করোনাকালে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছিল। —ফাইল ছবি।
সরকারি তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি মানুষ ভারতে করোনার প্রথম ঢেউয়ে মারা গিয়েছেন বলে ফের বিতর্ক তৈরি করল একটি আন্তর্জাতিক জার্নাল। ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ নামে ওই জার্নালে দাবি করা হয়েছে, করোনার প্রথম বছরে ভারতে কোভিডে যত জনের মৃত্যু হয়েছিল, তার চেয়ে অন্তত ১২ লক্ষ মৃত্যু কম দেখানো হয়েছে। যদিও ওই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, খুব অল্প সংখ্যক নমুনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকেরা। যা আদৌও ঠিক নয়। তা ছাড়া ভারতে জন্ম-মৃত্যুর পঞ্জিকরণ ব্যবস্থা যথেষ্ট নিখুঁত। এত লোকের মৃত্যু নথিভুক্ত হবে না, তা অসম্ভব।
করোনা কালে ভারতে নথিভুক্তহীন মৃত্যু হয়েছে— এমন দাবি প্রথম নয়। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে করোনায় পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। সেখানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র দাবি, মৃতের সংখ্যা সরকারি হিসাবের অন্তত দশগুণ বেশি। প্রায় পঞ্চাশ লক্ষের কাছাকাছি। বিরোধীদের অভিযোগ, করোনায় মৃত্যু লুকোতে নরেন্দ্র মোদী সরকার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গণচিতায় মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয়। নদীতে ভাসিয়ে বা নদীর চরে লাশ পুঁতে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রিপোর্টে, সংসদে বিরোধীরা ওই দাবি করলেও তা মানতে চায়নি সরকার। সরকারের মতে, মৃতের সংখ্যা নির্ণয়ে পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে হু-র।
বাজেট অধিবেশনের আগে ফের করোনায় মৃত্যু-সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এ বারে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্স’ জার্নালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউ ইয়র্কের দ্য সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি দলের দাবি, ২০২০ সালে ভারতে করোনায় নথিভুক্ত মৃত্যুর চেয়ে ১১.৯ লক্ষ বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। এই কাজে ভারত সরকারের জাতীয় পরিবার সমীক্ষা-৫ (২০১৯-২১) সালের তথ্য ব্যবহার করেছেন তাঁরা। রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনার প্রথম বছরে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয় ভারতে। সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২০-তে দেশে ১.৪৮ লক্ষ মানুষ করোনায় মারা যায়। অথচ, গবেষকদের মতে ওই সময়ে দেশে প্রায় ১২ লক্ষের কাছাকাছি করোনায় মৃত্যু লুকিয়েছে সরকার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পুরুষদের থেকে অনেক বেশি সংক্রমিত হন মহিলারা। করোনায় ভারতে গড় আয়ু কমেছে। এর মধ্যে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের আয়ু প্রায় ১.৩ বছর কমেছে। মুসলিমদের আয়ু কমেছে ৫.৪ বছর। সব মিলিয়ে ১৪টি রাজ্যের ৭.৬ লক্ষ পরিবারের উপরে ওই সমীক্ষা চালিয়েছিলেন গবেষকেরা। যাঁরা ভারতের প্রায় সিকি ভাগ জনতার প্রতিনিধিত্ব করে বলে দাবি গবেষকদের। যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, ওই সংখ্যক মানুষ আদৌও গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব করে না। তা ছাড়া গবেষকদের পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে বলে দাবি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। রিপোর্টে ২০২১-এর সমীক্ষাকে ধরা হলেও, ২০২০ বা ২০১৯ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়নি বলে ওই গবেষণাকে পক্ষপাতদুষ্ট বলে দাগিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। তা ছাড়া রিপোর্টে অতিরিক্ত ১২ লক্ষ মৃত্যু এবং তা নথিভুক্ত হয়নি বলে মানতে চাননি নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) বিনোদ পল। তিনি বলেন, “ভারতের জন্ম-মৃত্যু নথিভুক্তকরণ ব্যবস্থা দেশের ৯৯% মৃত্যুকে নথিভুক্ত করে থাকে। সেই অনুযায়ী ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০ সালে ৪.৭৪ লক্ষ অতিরিক্ত মানুষ মারা গিয়েছিলেন। যাদের একটি বড় অংশের মৃত্যুর কারণ করোনা। তবে সবাই নয়। তাই ১২ লক্ষ অতিরিক্ত মৃত্যুর পরিসংখ্যান কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy