তিহাড় জেলে ঠাঁই হল অনুব্রত মণ্ডলের। ফাইল চিত্র।
আপনার জন্মদিন কবে?
ইডি-র হেফাজত থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে নিয়ে আসা হয়েছে। আদালতের কাগজপত্র তৈরি করা চলছে। তখনই অনুব্রত মণ্ডলকে প্রশ্নটা করলেন ইডি-র অফিসার।
অনুব্রত জিভ কাটলেন। মনে নেই তো! তারপর খানিক ভেবে বললেন, ‘অঘ্রাণ মাস। চৌঠা অঘ্রাণ।’ ইডি-র অবাঙালি অফিসার বাংলায় উত্তর শুনে হতভম্ব। সঙ্গের সহকারীকে অনুব্রতের আধার কার্ড খোঁজার নির্দেশ দিয়ে প্রশ্ন করলেন, ‘জন্মসালটা মনে রয়েছে?’ অনুব্রত উত্তর দিলেন, “আমার তো ৬৬ বছর বয়স। হিসাব করে নিন না!”
তবে অক্সিজেন মাস্ক, নেবুলাইজ়ারের কথা ভোলেননি অনুব্রত। আইনজীবী সম্পৃক্তা ঘোষালকে ডেকে বললেন, তিহাড় জেলে যাওয়ার সময় অক্সিজেন মাস্ক, নেবুলাইজ়ার, ওষুধ সঙ্গে দেওয়া হবে তো? তাঁর সঙ্গে যে সব ব্যাগ ছিল, সেগুলোই বা কোথায় থাকবে? আইনজীবীরা আশ্বস্ত করলেন, জেল থেকে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী তাঁকে ওষুধ, অক্সিজেন মাস্ক, নেবুলাইজ়ার দেওয়া হবে। না পেলে তিনি ফোন করে জানালে আদালতের অনুমতি নিয়ে তার বন্দোবস্ত করা হবে।
এই তিহাড় জেলে যাওয়া ঠেকাতে গত চার-পাঁচ মাস ধরে অনুব্রত মণ্ডলের তরফে দিল্লি-যাত্রা ঠেকানোর চেষ্টা হচ্ছিল। আজ বিকেলে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট গরু পাচার মামলায় ধৃত অনুব্রতকে ১৩ দিনের জন্য তিহারে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন। তাঁকে ফের ৩ এপ্রিল আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রঘুবীর সিংহ। এজলাসে শুনানির বদলে অনুব্রতকে বিচারকের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হয়। অনুব্রত বাংলা ছাড়া কিছু বোঝেন না বলে আইনজীবীরা তাঁর জন্য জেলে দোভাষীর বন্দোবস্ত করার আবেদন জানান। এ বিষয়ে যাতে অসুবিধা না হয়, বিচারক জেল কর্তৃপক্ষকে তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
গরু পাচার মামলায় ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্ত এনামুল হক, অনুব্রতের প্রাক্তন দেহরক্ষী সেহগাল হোসেন, বিএসএফের অফিসার সতীশ কুমার তিহাড় জেলে রয়েছেন। সোমবারই অনুব্রতের হিসাবরক্ষক মণীশ কোঠারিকেও তিহাড়ে পাঠানো হয়েছে। তিহার জেল সূত্রের খবর, বাকিদের সঙ্গেই অনুব্রত সাত নম্বর জেলে থাকবেন। দিল্লির প্রাক্তন মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈনের মতো বিভিন্ন আর্থিক নয়ছয় মামলায় গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তেরাও সেখানেই রয়েছেন।
অনুব্রতের আইনজীবীরা অবশ্য জামিনের আবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার দিল্লি হাই কোর্টে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আইনজীবী সম্পৃক্তা ঘোষাল জানান, অনুব্রতের গ্রেফতার বেআইনি বলে আগেই তাঁর জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে। কারণ, নিয়মমাফিক গ্রেফতার করা হয়নি। রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অনুব্রতকে গ্রেফতারের ৬০ দিনের মধ্যে ইডি চার্জশিট পেশ করতে পারেনি।
দু’দফায় ১৪ দিন ইডি-র হেফাজতে ছিলেন অনুব্রত। এই ১৪ দিনে তাঁর থেকে কী নতুন তথ্য পাওয়া গেল, তা নিয়ে ইডি-র তদন্তকারীরা মুখ খুলতে চাননি। মঙ্গলবার সকালে রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তাঁকে রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে হাজির করিয়ে, ইডি-র দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ইডি-র এক ডেপুটি ডিরেক্টর টানা জেরা করেন। ইডি আদালতে জানিয়েছিল, অনুব্রত তাদের হেফাজতে থাকার সময় ১২ জনকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কিন্তু ইডি শুধুমাত্র মণীশ কোঠারি ও বিজয় রজক ছাড়া আর কাউকেই এই পর্বে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। অনুব্রত-কন্যা সুকন্যাও ইডি-র মুখোমুখি হননি।
বগটুই হত্যাকাণ্ডের এক বছর পেরনোর পর, এ দিন সেখানে গিয়ে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘আজকে যেমন আমাদের শোকের দিন তেমন, গোটা বীরভূমের আনন্দেরও দিন। কারণ, বীরভূমের বেতাজ বাদশা আজ তিহাড়ে গিয়েছেন।’’ এর পরেই শুভেন্দু বলেন, ‘আমি সিউড়িতে এসে বলে গিয়েছিলাম, কেষ্ট মণ্ডল তিহাড়ে যাবেন। আজ গিয়েছেন। আর যে সব ছোট কেষ্ট আছে, তাদের জন্য আমার অন্য ব্যবস্থা আছে।’’ দিল্লির আদালত চত্বরে অনুব্রতকে বগটুই থেকে পঞ্চায়েত ভোট, সব কিছু নিয়েই সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন। বেপরোয়া, চমকে দেওয়ার মতো বুলির জন্য বিখ্যাত অনুব্রত মুখ বন্ধ রেখেই প্রিজন ভ্যানে চেপে তিহাড়ে রওনা দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy