Advertisement
E-Paper

Amit Mitra: বাড়ছে বেকারত্ব, বাজারে কমছে বিক্রিবাটা, কেন্দ্রের অস্ত্রেই কেন্দ্রকে বিঁধলেন অমিত

অমিত মিত্র তাঁর চিঠিতে একে ‘প্যারাডক্স’ বা আপাত ভাবে অসম্ভব মনে হলেও সত্যি বলে আখ্যা দিয়েছেন।

অমিত মিত্র। ফইল চিত্র।

অমিত মিত্র। ফইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৭:৩৩
Share
Save

অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে বিজেপির মন্ত্রী-নেতারা উল্লাস প্রকাশ করছেন। অথচ বেকারত্ব বাড়ছে, কারখানা থেকে কাজ হারিয়ে মানুষ চাষআবাদ করতে গ্রামে ফিরছেন, মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় মানুষের কেনাকাটার ক্ষমতা কমছে, ফলে বাজারেও বিক্রিবাটা কমছে, কেনাকাটার উৎসাহ তলানিতে কমছে। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের সে দিকে নজর নেই।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে বাস্তবের এই আর্থিক পরিস্থিতি দেখিয়ে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র আজ দাবি তুললেন, মোদী সরকার সাধারণ মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দিয়ে বাজারে চাহিদা তৈরির চেষ্টা করুক। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো রাজ্যের প্রকল্পের দিকে ইঙ্গিত করে অমিত মিত্র জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঠিক এই কাজটিই করছে।

সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে কড়া ভাষায় চিঠি লিখে অমিত মিত্র বলেছেন, ‘আপনার ব্যাঙ্কের ঋণ জোগানে উৎসাহ, কর্পোরেট করে ছাঁটাই সত্বেও বেসরকারি সংস্থার লগ্নি কমেছে। এ থেকে স্পষ্ট যে আপনাদের কারখানার উৎপাদন বাড়িয়ে, জোগান বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাজারে চাহিদা না বাড়লে, শিল্পমহল লগ্নি করার আত্মবিশ্বাস পায় না।’ অমিতের অভিযোগ, কেন্দ্রের এই ‘ব্যর্থ’ ও ‘পুরোপুরি ভুল’ নীতির ফলে আমজনতার দুর্গতি বেড়েছে এবং আগামী বছরে তা আরও বাড়ার আশঙ্কা। বিভিন্ন দিক থেকে সাধারণ মানুষ ধাক্কা খেয়েছেন।

গত বছর কোভিড ও লকডাউনের পরে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মোদী সরকার মূলত ব্যাঙ্ক থেকে সহজে ঋণের জোগান দিয়ে শিল্পমহলকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। কোভিডের আগেই অর্থনীতির ঝিমুনি চলছিল। তা কাটাতে কর্পোরেট কর কমানো হয়। চাহিদা তৈরির বদলে কেন্দ্র বেসরকারি সংস্থাগুলির উৎপাদন বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু অমিতবাবু নির্মলাকে চিঠিতে কেন্দ্রেরই পরিসংখ্যান তুলে ধরে দেখিয়েছেন, ২০১৯-২০-র এপ্রিল-জুনের তুলনায় ২০২১-২২-এর এপ্রিল-জুনে নতুন লগ্নির পরিমাণ ২.১ লক্ষ কোটি টাকা কমেছে। কেন্দ্রের অসংখ্য প্যাকেজ ও কর্পোরেট করে ছাঁটাই সত্ত্বেও।

অমিত মিত্র তাঁর চিঠিতে একে ‘প্যারাডক্স’ বা আপাত ভাবে অসম্ভব মনে হলেও সত্যি বলে আখ্যা দিয়েছেন। একইসঙ্গে গত এপ্রিল-জুনে আর্থিক বৃদ্ধির হার নিয়ে যে ভাবে সরকারের ‘বাজনাদার’-রা ঢাক পেটাচ্ছেন, তাঁকেও ‘প্যারাডক্স’ বলে অমিতবাবু কটাক্ষ করেছেন। গত বছর লকডাউনের ধাক্কায় এপ্রিল-জুনে জিডিপি প্রায় ২৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। সেই তুলনায় জিডিপি এ বার প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। নিচু ভিতের তুলনায় এ বারের আর্থিক বৃদ্ধি অনেক বেশি দেখালেও বাস্তবে জিডিপি আগের স্তরে ফেরেনি। অমিত নির্মলাকে বলেছেন, বাস্তবে ২০১৯-২০-র তুলনায় ২০২০-২১-এ জিডিপি ৭.৭৯ শতাংশ কম। নির্মলাকে অমিত বলেছেন, “আপনাকে অনুরোধ করেছি, সরকারের স্পিন ডক্টরদের সংযত করুন, যাতে বাস্তবটা স্পষ্ট ভাবে মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে।’’

কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীর এই চিঠির জবাবে আজ মুখ খোলেনি। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের সূত্র বলছে, অমিতবাবু কেন্দ্রীয় সরকার, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যান তুলে ধরেই কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন। ফলে এর জবাব দেওয়া কঠিন।

রাজনীতিকরা মনে করছেন, অর্থনীতির প্রশ্নের সঙ্গে অমিত মিত্রর এই চিঠি ভবানীপুর ও অন্যান্য বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনের প্রেক্ষাপটও তৈরি করে রাখল। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মমতার সরকারের সমালোচনা করতে এলে, রাজ্য সরকারের হয়ে আগেভাগেই তার পাল্টা জবাব দিয়ে রাখলেন অমিত মিত্র। তিনি এক দিকে কেন্দ্রের সমালোচনা করলেন। অন্য দিকে রাজ্য সরকার যে সাধারণ মানুষের হাতে টাকা তুলে দিয়ে বাজারে চাহিদা তৈরির চেষ্টা করছে, তা-ও জানিয়ে রাখলেন।

মানুষের দুর্গতির চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে অমিতবাবু পাঁচটি বিষয়ে মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এক, নিদারুণ বেকারত্ব। অগস্ট মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৮.২৩ শতাংশ। যার অর্থ, ৩.৬ কোটি মানুষের কোনও রোজগার নেই। আজিম প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, সংগঠিত ক্ষেত্রের অর্ধেক কর্মী কোভিড পর্বে অসংগঠিত ক্ষেত্রে সরে গিয়েছেন। দুই, অভূতপূর্ব হারে কারখানার কর্মীদের গ্রামে ফিরে চাষের কাজ করে পেট চালানোর চেষ্টা। এই ‘রিভার্স মাইগ্রেশন’ বলছে, অ-কৃষি ক্ষেত্রে আর রোজগার হচ্ছে না। তিন, পাইকারি ও খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির জেরে মানুষের আসল আয় ও ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া। চার, কেনাকাটা কমে যাওয়া। গত এপ্রিল-জুনে তার আগের বছরের তুলনায় কেনাকাটা ১২ শতাংশ কমেছে। পাঁচ, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সিএমআইই-র সমীক্ষা অনুযায়ী কেনাকাটায় উৎসাহ কমে যাওয়া। যা থেকে স্পষ্ট, মানুষের মধ্যে নৈরাশ্য তৈরি হয়েছে। অমিতের বক্তব্য, ‘সাধারণ মানুষের উপরে এই সব ধাক্কা থেকে বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্রের জোগান বাড়ানোর নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।’

Amit Mitra TMC

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।