বাসবরাজ বোম্মাই। ফাইল চিত্র।
বড় মাপের উপহারের বাক্স। তাতে সাজানো নানা ধরনের শুকনো ফল আর এক গোছা নোট। কোনও গোছায় এক লক্ষ টাকা, আবার কোনওটাতে আড়াই লক্ষ পর্যন্ত!
অভিযোগ, এ বছর দীপাবলি উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের তরফ থেকে এমনই ‘উপহার’ গিয়েছে রাজ্যের বাছাই করা সাংবাদিকদের কাছে। কোনও কোনও সংবাদমাধ্যমের মালিক বা সম্পাদকও তা পেয়েছেন। একাধিক সাংবাদিক সেই উপহার ফিরিয়ে দিয়ে বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে সামনে আনার পরেই নতুন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে দক্ষিণের একমাত্র বিজেপিশাসিত রাজ্য কর্নাটকে। এমনিতেই কর্নাটকে বিজেপি শাসনে সরকারি চাকরি বা ঠিকেদারিতে আর্থিক দুর্নীতি ও তার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি যোগের অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বোম্মাইকে নিশানা করছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস। আর্থিক লেনদেনের অ্যাপ পেটিএম-এর আদলে কটাক্ষ করে বোম্মাইয়ের ছবি-সহ ‘পেসিএম’-এর লোগো ছেপে রাজ্য জুড়ে প্রচার করছে তারা। তার মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর তরফে দীপাবলির নয়া ‘উপহার’ আগামী বছর বিধানসভা ভোটের আগে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে কংগ্রেসকে।
অস্বস্তির মুখে সব অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই দাবি করলেন, ‘‘এ সব কংগ্রেসের মিথ্যে প্রচার!’’ এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘টুলকিট বানিয়ে এ সব মিথ্যে প্রচার চালাচ্ছে কংগ্রেস। আমি কখনওই কাউকে এমন দিতে বলিনি।’’ বিষয়টি নিয়ে কর্নাটকের লোকায়ুক্তের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বোম্মাইয়ের দাবি, ঠিক মতো তদন্ত হলেই সব জানা যাবে। পাশাপাশি কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকাকালীন সাংবাদিকদের ল্যাপটপ, আইফোন, সোনার মুদ্রার মতো বহুমূল্য উপহার দিত বলেও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
বোম্মাইয়ের অস্বীকার আর এই পাল্টা অভিযোগকে অবশ্য মোটেই গুরুত্ব দিচ্ছে না কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা। রাহুল গান্ধীর ভারত জোড়ো যাত্রা কিছু দিন আগেই শেষ হয়েছে কর্নাটকে। সেই যাত্রায় নতুন জোয়ারে ভাসছে কর্নাটক কংগ্রেস। উজ্জীবিত সিদ্দারামাইয়া, ডি কে শিবকুমারেরা আগামী বছর বিধানসভা ভোটের অঙ্ক কষতে ব্যস্ত। তার মধ্যে বোম্মাইয়ের বিরুদ্ধে ওঠা নতুন অভিযোগ বিজেপির দুর্নীতি নিয়ে নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে কংগ্রেসের হাতে। বোম্মাইয়ের বক্তব্যের জবাবে কংগ্রেসের কটাক্ষ, ‘‘পেসিএম মুখ্যমন্ত্রী নিজের অপরাধ ঢাকতে মিথ্যে কথা বলছেন! বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হলেই সব সত্যি ধরা পড়বে।’’
বিজেপি জমানায় কর্নাটকে সরকারি কাজের বরাত পেতে গেলে বরাতমূল্যের ৪০ শতাংশ ‘ঘুষ’ দিতে হয় বলে এর আগে অভিযোগ তুলে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন রাজ্যের এক ব্যবসায়ী। বিষয়টি পরে ধামাচাপা পড়ে য়ায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে সামাজিক মাধ্যমে কংগ্রেসের অনেকে কটাক্ষ করে বলেছেন, দীপাবলির উপহারের টাকা থেকে বোম্মাই কি ৪০ শতাংশ কেটে নিয়েছেন?
বিরোধী নেতা এবং নেটিজেনদের একাংশের বক্তব্য, কর্নাটকের বিজেপি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। অনেকের অভিযোগ, কয়েক দশক আগে বল্লারির রেড্ডি ভাইদের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার কোটি টাকার খনি কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলেও তা ধামাচাপা পড়ে যায় রেড্ডি ভাইদের সঙ্গে প্রয়াত বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঘনিষ্ঠতার কারণে। তার পরেও একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে। এ যাত্রায় চূড়ান্ত আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে পরপর কয়েকটি যৌন কেলেঙ্কারি কর্নাটকের বিজেপি সরকারকে বড় চাপে ফেলেছে।
বিধানসভা ভোটের আগে নতুন কোনও কেলেঙ্কারি যাতে সামনে না আসে, তাই সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করতে টাকার টোপ দিয়েছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, অভিযোগ বিরোধীদের। যা নিয়ে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিকে ব্যঙ্গ করে ক’দিন আগেই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, ‘‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা, পর জরুর খিলাউঙ্গা!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy