Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
UP Assembly Election 2022

Uttar Pradesh assembly elections 2022: ভোটের বহু অঙ্কই মেলেনি অখিলেশের

প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে করা হচ্ছে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও অবধ এলাকার ভাল ফলই দ্বিতীয় বার জয়ের রাস্তা খুলে দিল যোগী আদিত্যনাথের সামনে।

—ফাইল চিত্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২২ ০৫:২২
Share: Save:

অখিলেশ যাদবের পাখির চোখ ছিল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ। কিন্তু দিনের শেষে দেখা গেল, তাঁর সমাজবাদী পার্টি (এসপি) বা জোটসঙ্গী রাষ্ট্রীয় লোক দল নয়, ওই এলাকায় উল্টে আশাতীত ভাল ফল করল বিজেপিই। প্রাথমিক বিশ্লেষণে মনে করা হচ্ছে, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও অবধ এলাকার ভাল ফলই দ্বিতীয় বার জয়ের রাস্তা খুলে দিল যোগী আদিত্যনাথের সামনে। রাজ্যে এসপি-র ভোট বেড়েছে দশ শতাংশ, সেখানে বিজেপির দুই শতাংশ। কয়েক ডজনের বেশি আসন কমলেও শেষ হাসি হেসেছেন যোগীই।

কৃষি আইন নিয়ে বিক্ষোভকে হাতিয়ার করে কৃষিবহুল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের জাঠ বলয়ে ভাল ফল করার লক্ষ্য নিয়েছিলেন অখিলেশ। হাত মেলান রাষ্ট্রীয় লোক দল (আরএলডি) নেতা জয়ন্ত চৌধুরির সঙ্গে। জাঠ-যাদব ও মুসলিম ভোটের সমন্বয়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে কার্যত ঝড় তোলার লক্ষ্য ছিল অখিলেশ-জয়ন্তের। কিন্তু আজ রাত ৯টা পর্যন্ত ভোটগণনায় দেখা যাচ্ছে, প্রথম দু’টি পর্বে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ ও ব্রজভূমির যে ১১৩টি আসনে ভোট হয়েছিল, সেখানে মাত্র পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিরোধী জোট। বাগপত, মুজফ্‌ফরনগর, আলিগড়, গৌতম বুদ্ধ নগরের মতো এলাকাগুলিতে বিজেপির জয়জয়কার। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের একটি বিস্তীর্ণ অংশে কার্যত খাতাই খুলতে পারেনি বিরোধী শিবির। ফলে প্রথম দুই পর্বেই দৌড়ে এগিয়ে গিয়েছিল যোগীর দল। কৃষক-বিক্ষোভ যে বিরোধীদের কাজে আসেনি, তার আরও একটি প্রমাণ লখিমপুরে বিজেপি প্রার্থীর জয়। তুলনায় তৃতীয় পর্বে ইটাওয়া, মইনপুরির মতো ব্রজভূমি তথা যাদব গড়ে কিছুটা হলেও মুখরক্ষা হয়েছে এসপির।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যাদবেরা একজোট হয়ে জোটের আরএলডি তথা জাঠ প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন। কিন্তু যে কেন্দ্রে এসপির হয়ে যাদব প্রার্থী ছিলেন, সেখানে জাঠেদের ভোট অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিজেপির বাক্সে গিয়েছে। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় যাদব প্রার্থীরা সংখ্যালঘু ভোট পেলেও জোটসঙ্গী জাঠেদের ভোটই তাঁদের অধরা থেকে গিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসপির প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে জাঠেদের একাংশের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ কাজ করেছে। আবার ভোটের ঠিক আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, জাঠেদের জন্য বিজেপির দরজা খোলা থাকবে।
এতে পরস্পর-বিরোধী বার্তা গিয়েছিল সংখ্যালঘুদের কাছে। তাঁরা মনে করেছিলেন, ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতিতে জাঠেরা বিজেপিকেই সমর্থন করবেন। তাই জাঠেদের ভোট দিলে বিজেপিরই হাত শক্ত হবে ভেবে আরএলডি প্রার্থীর পরিবর্তে অন্য দলের সংখ্যালঘু প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন মুসলিম ভোটারেরা। ফলে বিরোধী মুসলিম ভোট বিভাজনের ফায়দা তুলেছে বিজেপি। পাশাপাশি মায়াবতীর মুসলিম প্রার্থী দেওয়া, তাঁর আলাদা লড়াইও একাধিক ক্ষেত্রে সামান্য ব্যবধানে বিজেপির প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করেছে।

তবে এসপির মান রেখেছে পূর্বাঞ্চল। আজ়মগড়, মউ, টান্ডা, গোপালপুর, নিজ়ামাবাদ এলাকায় গত বারের চেয়ে ভাল ফল করেছে এসপি। উত্তরপ্রদেশের পূর্বাঞ্চল ওবিসি অধ্যুষিত। যোগী সরকারের পাঁচ বছরের শাসনে ওবিসি সমাজের একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ ছিল। তা প্রভাব ফেলেছে ভোটবাক্সে। মূলত যাদব ও ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের কারণে ওই এলাকায় অন্তত দু’ডজন আসন হারিয়েছে বিজেপি। হেরেছেন বিজেপির ওবিসি মুখ, উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। তাঁকে হারিয়েছেন আপনা দল (কে)-র পল্লবী পটেল।

বিজেপি নেতাদের মতে, করোনার কারণে আর্থিক সঙ্কট, কাজ হারানো, বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু, রাজপুত সমাজের প্রাধান্য, বেওয়ারিশ গবাদি পশুর উপদ্রবের মতো অভিযোগ সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। তাই মহিলারা এ যাত্রায় ঢেলে ভোট দিয়েছেন যোগীকে। মোদীর ঢালাও ছাড় পেয়ে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় বিরোধী স্বরকে ভোটের অনেক আগেই দমন করতে পেরেছিলেন যোগী। ফলে নির্বাচনের সময়ে অন্তর্কলহে ভুগতে হয়নি দলকে। এর পাশাপাশি, করোনার সময়ে দরজায় রেশন, গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি-বাড়ি শৌচাগার বানিয়ে দেওয়ার মতো জনমুখী প্রকল্প যাতে সমাজের একেবারে প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করেছিলেন যোগী। আসন্ন লোকসভা ভোটে জেতার লক্ষ্যে মোদীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে টানা প্রচার, জনসভা এবং শেষ দফায় বারাণসীতে গিয়ে তিন দিন ঠায় বসে থাকা, এ সবই এক ধাক্কায় প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতাকে অনেকটাই মুছে দিতে পেরেছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, অখিলেশ গত পাঁচ বছর ধরে রাজ্যে টানা সক্রিয় ছিলেন না। কোভিড-কালের অব্যবস্থা হোক কিংবা সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভ, লখিমপুর হোক বা হাথরস-উন্নাও, তিনি মাঠে নেমেছেন দেরিতে। অনেক ক্ষেত্রে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরাও টেক্কা দিয়েছেন তাঁকে। ভোটের ফল বোঝাল, উত্তরপ্রদেশে আংশিক সময়ের রাজনীতি করে কোনও লাভ হয় না।

অন্য বিষয়গুলি:

UP Assembly Election 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy