অমিত শাহ।
ওস্তাদের শেষ রাতের মারে কার্যত হারা ম্যাচ প্রায় পকেটে পুরে নিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। সকালে প্রতিপক্ষের যখন ঘুম ভাঙল, তত ক্ষণে বেহাত হয়ে গিয়েছে মহারাষ্ট্রের মসনদ। শাহের কৌশলে রাজ্যে ক্ষমতায় বিজেপি। যদিও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
গত কাল রাতেই উদ্ধব ঠাকরেকে সামনে রেখে সরকার গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় শিবসেনা-এনসিপি ও কংগ্রেস। ঠিক ছিল, আজ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু শাহের নির্দেশে গত কাল সন্ধ্যায় নিঃশব্দে দিল্লি থেকে মুম্বই উড়ে যান মহারাষ্ট্র ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভূপেন্দ্র যাদব। বিজেপি সূত্র বলছে, গত এক মাসে শাহ নীরব ছিলেন ঠিকই, কিন্তু তলে তলে সরকার গড়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত কাল গোটা দেশের রাজ্যপালেরা বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে দিল্লি এলেও মহারাষ্ট্রেই থেকে যান ভগৎ সিংহ কোশিয়ারী। বিজেপি সূত্র বলছে, রাজ্যপালের থেকে যাওয়াতেই স্পষ্ট, অপারেশনের ছক কষা হয়ে গিয়েছিল আগেই।
অপারেশন মহারাষ্ট্রে শাহ ঘুঁটি করেছিলেন এনসিপি নেতা তথা শরদ পওয়ারের ভাইপো অজিত পওয়ারকে। অজিতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগে তদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, শরদের পরে দলে ক্ষমতা দখলের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই উদ্গ্রীব অজিত। এই অবস্থায় এনসিপি ভাঙাতে তাঁকে উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রতিশ্রুতি দেন ভূপেন্দ্র। তদন্তের জুজু এবং এনসিপিতে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ার কারণে অজিত রাজিও হয়ে যান। তিনি বিজেপি-কে এই বলে আশ্বস্ত করেন যে, তাঁর সঙ্গে অন্তত ৩৫ জন বিধায়ক রয়েছেন। তার পরেই ঠিক হয় মাঝ রাতেই সরকার গড়ার দাবি জানাবে বিজেপি।
রাত দশটার পরে মোবাইল বন্ধ করে দিতে বলা হয় অজিতকে। সরকার গড়ার খবর চেপে যাওয়া হয় বিজেপি বিধায়কদের কাছেও। শাহের নির্দেশে রাত দু’টোয় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সরকার গড়ার দাবি জানান দেবেন্দ্র ফডণবীস। দ্রুত রাজ্যপালের সুপারিশ চলে আসে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সুপারিশ পাঠিয়ে দেন রাষ্ট্রপতির কাছে। যার ভিত্তিতে ভোরেই রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নেন রামনাথ কোবিন্দ। বেলা আটটায় মুখ্যমন্ত্রী পদে ফডণবীস ও উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন অজিত।
গোয়া থেকে কর্নাটক। মণিপুর থেকে অরুণাচল। কিংবা হালে হরিয়ানা। সম্প্রতি সরকার গড়ার প্রশ্নে বরাবরই দলের মুশকিল আসান হয়েছেন শাহ। তাঁর কূটকৌশলে পরাস্ত হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বিরোধীদের। কিন্তু সেই অমিতই মহারাষ্ট্র প্রশ্নে মুখে কুলুপ দিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল তাঁর ‘চাণক্য’ মর্যাদা নিয়েও। গত এক মাসে এক বারই সরকার গড়া নিয়ে মুখ খুলেছিলেন তিনি। তাও সংসদ শুরুর আগে সর্বদলীয় বৈঠকে। মহারাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে এনডিএ শরিক নেতা রামদাস অটওয়ালের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’
শাহের নীরবতা বিরোধীদের একাংশের কাছে অশনি সঙ্কেত হলেও, প্রাক্তন শরিক শিবসেনা বুক ঠুকে বলে আসছিল, শাহকে রাজনৈতিক ভাবে দুরমুশ করে দেওয়াটাই তাদের লক্ষ্য। কারণ, তাঁর মিথ্যাভাষণের জন্যই বিজেপি-শিবসেনা জোট ভেঙে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রিত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখতে চাননি তিনি।
কিন্তু আজ ফের স্বমহিমায় শাহ। মুম্বইয়ের বাসিন্দা, লেখিকা শোভা দের টুইট, ‘দেশে বা বিদেশে সরকার গড়ার জন্য যোগাযোগ করুন— মোটা ভাই, গুজরাতওয়ালে।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy