অনন্ত রায়ের বাড়িতে অমিত শাহ। নিজস্ব চিত্র।
রাজবংশীদের জন্য ‘সুদিন’ আসছে। একটু একটু করে তাদের সব দাবি পূরণ হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠকের পরে এমনটাই মনে করছেন রাজবংশীদের মহারাজা হিসেবে পরিচিত অনন্ত রায়। পশ্চিমবঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহিতার বেশ কয়েকটি মামলা থাকায় অনন্ত এখন থাকেন বিজেপি-শাসিত অসমের চিরাং জেলার সতিবরগাঁও গ্রামে। সেখানেই বৃহস্পতিবার সকালে গিয়েছিলেন অমিত। খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে চলে ভোট-রাজনীতির আলোচনা। তার পরেই কোচবিহারে গিয়ে অমিত রাজবংশী সমাজের উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুতি দেন। অনন্তর সংগঠন ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্স অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)-এর অন্যতম দাবি মেনে ভারতীয় সেনায় ‘নারায়ণী ব্যাটালিয়ন’ গড়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত।
অনন্তর বাড়িতে বৈঠক সেরে কোচবিহারে যখন ওই সব ঘোষণা করছেন অমিত, তখন মহারাজের নজর ছিল টিভি-তে। সভা শেষে আনন্দবাজার ডিজিটাল ফোনে তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, অমিতের বক্তব্য শুনে কি তিনি খুশি? অনন্তর জবাব, ‘‘এক ঢোকে কি পিপাসা মেটে। তবে সুদিন আসবে রাজবংশীদের। অমিত’জি কথা দিয়েছেন একে একে সব দাবিই মানা হবে। তবে কতদিনে সেটা হয়, তার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকব। আর এতে আমার খুশির ব্যাপার নেই। যাঁদের জন্য এই ঘোষণা, সেই রাজবংশী সমাজের মানুষ খুশি কিনা সেটাই প্রশ্ন।’’
কিন্তু প্রজার ভাল হলে তো রাজারও খুশি হওয়ার কথা? অনন্তের জবাব, ‘‘কংগ্রেসকে আমরা বিশ্বাস করেছিলাম। কথা দিয়েও ধোঁকা দিয়েছে। এর পরে তৃণমূলকেও আমরা সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু উল্টে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। তৃণমূল উত্তরবঙ্গে বিপুল জয় পেয়েছিল রাজবংশীদের সমর্থনে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভস্মাসুর হয়ে গিয়েছেন। আমার মাথায় হাত রেখে আমাকে ভস্ম করেছেন। এ বার নিজের মাথায় হাত রেখেছেন।’’ তবে কি এ বার রাজবংশী ভোট সব বিজেপি-তেই যাবে? জবাব এড়িয়ে অনন্ত বললেন, ‘‘কোচবিহারে যে জনসভা হল সেটা কাদের? বিজেপি-র থেকে আমাদের সংগঠনের হলুদ পতাকাই তো সেখানে বেশি ছিল।’’
তিনি কি আশা করেন, বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় এলে তাঁর বিরুদ্ধে যাবতীয় রাষ্ট্রদোহিতার মামলা উঠে যাবে? এর উত্তরও সরাসরি দেননি অনন্ত। বলেছেন, ‘‘অপরাধ করলে তবেই তো মামলা হবে। আমি কোনও অপরাধই করলাম না। তবু এত মামলা!’’ সেই মামলা নিয়ে কি অমিতের সঙ্গে কথা হয়েছে? অনন্ত বলছেন, ‘‘না-না। আমি আগ্রহী নই। আমার অদৃষ্টে যা রয়েছে তাই হবে।’’ অমিতের সঙ্গে বৈঠকের পরে কি তিনি গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের দাবি পূরণ নিয়ে আশাবাদী? অনন্তের জবাব, ‘‘নিশ্চয়ই হবে। অনেক দিন থেকেই আলোচনা চলছে। এর আগে যখন রাজনাথ সিংহ কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখন থেকেই কথা চলছে। মাস খানেক আগে দিল্লিতে গিয়ে অমিত শাহ’জির সঙ্গেও এ নিয়ে কথা হয়েছে। ধীরে ধীরে দাবি পূরণ হবে বলেও জানিয়েছে কেন্দ্র।’’
প্রসঙ্গত, অনন্ত তথা তাঁর সংগঠন মনে করে, ১৯৪৯ সালে কোচবিহারের রাজা ভারতভুক্তির যে চুক্তি করেছিলেন তা মানা হয়নি। জেলা নয়, চুক্তি অনুযায়ী কোচবিহারকে আলাদা রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করতে হবে। আর তার এলাকা শুধু কোচবিহার জেলা নয়। উত্তরবঙ্গের করতোয়া নদী থেকে অসমের বেশ কিছু অংশ নিয়ে গ্রেটার কোচবিহারের দাবিদার তাঁরা।
অনন্তর কথা অনুসারে, বৃহস্পতিবার অমিতের সঙ্গে গ্রেটার কোচবিহারের দাবি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি। বরং আলোচনার বেশি অংশ জুড়ে ছিল সৌজন্য বিনিময়। অমিত অবশ্য একা যাননি। সঙ্গে যান অসমের মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা, বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও। ছিলেন কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক এবং অসম বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস।
অমিতকে আপ্যায়নের জন্য নানা রাজবংশী পদও রান্না হয়েছিল কোচবিহারের মহারাজের অসমের আস্তানায়। তবে সবটা খেতে পারেননি অমিত। সকাল সাড়ে ৯টায় যাওয়ার কথা থাকলেও অনন্তর বাড়িতে অমিত-সহ বাকিরা পৌঁছান ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ। কোচবিহার যাওয়ার তাড়া ছিল অমিতের। তবে অনেকটা সময় ছিলেন। অনন্ত জানালেন, তাঁর বাড়িতে বানানো পিঠে-নাড়ু খেয়েছেন সবাই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের বরোনি চালের পিঠে খুব সুস্বাদু। সঙ্গে নারকেল আর তিলের নাড়ু ছিল। অমিত শাহ তো নিজে থেকে নাড়ু চেয়ে নিয়েছেন।’’
অমিতকে খাইয়ে খুশি অনন্ত। তবে তাঁর খিদে মেটেনি। বললেন, ‘‘আমরা তো ভুখাতুর। আমাদের অনেক দাবি। উনি বলেছেন দফায় দফায় সব মেটাবেন। কিন্তু যতদিন না মিটছে ততদিন খিদে নিয়েই থাকতে হবে।’’ পুরনো অভিজ্ঞতার মতো বিজেপি-ও যদি সমর্থন পাওয়ার পরে দাবি না মানে? প্রশ্নের জবাবে অনন্তর গলায় হুঁশিয়ারির ইঙ্গিত, ‘‘মানতেই হবে। না মানলে জনমত বলে তো একটা বিষয় আছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy