স্ত্রী চন্দ্রিকার সঙ্গে লেখক।
আগেও তিন বার অমরনাথে এসেছি। কিন্তু এ বছর যে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, ভাবিনি।
২৮ জুন জম্মু থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল। বীরভূমের সিউড়িতে বাড়ি হলেও কর্মসূত্রে দিল্লির বাসিন্দা আমি। এক দিন আগেই দিল্লি থেকে জম্মু পৌঁছে যাই। কিন্তু ২৮শে আর বেরোনো হল না। আবহাওয়া খুব খারাপ। তিন দিন হোটেলেই কেটে গেল। ১ জুলাই শেষমেশ পহেলগাম থেকে রওনা হলাম। সঙ্গে স্ত্রী চন্দ্রিকা।
পহেলগাম থেকে চন্দনবাড়ি বাসে চলে যাই। সেখান থেকে হেঁটে শেষনাগ। ১ তারিখ রাতে ওখানেই থেকে যাই। পরের দিন পৌঁছই পঞ্চতরণী। গোটা রাস্তা বৃষ্টি লেগেই ছিল। থামলেও কিছু ক্ষণের জন্য। ৩ জুলাই অমরনাথের গুহায় পৌঁছই। এত ভাল দর্শন আগের ক’বার পাইনি। মনটা তাই ভাল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পরের অভিজ্ঞতাটা যে এমন হবে, কল্পনাও করিনি। গুহা থেকে নামার পথেই চোখে পড়ল সিআরপি মৃতদেহ নিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেট নেই, ফোনেও সব সময় কানেকশন থাকে না। আশপাশে কী ঘটছে, কিছুই জানতে পারিনি তার আগে। পঞ্চতরণীতে এসে শুনলাম মঙ্গল-বুধবারে ধসে চাপা পড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন এক বাঙালি। শুনেছিলাম, পাঁচ জন জখম হয়েছেন। তাঁরাও নাকি মারা গিয়েছেন।
এ দিকে, পঞ্চতরণী থেকে আর নামার পথ নেই। বৃষ্টিতে ধস নেমে বালতালের রাস্তা বন্ধ। সেই থেকে তিন দিন এখানেই আটকে রয়েছি। আটকে আমাদের মতো হাজার তিনেক মানুষ। অথচ এত লোকের নিরাপত্তার জন্য জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের জনা দশেক কর্মী ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়ল না। সিআরপি ভীষণ সাহায্য করছে। কিন্তু তাতে প্রশাসনের অব্যবস্থা ঢাকে না। এমনিতেই পাহাড়ে খাবারের দাম বেশি। তার মধ্যে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এক দল লোক খাবার, পানীয় জল থেকে ঘোড়া, তাঁবুর জন্য দ্বিগুণ, তিন গুণ দাম হাঁকছেন। হাতে আর কে কত টাকা নিয়ে আসে? টাকা না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকে খোলা আকাশের নীচে বরফঠান্ডা রাত কাটাচ্ছেন। মাটিতে প্লাস্টিক কিংবা পিচবোর্ড পেতে শুচ্ছেন।
আজ সকালে হঠাৎই ঘোষণা করা হল, বালতালের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে এক দল লোক বেরিয়ে গেলেন। মনটা খুঁতখুঁত করছিল, তাই আমরা আর যাইনি। এক ঘণ্টা পরেই ফের ঘোষণা, ‘‘বালতালের রাস্তায় ধস নেমেছে। কেউ যাবেন না।’’ ওঁরা কোথায়, কী ভাবে আছেন, কে জানে!
আমাদেরই বা কী হবে, জানি না। তিন দিন হয়ে গেল এখানে আটকে। বারবার সিআরপি-র সঙ্গে যোগাযোগ করছি, যদি একটা হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। পহেলগাম হয়ে নামতে হলে ঘোড়া ছাড়া উপায় নেই। কিন্তু ঘোড়াওয়ালারা মাথা পিছু ৬ হাজার টাকা চাইছেন। টাকা তো ফুরিয়ে গিয়েছে! আজ রাতের তাঁবুর ভাড়াটুকুও পকেটে নেই। যে ছেলেটির থেকে ভাড়া নিয়েছিলাম, তাঁকে অনুরোধ করতে আপাতত থাকতে দেবে বলেছে। বলেছি, দিল্লি ফিরে ওকে অনলাইনে টাকা পাঠিয়ে দেব। কিন্তু এ ভাবেই বা আর ক’দিন!
(লেখক বায়ুসেনার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy