ভোট-গণনার প্রস্তুতি। আগরতলার উমাকান্ত অ্যাকাডেমিতে। ছবি: বাপী রায়চৌধুরী
দুপুর থেকে প্রায় আচমকাই সেজে উঠতে শুরু করেছে বিজেপির রাজ্য দফতর। সিপিএম তাদের দলের এবং গণ-সংগঠনের দফতরে এনে রাখতে শুরু করেছে গণনার এজেন্টদের। প্রদেশ কংগ্রেস ভবন আগলাচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তিপ্রা মথা-র সর্বোচ্চ নেতা ‘মহারাজ’ প্রদ্যোৎ কিশোর দেববর্মা দফায় দফায় কর্মী-সমর্থকদের বার্তা দিচ্ছেন, শেষ ব্যালটটা গোনার আগে পর্যন্ত ময়দান না ছাড়ার!
যাকে বলে রুদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা, সেই অবস্থায় রয়েছে ত্রিপুরা! উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে বিজেপি জোট ফের ক্ষমতায় ফিরবে, নাকি পাঁচ বছরের মধ্যে ফের আর এক বার পরিবর্তন দেখা যাবে, তার উত্তর মিলবে আজ, বৃহস্পতিবার। রাজ্যের ৬০টি আসনের জন্য ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তায় ভোট-গণনা হবে ২১টি মহকুমার গণনা-কেন্দ্রে। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক কিরণ গিত্তে সকলের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি যেমন শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট-প্রক্রিয়া মিটেছিল, তেমন সুষ্ঠু ভাবেই গণনা-পর্ব সম্পন্ন করার জন্য সহযোগিতা করুন।
ত্রিপুরায় এ বার ভোট পড়েছিল প্রায় ৮৯%। বাংলা বা ত্রিপুরার মতো রাজ্যে বিপুল হারে ভোটদান বিরল ঘটনা নয়। কিন্তু এই রাজ্যে গত লোকসভা, পঞ্চায়েত, পুরসভা ও বিধানসভার উপনির্বাচনে বারবার অশান্তি এবং ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সেই প্রেক্ষিতে এ বার বিধানসভা নির্বাচনের দিন কাকভোর থেকে রাত পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে মানুষের ভোট দেওয়ার ‘তাগিদ’ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিরোধী শিবির। আবার শাসক বিজেপির দাবি, ভোটদানের হার থেকে কিছু সিদ্ধান্ত করা যায় না। একাধিক বুথ-ফেরত সমীক্ষা যেমন ইঙ্গিত দিয়েছে, সে ভাবেই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকারে প্রত্যাবর্তন ঘটবে তাদের।
টানা ২৫ বছরের বাম শাসনে ইতি ঘটিয়ে ২০১৮ সালে বিজেপি এবং আইপিএফটি জোট ক্ষমতায় এলেও চার বছরের মাথায় মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে বিপ্লব দেবকে। তাঁর জায়গায় মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মানিক সাহা। বিরোধীদের দাবি, বিজেপির সরকার যে প্রত্যাশা পূরণে ‘ব্যর্থ’, মুখ্যমন্ত্রী বদল করাই তার প্রমাণ! বাংলা থেকে এসে তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী বদল হয়েছে, এ বার সরকারই বদলে যাবে! বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছেন, পরিষেবা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে ত্রিপুরায় ‘হিরা’ মডেল যা কাজ করেছে, তার ভিত্তিতেই রায় দেবেন মানুষ।
এ বারের নির্বাচনের আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনা অতীতের ‘সংঘাত ও তিক্ততা’ সরিয়ে বাম এবং কংগ্রেসের সমঝোতা করে লড়াইয়ের সিদ্ধান্তও। গত বার কংগ্রেসের ভোট কমেছিল প্রায় ৩৮%, ততটাই লাভ হয়েছিল বিজেপির। এ বার বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করে কংগ্রেস তাদের পুরনো ভোটের কতটা জোটের দিকে ফিরিয়ে আনতে পারে, তার উপরে নতুন বিধানসভার সমীকরণ অনেকটাই নির্ভর করবে বলে রাজনৈতিক শিবিরের মত। কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মণ অবশ্য দাবি করছেন, বাম ও কংগ্রেস মিলে পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতার আসন ঘরে আনবে।
জনজাতি এলাকার স্বশাসিত জেলা পরিষদের (এডিসি) ভোটে সাফল্য পেয়ে নজর কেড়েছিল প্রদ্যোতের মথা। জনজাতি ভোটে মথা কী করে, সে দিকেও তীব্র কৌতূহল রয়েছে এ বার। ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি হলে মথা-র সমর্থনই সরকার গড়ার চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে, এমনই মনে করা হচ্ছে। আবার গত পুর নির্বাচনে পাওয়া ভোট তৃণমূল রাখতে পারবে কি না, পরীক্ষা হবে তারও। ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি এবং তৃণমূলের ঝুলিতে একটা-দু’টো আসন খাকলেও তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
ফলপ্রকাশের প্রাক্কালে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে আবেদন করেছেন, ‘‘এই পাঁচ বছরে আমাদের অনেকের ঘর জ্বলেছে, কাজ হারিয়েছে, দলের দফতর আক্রান্ত হয়েছে। যন্ত্রণা ভুলিনি। তার জন্য আইনি পথে লড়াই হবে। কিন্তু কোনও ভাবেই আমরা আইন হাতে তুলে নেব না।’’
একই সুরে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রাজীব ভট্টাচার্যেরও বক্তব্য, ‘‘সরকার আমাদের হওয়া নিয়ে সংশয় নেই। তবে ফলাফল যেমনই হোক, মানুষের রায় আমরা মানব। শান্তির পক্ষেই থাকব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy