কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি পিটিআই।
বদলাচ্ছে অপরাধের সংজ্ঞা, সীমানাও। বিশেষ করে সাইবার ক্রাইম, সন্ত্রাস, মাদক পাচারের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে রাজ্যের পাশাপাশি তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। সেই কারণে আগামী দিনে এ ধরনের অপরাধ রুখতে রাজ্যগুলিকে এনআইএ-র সঙ্গে বোঝাপড়া করে এগোনোর পরামর্শ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
শুধু পরামর্শেই থেমে না থেকে শাহ এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের সঙ্গে সহযোগিতা বিধিবদ্ধ করতে প্রয়োজনে আইনও আনতে পারেন তাঁরা। সেই সঙ্গে ভারতীয় দণ্ডবিধিতে বেশ কিছু সংস্কারের পথেও হাঁটছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ দিন ঘোষণা করেন, ২০২৪ সালের মধ্যে দেশের সব রাজ্যে এনআইএ-র দফতর খোলা হবে। আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও যে ভাবে রাজ্যে ঘটে যাওয়া অপরাধের তদন্তে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় রাজ্যের অধিকারের উপরে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ বলে সরব রয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের রাজ্যসভার মুখ্যসচেতক সুখেন্দুশেখর রায় যেমন এ দিন বলেন, “অমিত শাহের আজকের ইঙ্গিতে স্পষ্ট— কেবল আইনশৃঙ্খলা নয়, সাংবিধানিক, বিচারব্যবস্থা-সহ সব কিছুকেই দখল করার অভিপ্রায় নিয়ে এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের কর্তৃত্ববাদী সরকার।”
আজ রাজধানী সংলগ্ন ফরিদাবাদের সুরজকুণ্ডে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা নিয়ে দু’দিনের সম্মেলন শুরু হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ কর্তা, গোয়েন্দা বাহিনীর প্রধান, আধা সামরিক বাহিনীর ডিজি-র উপস্থিতিতে আজ বিকালে ওই সম্মেলনের সূচনা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকে গত আট বছরে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী দিনে সরকারের দিশা নির্দেশ কী হতে চলেছে, তারও ইঙ্গিত দেন অমিত শাহ। সংবিধান অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব রাজ্যের হাতে থাকলেও, সন্ত্রাস, মাদক, দেশবিরোধী কার্যকলাপ, সাইবার অপরাধের মতো ঘটনায় কেন্দ্র যে রাজ্যের অধিকারের বাইরে গিয়ে প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবে, তা আজ কার্যত বুঝিয়ে দেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, এমন কিছু অপরাধ রয়েছে যার কোনও নির্দিষ্ট সীমা থাকে না। সে ধরনের অপরাধ মোকাবিলায় কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। যে সমস্ত অপরাধ কোনও একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক গণ্ডিতে আটকে থাকে না, যে অপরাধের শিকড় আন্তঃরাজ্য বা আন্তঃদেশ— সেগুলির তদন্তে রাজ্যকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি। তিনি মনে করিয়ে দেন, সেই কারণে সম্প্রতি সংসদে বিল এনে এনআইএ-কে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির আরও নানা সংস্কারমুখী আইন খুব দ্রুত সংসদে নিয়ে আসা হবে বলেও জানিয়েছেন অমিত শাহ। একই সঙ্গে ২০২৪ সালের মধ্যে সব ক’টি রাজ্যে এনআইএ-র দফতর খোলা হবে বলেও জানান শাহ। তাঁর দাবি, ওই দফতর খোলা হলে সুবিধে পাবে রাজ্যও। গোটা দেশ জুড়ে এনআইএ যে অপরাধীর তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছে তার মাধ্যমে অপরাধীর শনাক্তকরণে সুবিধা পাবে রাজ্য পুলিশও। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা যে আর রাজ্যের হাতে থাকবে না, দিল্লিই তা নিয়ন্ত্রণ করবে এমন ইঙ্গিত দিতে চাইছেন অমিত শাহ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাল্টা যুক্তি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে যাতে কেন্দ্র-রাজ্য আরও সুসংহত ও সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে এগোতে পারে সেই সওয়ালই করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখরের পাল্টা যুক্তি, “নিজেদের কর্তৃত্ব বজায় রাখতে, বিরোধীদের কব্জা করতেই এ ভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সির হয়ে সওয়াল করা হয়েছে। এদের লক্ষ্য হল যেনতেন ভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে দিয়ে বিরোধী স্বরকে স্তব্ধ করা। শুধু রাজনৈতিক দল নয়, কোনও ব্যক্তি যদি কেন্দ্র বিরোধিতায় সরব হন, তাহলে তিনিও কেন্দ্রীয় এজেন্সির শিকার হচ্ছেন। দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ বা ‘টুকরে টুকরে গ্যাং’-এর সদস্য হিসাবে।’’
লক্ষ্মীপুজোর দিন কলকাতার মোমিনপুরে হওয়া গোষ্ঠী সংঘর্ষ, দিন কয়েক আগে তামিলনাড়ুর কোয়ম্বত্তূরে হওয়া গাড়ি বিস্ফোরণের তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা। বিরোধীদের মতে, রাজ্যে হওয়া যে কোনও স্পর্শকাতর মামলাই এনআইএ বা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার একটি প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ফলে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলায় পরোক্ষে হস্তক্ষেপ বাড়ছে কেন্দ্রের। আর এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। অন্য দিকে কেন্দ্রের পাল্টা যুক্তি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কিংবা ২০১৪ সালে লোকসভার ঠিক আগে পটনার গান্ধী ময়দানে নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জনসভায় হওয়া বিস্ফোরণ সামান্য ঘটনা বলে প্রথমে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল দু’রাজ্যের প্রশাসন। পরে জানা যায় ওই দুই ঘটনার সঙ্গে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। কেন্দ্রের যুক্তি, সেই কারণে সন্ত্রাসের সঙ্গে যোগ থাকতে পারে এমন মামলাগুলির তদন্ত দ্রুত হাতে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনআইএ। তা ছাড়া এনআইএ এ ধরনের কাজের জন্য সুন্দরভাবে প্রশিক্ষিত। রাজ্য পুলিশের ওই মানের প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা নেই। সে কারণে ঘটনাগুলির সুষ্ঠু তদন্তেই নির্দিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়ে থাকে। অমিত শাহের কথায়, “স্পর্শকাতর ঘটনাগুলির ক্ষেত্রে আঞ্চলিক ভাবে কোনও তদন্তে এগোনোর চেয়ে সার্বিক ভাবে এগোনোর চেষ্টা করছে কেন্দ্র। এ জন্যকে সব রাজ্যের পড়শি রাজ্যগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলাই কাম্য। আর ইনটেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), এনআইএ-র মতো সংস্থাগুলি সবাই এ ধরনের কাজে রাজ্যগুলিকে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy