সংসদে রাহুল গান্ধী এবং অনুরাগ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত।
সরাসরি এক বারও রাহুল গান্ধীর নাম করলেন না ঠিকই। তবে নাম না করে আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রাহুল গান্ধী তথা কংগ্রেসের দিকে শিল্পপতিদের ‘ভিলেন’-এর তকমা দিয়ে দেশে ‘রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতা’ তৈরির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুললেন। জাতগণনার কথা বলে রাহুল সামাজিক বিভাজন তৈরির চেষ্টা করছেন বলে ইঙ্গিত করলেন। একইসঙ্গে বিজেপি সাংসদ অনুরাগ ঠাকুরও রাহুলের নাম না করে তাঁর জাতগণনার দাবি প্রসঙ্গে বললেন, ‘‘যার জাতের ঠিক নেই, সে এখন গণনার কথা বলছে।’’
লোকসভায় বাজেট নিয়ে বিতর্কে রাহুল অভিযোগ তুলেছিলেন, মোদী সরকার মুকেশ অম্বানী ও গৌতম আদানির হাতেই সমস্ত সরকারি সম্পত্তি তুলে দিচ্ছে। হাতে গোনা ব্যবসায়ীদের হাতে দেশের অর্থনীতি চলে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ ছিল রাহুলের। তাঁর দাবি ছিল, বাকি ব্যবসায়ীদের জন্য, ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য মোদী সরকারের জমানায় সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরকে কাজে লাগিয়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলে দেশের ওবিসিদের সংখ্যা নির্ধারণে জাতগণনা করাবে বলেও ঘোষণা করেছিলেন রাহুল।
আজ প্রথমে বিজেপি সাংসদ, প্রাক্তন মন্ত্রী অনুরাগ রাহুলকে নিশানা করেন। অনুরাগ বলেন, ‘‘যাঁর নিজের জাতের ঠিক নেই, সে এখন গণনার কথা বলছে।’’ অনুরাগের মন্তব্য নিয়ে গোটা বিরোধী শিবির প্রতিবাদ জানায়। রাহুল নিজে উঠে বলেন, ‘‘এ দেশে বঞ্চিত, গরিবের জন্য যে মুখ খুলেছে, তাকে গালিগালাজ শুনতে হয়েছে। আপনারা আমায় যত অপমান করুন, আমি ক্ষমা চাইতে বলব না। কিন্তু এই সংসদে জাতগণনা পাশ করিয়ে ছাড়ব।’’ অনুরাগ ব্যাখ্যা দেন, তিনি কারও নাম বলেননি। সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব অনুরাগকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কারও জাত কী, তা নিয়ে কী ভাবে প্রশ্ন তুলতে পারেন?”
এ নিয়ে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা পরে নরেন্দ্র মোদীকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘‘আর্থ-সামাজিক জাতগণনা দেশের ৮০ শতাংশের দাবি। সংসদে কি দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে গালিগালাজ করা হবে? নরেন্দ্র মোদী স্পষ্ট করুন, তাঁর নির্দেশে এ সব হয়েছে কি না?”
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সরাসরি জাতগণনার দাবি নিয়ে জবাব দেননি। কিন্তু বলেছেন, সমাজের বুনোট ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সমাজের মধ্যে যে সব ফাটলের চ্যুতিরেখা রয়েছে, তা স্পষ্ট করে তোলা হচ্ছে। সমাজে পরস্পরের সম্পর্কে অবিশ্বাস তৈরি করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে যাতে সামান্য স্ফূলিঙ্গেই সংঘাত হয়। নেহরু-গান্ধী পরিবার জাতগণনা, সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছিল প্রমাণ করতে নির্মলা জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরা ও রাজীব গান্ধীর সংরক্ষণ নিয়ে অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি অভিযোগ তোলেন, নেহরু সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছিলেন। সেই কারণে ভীমরাও অম্বেডকর মন্ত্রিসভা ত্যাগ করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধীর স্লোগান ছিল, ‘না জাত পর, না পাত পর, মোহর লাগেগি হাত পর।’ রাজীব গান্ধী বলেছিলেন, সংরক্ষণের খাতিরে কোনও ‘ইডিয়ট’কে পদোন্নতি দিলে দেশের ক্ষতি হবে। কংগ্রেস সরকার ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কার্লেকর কমিশন, মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টকেও পাত্তা দেয়নি।
বাজেট ছাপার সময় হালুয়া বিতরণ অনুষ্ঠানে সরকারি আমলাদের মধ্যে কত জন দলিত, ওবিসি, আদিবাসী ছিলেন, তা নিয়ে রাহুল প্রশ্ন তুলেছিলেন। এ নিয়ে রাহুলকে নিশানা করে নির্মলা প্রশ্ন তোলেন, রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন, রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্টে কত জন দলিত, আদিবাসী, ওবিসি রয়েছেন? রাহুল ‘অগ্নিবীর’ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সেনাবাহিনীর মধ্যেও অবিশ্বাস তৈরির চেষ্টা হচ্ছে বলে নির্মলার অভিযোগ।
রাহুল মোদী সরকারের বিরুদ্ধে হাতে গোনা ব্যবসায়ীদের হাতে গোটা অর্থনীতি তুলে দেওয়ার অভিযোগ তুললেও আজ প্রধানমন্ত্রী বণিকসভা সিআইআই-এর অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন, তিনি দেশের সম্পদনির্মাতাদের পাশে রয়েছেন। এ নিয়ে তাঁর কোনও দ্বিধা নেই। আর আজ বাজেট বিতর্কের জবাবি বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ী, সম্পদ নির্মাণকারীদের সম্পর্কে ‘নেতিবাচক ধারণা’ ছড়ানো হচ্ছে। তাঁদের সম্পর্কে বিদ্বেষ তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের ‘ভিলেন’ বলে ঠাওরানো হচ্ছে। এর পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। বিদেশি লগ্নিকারীদের ভারতীয় সংবিধান নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে পারে না বলে প্রচার করা হচ্ছে এবং সড়ক থেকে সংসদে এই ষড়যন্ত্র চলছে বলেও নির্মলা অভিযোগ করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy