পহেলগামে হামলার অন্যতম সন্দেহভাজন আদিল হুসেন ঠোকর ও আসিফ শেখের বাড়ি ধ্বংস হয়েছিল গত কালই। আজ কাশ্মীরে চলতে থাকা জঙ্গি-দমন অভিযানের সময়ে ধ্বংস হল আরও সাত জঙ্গির বাড়ি। বাড়িগুলিতে আইইডি পেতে রাখা হয়েছিল বলে দাবি বাহিনীর। অন্য দিকে পর্যটকদের অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছে এক টাট্টুচালককে।
পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর পরে কার্যত নজিরবিহীন সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে কাশ্মীরে। গত কাল এই অভিযানের সময়েই বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছিল আদিল ও আসিফের বাড়ি। আসিফ শেখের বোনের দাবি, তাঁদের বাবা-মা ও এক বোনকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। তাঁকেও প্রতিবেশীর বাড়িতে চলে যেতে বলে ছাদে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ফলে সব কিছু ভেঙে পড়ে। পুলিশের এক কর্তাও জানান, আগে জঙ্গিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হত। এখন সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে।
তবে এ দিন সরকারি ভাবে পুলিশ দাবি করেছে, শোপিয়ানে শাহিদ আহমেদ কুট্টে, আদনান শফি, কুলগামে জ়াহিদ আহমেদ, পুলওয়ামায় আহসান উল হক, এহসান আহমেদ শেখ ও হারিস আহমেদ, কুপওয়ারার কালারুসে ফারুক আহমেদ তাড়ওয়ার বাড়িতে পাতা ছিল আইইডি। সেখানে তল্লাশির সময়ে আইইডি-র খোঁজ পেয়ে বম্ব স্কোয়াডকে ডাকা হয়। ওই বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার সময়েই বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাড়িগুলি। এ দিন পহেলগামে হামলায় যুক্ত আরও তিন সন্দেহভাজন জঙ্গির হাতে আঁকা ছবি প্রকাশ করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই পাকিস্তানি বলে জানিয়েছে তারা। ওই তিন জনের সম্পর্কে তথ্য দিলে ২০ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বাহিনীর এক অফিসারের কথায়, ‘‘বৈসরন উপত্যকা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে পীরপঞ্জালের নানা এলাকা, আছাবল, ওয়ান্ডওয়ান। অভিযানের উপরে নজরদারি করছেন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিজি নলীন প্রভাত-সহ শীর্ষ কর্তারা। একটি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন এক মহিলা অফিসার। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে সন্ত্রাস-দমনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মহিলারা।’’
অভিযানের সময়ে নজরদারিতে সাহায্য করতে ব্যবহার করা হচ্ছে বায়ুসেনার দু’টি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার। বাহিনীর অফিসারদের মতে, বৈসরন উপত্যকা এবং অন্য কয়েকটি এলাকার পাহাড়-জঙ্গলে ভরা এলাকায় জঙ্গিদের খোঁজ পেতে আকাশপথে নজরদারি একান্ত প্রয়োজন। এক অফিসারের কথায়, ‘‘বাহিনী উদয়াস্ত কাজ করছে। বৈসরনের আশপাশের এলাকায় ভূপ্রকৃতির জন্য তল্লাশি চালানো কঠিন। প্রতিটি ইঞ্চি জুড়ে তল্লাশি চালানো হবে।’’ তবে পর্যটকদের উপরে হামলাকারী জঙ্গিদের কোনও খোঁজ এখনও মেলেনি।
গত কাল রাতেও নিয়ন্ত্রণ রেখার বিভিন্ন এলাকায় গুলি চালিয়েছে পাক সেনা। জবাব দিয়েছে ভারতীয় সেনাও। বৈসরনে হামলাকারী জঙ্গিদের নিরাপদে ফেরানোর জন্যও নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্য অংশে গুলি ছুড়তে পারে পাক সেনা।
অন্য দিকে গুরুতর অভিযোগে আজ কাশ্মীরের এক টাট্টুচালককে আটক করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। বৈসরনে পর্যটকদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হন টাট্টুচালক সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ। কিন্তু এর ঠিক বিপরীত ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে আয়াজ় আহমেদের বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশের এক পর্যটক দলের সদস্য জৌনপুরের একতা তিওয়ারির অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে আটক করেছে গান্ডেরবাল পুলিশ। একতা অভিযোগে জানিয়েছেন, ২০ এপ্রিল পহেলগাম যাওয়ার সময়ে বৈসরনের কাছেই তাঁরা কয়েক জন সন্দেহজনক ব্যক্তির মুখোমুখি পড়েন। তাঁর দাবি, ঘোড়ায় ওঠার সময়ে দু’জন তাঁদের কাছে এসে তাঁদের ধর্ম কী ও দলে তাঁরা কত জন আছেন তা জানতে চায়। একতার দাবি, ‘‘ওরা আমাদের কোরান পড়তে বলেছিল। আমার ভাই কেন রুদ্রাক্ষ পরে আছে তাও জানতে চেয়েছিল।’’ তার পরে তাঁদের সঙ্গে ওই ব্যক্তিদের তর্কাতর্কি শুরু হয় বলে দাবি একতার। ওই ব্যক্তিরা পিছু হটে গেলে তাঁরা অন্য টাট্টুচালকদের কাছে যান। একতার আরও অভিযোগ, তর্কাতর্কির পরেই ওই ব্যক্তিদের মধ্যে এক জন ফোনে সাঙ্কেতিুক ভাষায় কথা বলতে থাকে। যার অর্থ দাঁড়ায়, পরিকল্পনা ব্যর্থ। উপত্যকায় ৩৫টি বন্দুক পাঠাতে বলে সে। একতার দাবি, ওই ব্যক্তিদের এক জনের সঙ্গে এক ‘ওয়ান্টেড’ জঙ্গির মিল আছে। তাঁর কাছে সেই ব্যক্তির ছবিও আছে বলে দাবি করেন একতা। একতার বিবরণের ভিত্তিতে ওই ব্যক্তিদের এক জন সন্দেহে আহমেদকে আটক করেছে পুলিশ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)