ফাইল চিত্র।
১৬ মে: তিনি কোথায়?
বাংলা-সহ পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফলপ্রকাশের পরে সেই যে তিনি চোখের আড়াল হলেন, তার পর থেকে তাঁর আর দেখা মেলেনি। দিল্লি পুলিশের কাছে কংগ্রেসের ছাত্র নেতারা তাঁর সন্ধানে ‘মিসিং ডায়েরি’ পর্যন্ত করেছেন। তবে জানা গেল, তিনি দিল্লির বাড়িতেই রয়েছেন। রবিবার ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকও করেছেন।
বিজেপি নেতারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের ফলাফল নিয়ে দলের অন্দরে আসল ঘূর্ণিঝড় আপাতত ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ ঝড় উঠলেই তা অমিত শাহের দিকে ধেয়ে যাবে। বিজেপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, “আরএসএসের মুখপত্রে এই ঝড়ের পূর্বাভাস মিলেছে। যে ভাবে বিজেপির হারের জন্য তৃণমূল থেকে লোক ভাঙিয়ে আনার দিকে আঙুল তোলা হয়েছে, তাতেই স্পষ্ট, দলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের হারের কারণ নিয়ে ময়নাতদন্ত হলে ঝড় উঠবে।”
কেন? বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, আরএসএস নেতৃত্বের মধ্যে তৃণমূলের নেতাদের বিজেপিতে ভাঙিয়ে আনার ব্যাপারে প্রথম থেকেই সংশয় ছিল। এখন ভোটের ফলাফলের পরে সেটাই প্রকাশ্যে এসেছে। যেটা বলা হচ্ছে না, তা হল, অমিত শাহের নেতৃত্বেই তৃণমূলের একের পর এক নেতা বিজেপিতে এসেছেন। পশ্চিমবঙ্গের এক আদি বিজেপি নেতার মতে, “বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগে তৃণমূলের ওজনদার নেতাদের শর্তই থাকত, তাঁরা অমিত শাহের হাত থেকে ঝান্ডা নেবেন। পরে দেখা গিয়েছে, তৃণমূলের চুনোপুঁটি নেতানেত্রী, অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও চাটার্ড প্লেনে চাপিয়ে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাঁরাও অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন।”
পশ্চিমবঙ্গের ভোটে কার্যত অমিত শাহই বিজেপিকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভোটের ফলাফল সম্পর্কে ‘বিজেপির চাণক্য’-র কোনও পূর্বাভাসই মেলেনি। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, এই সব অস্বস্তিকর প্রশ্ন এড়াতেই অমিত শাহ আপাতত চোখের আড়ালে রয়েছেন। গোটা বিষয়টা ধামাচাপা পড়ে গেলেই তিনি ফের সংগঠনে সক্রিয় হবেন। আপাতত পশ্চিমবঙ্গে পুরো নজরটাই তৃণমূলের হিংসার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
পাঁচ বিধানসভা ভোটের আগে ফেব্রুয়ারি মাসে চার রাজ্যে ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নিয়োগ করা হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ভোটের জন্য সার্বিক ভাবে কাউকে নিয়োগ করা হয়নি। বকলমে অমিতই দায়িত্বে ছিলেন। তিনিই গোটা রাজ্য ঘুরে প্রচার করেছেন। ভোটের আগেই বিজেপির অন্দরে প্রশ্ন উঠেছিল, দল জিতলে শাহই সাফল্যের কৃতিত্ব পাবেন। কিন্তু হারলে তার দায় কে নেবেন?
বিজেপির অন্দরমহলে এখন তার থেকেও বড় প্রশ্ন, গোটা বাংলা চষে, প্রতি দিন দলের ছোট-বড় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেও শাহের পূর্বাভাস মিলল না কেন? প্রথম থেকেই প্রত্যেক দফা ভোটের পরে অমিত বিজেপি কত আসন জিতছে, তার পূর্বাভাস দিয়েছেন। একটিও মেলেনি। এক বিজেপি নেতা বলেন, “দলকে চাঙ্গা রাখতে, কর্মীদের মনোবল বাড়াতে সব নেতাকেই জয়ের স্বপ্ন দেখাতে হয়। আগেও বহু ভোটে অমিতজির পূর্বাভাস মেলেনি। কিন্তু বাংলায় অমিতজি একেবারে আসনসংখ্যা ধরে ধরে পূর্বাভাস করেছেন। ফলে তাঁর কথার বিশ্বাসযোগ্যতাই প্রশ্নের মুখে।”
তা বলে কি অমিত শাহকে বিজেপির অন্দরে দায়বদ্ধ করা সম্ভব? বিজেপি নেতারা তা মনে করেন না। তাঁদের বক্তব্য, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মোদী সরকারে যোগ দেওয়া ও তার পরে বিজেপির সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও অমিত শাহই গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা ভোটে, দলের কাজকর্মে প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন। এখনও দলে তাঁর কর্তৃত্ব প্রশ্নাতীত। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মধ্যে বিবাদও তিনিই মিটিয়েছেন। তাই বাংলার ভোটে ভরাডুবি হলেও শাহের কর্তৃত্ব খর্ব হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy