রিত করে টিকাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে পারেন সে দিকেও লক্ষ্য রেখে নিয়ম শিথিল করা হয়েছে।’’ তবে কবে থেকে ওই নতুন নিয়ম চালু হবে তা অবশ্য স্পষ্ট করেনি কেন্দ্র। সূত্রের মতে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে রাজ্যগুলিকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
টিকাদানের গতি বাড়াতে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে ওই সিদ্ধান্তের ফলে আগামী দিনে টিকাকেন্দ্রে ভিড় বাড়তে চলেছে। কিন্তু প্রশ্ন হল ভিড়কে জোগান দেওয়ার মতো এত টিকা কি কেন্দ্রের ঘরে রয়েছে? বর্তমান সময়ে গোটা দেশে টিকার জোগান বাড়ন্ত। ভাঁড়ারে সীমিত সংখ্যক টিকা থাকায় একাধিক রাজ্য মূলত যারা দ্বিতীয় ডোজ় পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়ার নীতি নিয়েছে। তাই মোদী সরকারের আজকের সিদ্ধান্তে উল্টে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, ওয়েবসাইটে নাম নথিভুক্ত করার প্রতিটি স্লটই ভর্তি। মানুষ টিকা নিতে চেয়ে নাম নথিভুক্ত করাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে নথিভুক্তকারীদের সঙ্গে নাম নথিভুক্ত নেই এমন ব্যক্তিরা টিকা নেওয়ার লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লে এত টিকার জোগান কোথা থেকে আসবে? স্বভাবতই যাঁরা আগে থেকে নাম নথিভুক্ত করে রেখেছেন তাঁরাই টিকা পাওয়ার প্রশ্নে প্রথম দাবিদার। সেই পরিস্থিতিতে কে প্রতিষেধক পাবেন আর কাকে দেওয়া হবে না তা স্থির করা নিয়ে ঝামেলা লেগে যেতে পারে। টিকার জোগান স্বাভাবিক হওয়ার আগে ওই সিদ্ধান্তে উল্টে হিতে বিপরীত হওয়ার পূর্ণ আশঙ্কা রয়েছে।
যদিও নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পলের দাবি, দেশে যথেষ্ট টিকা রয়েছে। রাজ্যগুলিকে আগামী দিনে কত টিকা দেওয়া হচ্ছে তা আগেভাগেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই মতো তারা টিকাকরণ কর্মসূচির পরিকল্পনা করছে। তাছাড়া কোভিশিল্ড, কোভ্যাক্সিন ও স্পুটনিক তিনটি সংস্থাই এ দেশে নিজেদের প্রতিষেধকের উৎপাদন বাড়িয়েছে। নোভাভ্যাক্স প্রতিষেধকের তৃতীয় দফার ফলাফল যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। ওই প্রতিষেধকটিও খুব দ্রুত ছাড়পত্র পাওয়ার তালিকায় রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে কুড়ি কোটি প্রতিষেধক বাজারে ছাড়ার লক্ষ্য নিয়েছে ওই সংস্থা।
এ দিকে গত কয়েক দিনের মতোই ধারাবাহিক ভাবে দৈনিক সংক্রমণ কমেছে দেশে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিত হয়েছেন ৬০,৪৭১ জন। যা ৩১ মার্চের পরে সর্বনিম্ন। সংক্রমণের হার কমে হয়েছে ৩.৪৫%। কমেছে দৈনিক মৃত্যুও (২৭২৬)। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত দিল্লিতে বিধিনিষেধ শিথিল হতেই রাস্তায় ভিড় বাড়ছে। তার জেরেই আতঙ্কিত চিকিৎসকদের সতর্কবার্তা, এ ভাবে ভিড় বাড়তে থাকলে ফের বিপুল সংখ্যক মানুষ সংক্রমণের কবলে পড়তে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy