মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দারা এখনই গড়ে আড়াই থেকে প্রায় তিন বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন। ফাইল চিত্র।
বায়ুদূষণের কারণে উত্তর ভারতের বাসিন্দাদের গড় আয়ু নয় বছর করে কমে যেতে পারে। মহারাষ্ট্র বা মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দারা এখনই গড়ে আড়াই থেকে প্রায় তিন বছর করে আয়ু হারাচ্ছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া মাত্রায় যদি বায়ুদূষণ কমিয়ে আনা যেত, গড় ভারতবাসীর আয়ু আরও সাড়ে পাঁচ বছর করে বাড়ত। আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এয়ার কোয়ালিটি লাইফ ইনডেক্স-(একিউএলআই) এর রিপোর্ট তেমনই দাবি করছে।
একিউএলআই-এর মতে, ভারত পৃথিবীর সবচেয়ে দূষিত দেশ। কারণ এখানকার ৪০ শতাংশ মানুষ গাঙ্গেয় সমভূমির বাসিন্দা। এই অঞ্চলে বায়ুদূষণের মাত্রা তার ব্যাপ্তিতে বিশ্বের অন্য যে কোনও অঞ্চলের বছরভর বায়ুদূষণ-মাত্রাকে প্রায়শই ছাড়িয়ে যায়। ভৌগোলিক ব্যাপ্তিতে তাই এটাই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত এলাকা।
শুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নিলে মানুষের আয়ু কতখানি বাড়ে, সমীক্ষা করেছে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এনার্জি পলিসি ইনস্টিটিউট। তাদের মতে, ২০১৯-এ গাঙ্গেয় সমভূমিতে বায়ুদূষণের যে মাত্রা ছিল, তা বজায় থাকলে ওই অঞ্চলের ৪৮ কোটি বাসিন্দার গড় আয়ু কমপক্ষে ৯ বছর করে কমে যেতে পারে। সেই সঙ্গে একিউএলআই রিপোর্ট এ-ও জানাচ্ছে, ভারতে বায়ুদূষণের ভৌগোলিক ব্যাপ্তি ক্রমশই বাড়ছে। মহারাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রদেশের মানুষ একুশ শতকের গোড়ার বছরের তুলনায় এখনই গড়ে ২.৫ থেকে ২.৯ বছর আয়ুষ্কাল খোয়াচ্ছেন।
ভারত-সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়া জুড়েই বায়ুদূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে, ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-নেপালে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশের বাস এবং এই চারটি দেশই লাগাতার বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দূষিত দেশের তালিকায় থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাপকাঠিতে দূষণ-মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া বায়ুতে শ্বাস নিতে নিতে পৃথিবী জুড়ে ব্যক্তি-আয়ুষ্কালের মোট যত বছর নষ্ট হতে পারে, তার ৬০ শতাংশই আসবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা মেনে দূষণ কমাতে পারলে, দক্ষিণ এশিয়াবাসীর গড় আয়ু ৫.৬ বছর করে বাড়তে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকায়, বাতাসে সূক্ষ্ম কণার স্বাভাবিক পরিমাণ হওয়া উচিত প্রতি ঘন মিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। ভারতে তা রয়েছে গড়ে প্রতি ঘন মিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম। বিশ্বে সর্বোচ্চ। এই ভয়াবহ দূষণের কারণ কী? রিপোর্ট বলছে, শুধু ভারত ও পাকিস্তানেই ২০০০ সালের তুলনায় এখন রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা চতুর্গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৯৮ থেকে ২০১৭-র মধ্যে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ-নেপাল মিলিয়ে জীবাশ্ম-জ্বালানিনির্ভর তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণ। সেই সঙ্গে ফসলের গোড়া পোড়ানো, ইটভাটা এবং অন্যান্য শিল্প-কর্মকাণ্ড তো রয়েছেই। বায়ুদূষণই এখন বিশ্ব স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বিপদ, বলেছে রিপোর্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy