Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বায়ুদূষণে প্রতি বছর দেশে মৃত্যু ১২ লক্ষের

পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, দেশের পরিবেশের কী অবস্থা, এই সব তথ্যেই তা স্পষ্ট।

দেবাশিস ঘড়াই ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০৪:০৮
Share: Save:

বায়ু, জল, যানবাহন ইত্যাদি মিলিয়ে সামগ্রিক দূষণ-মানচিত্রে ভারতের স্থান ঠিক কোথায়? গত বছর ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম’ চলাকালীন আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে দূষণ-তালিকায় ১৭৭ নম্বরে ঠাঁই পেয়েছিল ভারত। আর ‘স্টেট অব গ্লোবাল এয়ার ২০১৯’-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর ভারতে প্রাণহানি ঘটছে ১২ লক্ষ মানুষের।

পরিবেশবিদদের একাংশ বলছেন, দেশের পরিবেশের কী অবস্থা, এই সব তথ্যেই তা স্পষ্ট।

এ দেশে উত্তরোত্তর প্রকোপ বাড়ছে বায়ুদূষণের। কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, সোমবার দিল্লির বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় আড়াই গুণ বেশি। তবে কলকাতা, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চেন্নাইয়ের বাতাসে ধূলিকণা কম ধরা পড়েছে। পরিবেশবিদদের মতে, কলকাতা-সহ বাকি তিনটি শহরে বৃষ্টি হওয়ায় ধূলিকণা কমেছে।

কাল, বুধবার ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’। এ বছরের জন্য রাষ্ট্রপুঞ্জ থিম হিসেবে বেছে নিয়েছে বায়ুদূষণকে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুদূষণের অবস্থা নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠছে। অনেকেরই প্রশ্ন, দ্বিতীয় মোদী সরকার কি এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে? প্রতি বছর দিল্লিই সব থেকে বেশি দূষণের কবলে পড়ে। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন কলকাতা।

গত মাসের শেষে পাঁচ বছরে (২০১৪-১৯) দূষণ নিয়ন্ত্রণের ‘সাফল্য’ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রক। সেই রিপোর্টে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে ‘সাফল্য’ নিয়ে মন্ত্রকের দাবি খুব একটা উল্লেখযোগ্য নয় বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ।

কেন্দ্রীয় রিপোর্টে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, দেশের ৭৩টি শহরে ২৪ ঘণ্টা বাতাসের গুণমান পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে ১৩৭টি ‘মনিটরিং স্টেশন’। উপযুক্ত পদক্ষেপ করায় দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে অনেকটাই কমেছে। যদিও পরিবেশবিদদের একাংশের বক্তব্য, শুধু সংখ্যাতত্ত্ব দিয়ে বায়ুদূষণের মাপকাঠি বিচার করলে হবে না।

বায়ুদূষণের নিরিখে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আগে স্বীকার করে নিতে হবে। নইলে ‘ন্যাশনাল ক্লিন এয়ার প্রোগ্রাম’-কে ‘মিশন’ হিসেবে গ্রহণ করলেও তা সার্থক হবে না। দিল্লির পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই)-এর এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘এখন আর শুধু নীতি গ্রহণ করলেই হবে না। কারণ, সেই পর্যায় আমরা পেরিয়ে এসেছি। আমাদের এখন বায়ুদূষণ রোধে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে।’’

বায়ুদূষণ নিয়ে একাধিক রিপোর্ট দেখিয়েছে, দেশের ৭৬.৮% মানুষই দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন বা শ্বাস নিতে বাধ্য হন! কারণ, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার নিরিখে দেশের ১০২টি শহরেই বায়ুদূষণের মাত্রা ধারাবাহিক ভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত এক রিপোর্ট জানাচ্ছে, ‘হাউসহোল্ড এয়ার পলিউশন’-এ বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও উত্তরপ্রদেশ এগিয়ে। ঘরের বাইরের বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে রয়েছে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, রাজস্থান, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ। নগরায়ণ বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বায়ুদূষণের পরিধি।

শুধু ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতিসূক্ষ্ম ধূলিকণাই (পিএম২.৫) নয়, যানবাহনের সংখ্যা বাড়ায় বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রাও বিপজ্জনক হারে বাড়ছে। সিএসই-র রিপোর্ট বলছে, দেশে ১৯৫১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোটরযান নথিভুক্তি ৭০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মধ্যে প্রথম ছয় দশকে, অর্থাৎ ২০০৮ সাল পর্যন্ত যানের সংখ্যা ছিল ১০ কোটি ৫৩ লক্ষ। তার পরের আট বছরে, অত অল্প সময়ে আরও সাড়ে ১১ কোটি যান নথিভুক্ত হয়েছে। আক্ষরিক অর্থেই যাকে বলে যান-বিস্ফোরণ! যে যান-বিস্ফোরণের থেকে বাদ পড়েনি কোনও শহরই।

বাতাসে নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইডে উপস্থিতির মাত্রা অনুযায়ী ‘ক্রিটিক্যাল’ বা সঙ্কটজনক স্তরে রয়েছে দিল্লি, হাওড়া, পুণে-সহ বিভিন্ন শহর। আবার কানপুর, কলকাতা, মেরঠ, ঠাণের বাতাসেও বাড়ছে গাড়ির ধোঁয়ার বিপদ! পরিবেশ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যগুলিকে সতর্ক হতে হবে। কেন্দ্রের তরফে দূষণ নিয়ন্ত্রণের একটা নেটওয়ার্ক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Air pollution India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy